উখিয়া প্রতিনিধি:পরিবার-পরিজন ও স্বজন কিংবা ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে সৈকতে বেড়াতে গিয়ে সাগর পাড়ের আনন্দের মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখতে কে-না চায়। আর তাই আনন্দঘন স্মৃতি ফ্রেমে বন্দী করতে অনেকেই সৈকতে মেতে ওঠেন ফটোসেশনে। পর্যটকদের এ চাহিদাকে পুঁজি করে ইনানী সৈকতে দিনদিন বাড়ছে অবৈধ ছবিয়ালদের সংখ্যা। বর্তমানে এ সৈকতে অবৈধ ফটোগ্রাফির হ-য-ব-র-ল অবস্থা।
ফটোগ্রাফির জন্য লাইসেন্স সংগ্রহ না করে অবৈধভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে পর্যটকদের ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে হর-হামেষায় ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। কিছু অদক্ষ ও অপেশাদার অবৈধ ছবিওয়ালাই এসব ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। সৈকতে তাদের এমন কর্মকান্ড প্রায়শ ভ্রমণার্থীদের আনন্দ নষ্ট করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাড়াটিয়া ও অনভিজ্ঞ কিছু কিশোর স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় সৈকতে লাইসেন্স বিহীন ফটোগ্রাফি করছে। এরমধ্যে অনেকেরই ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতাতো নেই বরং আদব-কায়দারও কোন বালাই নেই। তাদের মধ্যে কিছু রোহিঙ্গা কিশোরও রয়েছে।
একজন পর্যটকের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, কীভাবে আচরণ করতে হয় সেটাও তারা জানে না। আবার এদের মধ্যেই অনেকেই ফটোগ্রাফির আড়ালে সৈকতে পর্যটকদের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে না বলা সত্ত্বেও একাধিক ছবি তুলে পর্যটকদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা তাদের নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। কোন পর্যটক টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বা এর প্রতিবাদ জানালে সিন্ডিকেটে জড়িত ৫/৭ জনের একদল জড়ো হয়ে পর্যটকদেও হুমকি-ধমকি দিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ।
অভিযোগ উঠেছে, ইনানী সৈকত, রয়েল টিউলিপ সংলগ্ন বীচ এবং পাটুয়ারটেক বীচে লাইসেন্সধারী ফটোগ্রাফারদের তুলনায় অবৈধ ফটোগ্রাফারদের দৌরাত্ম বেশী। তারা একটি ডিএসএলআর পুঁজি করে বিভিন্ন অপরাধ করে ফেলে কেননা তারা লাইসেন্স বিহীন এবং তাদের ডাটাবেজও নেই। যার কারণে তারা যেকোনো অন্যায় করে সটকে পড়ে । কিন্তু লাইসেন্সধারী ফটোগ্রাফাররা চাইলেও অন্যায় করতে পারেনা। কেননা তাদের ডাটাবেজ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সংরক্ষিত আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইনানী সৈকতের এক খুচরা ব্যবসায়ী জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে এ সৈকতে ছোটখাটো ব্যবসা করে আসছি। সেই সুবাধে বিচের অনেক কিছুই চোখে পড়ে যায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো ফটোগ্রাফারদের পর্যটক হয়রানি। এ সৈকতে লাইসেন্সধারী ফটোগ্রাফারদের চেয়ে অবৈধ ফটোগ্রাফারদের সংখ্যা বেশী। যার কারণে তারা অনায়াসে সৈকতে ঘুরে বেড়ায় এবং বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড করছে। এমনকি রাত বাড়লেই তারা মাদকের আড্ডা জমায়। বরং তাদের কারণে আসল ফটোগ্রাফাররাও সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বীচে কর্মরত পুলিশ সদস্য এবং বীচ কর্মীরা অদৃশ্য কারণে এই বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। যদি এ সমস্যার প্রতি নজর না দেয় তবে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিবে এবং তাদের অন্যায়ের কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়ে যাবে। তাই অবৈধ ফটোগ্রাফারদের লাইসেন্স এর আওতায় নিয়ে আসা হোক আর তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আকুল আবেদন।
এদেরকে ধরিয়ে দেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বহুত শক্তিশালী, তখন আমাকে মারবে। এ ভয়ে সাহস হয়না।
ঢাকা থেকে আসা সুমন নামের এক পর্যটক জানান, আমি পরিবার পরিজন নিয়ে ইনানী সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে যায়। বিকালে সৈকতে নেমে আমরা আমাদের মতোই আনন্দ উপভোগ করছি।
এসময় এক ফটোগ্রাফার ভাই ছবি তুলবো কিনা জানতে চেয়ে আকুতি মিনতি করলে সম্মতি প্রকাশ করি। এসময় সে ইচ্ছেমতো শাট শাট করে ছবি তুলে অতিরিক্ত টাকা ডিমান্ড করে বসে। আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর জানতে চাইলাম এতো কিসের টাকা?সে উত্তরে জানায় আপনাদের প্রায় তিন শতাধিক ছবি তুলেছি ১৫০০ টাকা দেন। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি আমি তো এতো ছবি তুলিনি, সে তখন জোর খাটায় এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে। পরে আমি পুলিশের সহায়তা নিয়ে কোন রকমে ঝামেলামুক্ত হই।
তিনি আরও বলেন, হয়তো পুলিশের সহায়তা নিয়েছি, বাড়তি ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ পর্যটকই পুলিশকে না জানিয়ে ভ্রমণের আনন্দটাই মাটি করে দিচ্ছে। তবে ছবি তোলা নিয়ে পর্যটক হয়রানি হচ্ছে তথ্যটি মানতে নারাজ ইনানী সমুদ্র সৈকতের প্রায় সকল ফটোগ্রাফার। তারা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছে পোষণ করেনি।
এদিকে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে এসে ঠিক এ ধরনের ফটোগ্রাফারের হাতে হয়রানির শিকারের অভিযোগ প্রায়শ আসলেও কিছু ঘটনার তাৎক্ষণিক সমাধান হয়, অধিকাংশই কুল-কিনারাই পাওয়া যায় না। এসবের মূল কারণ মৌসুমি ও অপেশাদার ফটোগ্রাফার। তাই পেশাদার ফটোগ্রাফার চিহ্নিতকরণ ও পর্যটক হয়রানি রোধে ডাটাবেজের তৈরির উদ্যোগ নেয় নিতে প্রশাসনের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয়দের সচেতন মহল।
ইনানী ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজান বলেন, সৈকতে ছবিওয়ালাদের হাতে হয়রানির অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষনিক তা সমাধান করার চেষ্টা ও পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ছিনতাই, ইভটিজিং, অতিরিক্ত ভাড়াসহ নানা হয়রানী থেকে পর্যটকদের নিরাপদ রাখতে তারা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সৈকতে অবৈধভাবে ছবি তোলার কোনো সুযোগ নেই,তবে এক্ষেত্রে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অনুমোদন নিয়ে সৈকতে ফটোগ্রাফী করার সুযোগ আছে। তারপরও মাঝে-মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়ে তা সমাধানের কাজ করি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সৈকতে পর্যটক হয়রানি কোনোভাবে কাম্য নয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, ট্যুরিস্ট পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এ সৈকতে জানা মতে শখানেক ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফার রয়েছেন। তবে সৈকতে গেলে দেখা যায় এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply