দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেছেন, এবারের বাজেটে আমরা যে পরিমাণ প্রত্যাশা করেছিলাম আমাদের সে প্রত্যাশার প্রতিফলন দেখতে পাইনি। বাজেটে আমাদের ছয় দফা বাস্তবায়নের অনুরোধ করছি। এবারের বাজেটে দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি সরকার নজর কম দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ জুন) বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) উদ্যোগে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর ‘বাজেট ২০২২-২৩ ইমপ্লিমেনটেশনস ফর দ্য ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন দেশের পুঁজিবাজার অনেক অগ্রসর হয়েছে জ যতটুকু হয়েছে। যতটুকু হয়েছে তা সরকারের সহযোগিতার কারণে হয়েছে।প্রতিবছর জ্বালানি, কৃষি সহ বিভিন্ন খাতে সরকারকে বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দিতে হয়। আমার মনে হয় সরকার এই ভর্তুকি দিতে গিয়ে পুঁজিবাজারের প্রতি গুরুত্ব কম দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এখনো করোনার ধকল থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি। একই সাথে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিআইসিএম নির্বাহী প্রসিডেন্ট ড. মাহমুদা আক্তার বলেন বাজেট একটি দেশের সম্ভাব্য জমা-খরচের খতিয়ান। রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারকে বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমান টাকা ব্যয় করতে হয়। যাঁরা সরকারি দ্বায়িত্ব পালন করেন তাঁদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, নাগরিকদের সুবিধার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ, বিবিধ উন্নয়ন পরিকল্পনার খরচ নির্বাহ, শিক্ষা-চিকিৎসাজনিত সামাজিক খাতসমূহ, এরকম বহু ক্ষেত্রে সরকারকে অর্থ ব্যয় করার উদ্যোগ নিতে হয়। একটি সুনির্দিষ্ট অর্থবছরে কোথায় কত অর্থ ব্যয় হবে, সেই পরিকল্পনার ছকটিই হচ্ছে সে অর্থবছরের বাজেট। মাস বা বছর শেষে একজন মানুষকে তার আয় ও ব্যয়ের হিসাব মিলাতে হয়। ঠিক তেমনি ভাবে রাষ্ট্রের পরিকল্পনা ও নির্ধারিত লক্ষ্য মোতাবেক ব্যয় ঠিকভাবে সম্পন্ন হলো না তা নির্ধারিত হয়। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না হলে রাষ্ট্র বিকল্প উৎস থেকে অর্থের যোগান দিয়ে থাকে। তাই ব্যক্তির উন্নতির যেন যেমন তার লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যয় এবং বিনিয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি
অনুরূপভাবে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের জন্যে প্রক্ষেপিত খাত অনুসারে বাজেটনীতি প্রণয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি বলেন পশ্চিমা দেশগুলোতে চলমান সামরিক সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকোচন এবং কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যমেয়াদী চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আমাদের দেশ এখন স্বীকৃত মধ্যম আয়ের দেশ। একটি উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মানদণ্ডের স্কোরে আঞ্চলিক শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থান করছে। সরকার নির্দেশিত উদ্যোগের ফলে কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে শীর্ষ রেমিট্যান্স-প্রাপক দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশ উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন-ইনকিউবেশন সংস্কৃতির উত্থানের সাথে সাথে একটি প্রাণবন্ত বেসরকারি খাতের ক্রমবর্ধমান উত্থানের সম্মুখীন হচ্ছে। আধুনিক বাজার অর্থনীতিতে দক্ষ ব্যক্তি-খাতের এই
ধারাগুলির বিকাশ পুঁজিবাজারের অগ্রগতি এবং অর্জনের একটি প্রধান নির্ধারক। দীর্ঘমেয়াদে উদোক্তাবান্ধব এবং ব্যবসা-বান্ধব অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার সবিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আমাদের মত উদীয়মান অর্থনীতির দেশে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন-অর্থায়নের সহায়ক হিসেবেও পুঁজিবাজার একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে। একটি শক্তিশালী ব্যাংকব্যবস্থা যেরকম আর্থিকবাজারের মূল তেমনি একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার আর্থিক ব্যবস্থার কাণ্ডের ভূমিকা পালন করে।
তিনি বলেন পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সরকারের ঘোষিত বাজেট নীতিগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত৷ মূল্যাস্ফীতি, বিনিয়োগ, করের হার, করমুক্ত বিনিয়োগের সীমা ইত্যাদি চলকসমূহ পুঁজিবাজারের গতিশীলতা এবং স্থিতি-অবস্থা আনয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। একই সাথে বাজেটনীতিতে উল্লেখিত প্রণোদনা বা নিরূৎসাহক নীতিসমূহ মুদ্রাবাজারর সাথে পুঁজিবাজারের আন্তঃসম্পর্কের গতি-প্রকৃতিকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। বাজেটে উল্লেখিত নীতিমালা, প্রনোদনা, এবং সামষ্টিক অর্থনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট উদ্দীপকগুলোর বিশ্লেষন তাই পুঁজিবাজারে সাথে সম্পর্কিত সকল পর্যায়ের বিনিয়োগকারী, নীতি-নির্ধারক, এবং অংশীজনদের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য
অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) সভাপতি জিয়াউর রহমান, সাধারন সম্পাদক আবু আলী এবং যুগ্নসম্পাদক গিয়াস উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply