শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ০১:০০ পূর্বাহ্ন

৬ সপ্তাহের আগাম জামিন পেল মতিউর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩
  • ২৩৪ Time View

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রোববার (২ এপ্রিল) বিকেলে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো.আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এদিন সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ জামিন আবেদন করা হয়।

প্রথম আলোর সম্পাদকের পক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সকালে স্বাধীনতা দিবসে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে রমনা থানায় দায়ের করা এই মামলায় আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানান দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।

গত ২৯ মার্চ দিবাগত রাতে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক ছাড়াও সিআইডি পুলিশের হাতে আটক হওয়া প্রথম আলোর সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস, সহযোগী একজন ক্যামেরাম্যান এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী আব্দুল মালেক মশিউর (৬১) বাদী হয়ে এই মামলা করেন। পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আবু আনসারকে এ মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ এর (২), ৩১, ৩৫ আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ব্যবহার করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করে এবং বিভ্রান্তি ছড়াতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে প্রতিবেদনটি দৈনিক প্রথম আলো তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে শেয়ার করে। সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি, ওই শিশুটির নাম জাকির হোসেন। পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে- ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো।’

এতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়। সংবাদটি দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সোনালি গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণসহ বহির্বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে এ সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বাধীনতার অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তীকালে একাত্তর টিভিতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো পত্রিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। নাম-পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পত্রিকায় বলা হয় শিশুটির নাম জাকির হোসেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায় ওই শিশুর নাম সবুজ আহমেদ। তার বাড়ি সাভার থানার কুরগাঁও পাড়ায়। তার বাবা একজন রাজমিস্ত্রি। মা মুন্নী বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো সন্তান সবুজ। প্রথম আলোর তথ্যে বলা হয়েছে, সে দিনমজুর। কিন্তু সাতবছরের শিশু সবুজ আহমেদ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে এবং স্কুল শেষে মাঝেমধ্যে ফুল বিক্রি করে।

এজাহারে আরও বলা হয়, শামসুজ্জামানের প্রস্তুত করা প্রথম আলোর ওই সংবাদে বলা হয়েছে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’। প্রকৃতপক্ষে ওই শিশুটি এ ধরনের কোনো কথা বলেনি। শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে এ ছবি তুলেছে। এতে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীনউদ্দেশ্যে একটি অশুভ চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এ মিথ্যা সংবাদ তৈরি ও পরিবেশন করে অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

মামলার বাদী ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের’ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আইনজীবী আব্দুল মালেক মশিউর জানান, স্বাধীনতা নিয়ে জনমনে ‘অস্থিতিশীল ও বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি’ তৈরি করার কারণে তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন। এই মামলায় প্রথম আলোর প্রতিবেদককে আদালতে হাজির করা হলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত।

এর আগে গত ২৯ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ এনে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS