৪৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি পুরস্কার জিতেছে ‘আদিম’। পরিচালক যুবরাজ শামীমের প্রথম সিনেমা এটি । সকালে চলচিত্র ও আর্কইভ মিলনায়তনে পুরস্কার পাওয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যুবজার শামীম নিজের ও অভিনেতাদের সংগ্রাম এবং অনন্দের কথা তুলে ধরেন।
এ সময় তিনি বলেন, প্রথম ছবির জন্য পুরস্কার জিতে ভীষণ উচ্ছ্বসিত আমি। আমার চিন্তাই ছিলো না এমন কিছু হবে । মস্কো যাওয়ার পর দেশি-বিদেশী সবার ভালোবাসাই আমি সিক্ত হয়েছি।
রাশীয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ভিতর জুরি অনুষ্ঠান কতটা অংশোগ্রহণ মূলক হয়েছিল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শামীম বলেন, আমি প্রথম বার মস্কো গেলাম আমার চোখে যুদ্ধের কোন ছাপ ধরা পড়েনি। সারা বিশ্বের নামি-দামি প্রোযেজক প্রতিষ্ঠান এবং আটিস্ট ছিলেন।
সিনেমাটি কেনো পুরস্কার পেলো এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আয়োজকেরা বলেছেন এটি জীবন্ত সিনেমা , এর নির্মাণে চিত্রকারকে অনেক রাত জাগতে হয়েছে। তাছাড়া আভিনেতারা কেউ পেশাদার নয় সব বাস্তব কাহিনী।
আদিম’র মূল গল্পটা জানতে চাইলে শামিম বলেন, “আদিম” নির্মাণের পেছনের গল্প আনেক বিস্তৃত। ২০১৬ সালের শেষের দিকে প্রথম আদিম নির্মাণের ভাবনা মাথায় আসে এবং হাতের কাছে যা আছে তা দিয়েই আদিম নির্মাণের পরিকল্পনা করি। ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডসের নির্মাতা ক্লিমেনটিনে এডারভিনের ভাবনা শুনে বাংলাদেশ ছাড়ার আগে ২০০ ইউরো আমার হাতে ধরিয়ে দেন। যা আমাকে আদিম নির্মাণে সাহস জোগায়। সিনেমার বাকি টাকা আমি আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে ধার নেওয়ার চিন্তা করি, মোহাম্মদ নূরুজ্জামান আমাকে সিনেমার শেয়ার বিক্রির পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শ আমার মনে ধরে।
ক্লিমেনটিনের টাকা হাতে পেয়ে আমি টঙ্গীর ব্যাংক মাঠ বস্তিতে থাকার সিদ্ধান্ত নিই, কারণ আমার মনে মানুষগুলোর গল্প আমি বলবো তাঁদের সঙ্গে থাকাটা আমার জন্য জরুরী। আমার বস্তির দিন এবং সিনেমার বিক্রির কথা আমি নিয়মিত ফেসবুকে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে থাকি। যদিও কিছু সংখ্যক মানুষ বিষয়টা হাসাহাসি করেছেন তবে বেশিরভাগ মানুষই সিনেমার শেয়ার বিক্রির ঘটনা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে, সাংবাদিক ভাই এবং বোনেরা আদিম’র শেয়ার বিক্রির খবর প্রকাশ করেছেন, এতে আমার প্রতি বিশ্বাস যোগ্যতা বেড়েছে। বহু পরিচিত অপরিচিত মানুষ সিনেমার শেয়ার কিনেছেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমার বস্তির দিন কাটে, মাঝেমধ্যে ভীষণভাবে ভেঙে পড়ি। কিন্তু ধীরে ধীরে কয়েকজন মানুষের সঙ্গে আমার সখ্যতা তৈরী হয় এবং আমি সিদ্ধান্ত নেই বস্তির মানুষজন নিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করবো।
শুরু হয় চরিত্র যাচাই বাছাই এবং রিহার্সেল। প্রথমদিকে সবকিছু আমার একাই করতে হয়েছে, কেননা আমার সহকারী হিসেবে কাজ করার আগ্রহ দেখালেও বস্তির জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে এমন কঠিন সময়ে আমি ক্যামেরা হাতে আমির হামযাকে কাছে পাই। আমির হামযা, আমি এবং সহকারী আনন্দ তিনজনে মিলে আদিম’র শুটিং পর্ব শেষ করি।
বস্তিবাসীদের জীবন নিয়ে সিনেমা ‘আদিম’। পুরো সিনেমার শুটিংও হয়েছে একটি বস্তিতেই। এতে কোনো পরিচিত অভিনেতা-অভিনেত্রী নেই। যারা অভিনয় করেছেন তারা সবাই বস্তিতে বাস করেন। তাদের গল্প নিয়ে সিনেমা হওয়াতে কেউ বুঝতেই পারবে না যে তারা কখনো অভিনয় করেনি, বরং মনে হবে এর চেয়ে ভালো অভিনয়, এতো সুন্দরভাবে নিজের চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা কোনো সিনিয়র শিল্পীও হয়তো পারবেন না।
টঙ্গী থেকে মস্কোতে ‘আদিম’ নিয়ে যাত্রার প্রাক্কালে এই নির্মাতা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়মিত পৃথিবীর বড় বড় ফেস্টিভ্যালে যাচ্ছে, এটা এখন আমার কাছে খুব স্বাভাবিক ঘটনাই মনে হয়। তবে টঙ্গীর বস্তিতে সাদামাটাভাবে শুট করা একটা গল্প মস্কোর সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ সিনেমা থিয়েটারে প্রদর্শিত হবে, এটা আমারা কাছে সত্যিই অনেক বড় পাওয়া।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply