সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন

হারিয়ে যেতে বসেছে বরিশালের মাসিমার ঐতিহ্য 

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শনিবার, ২১ মে, ২০২২
  • ৮১ Time View

বরিশাল অফিস : বলার ভাষা হারিয়ে ফেললেও না বলে না লিখে পারা যায়না। তাইতো একটু লিখতে হচ্ছে, বরিশালের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রদূত বীর কন্যা,বরিশালের নারী নেত্রী কমলা রানী ঘোষের কথা। যিনি ছিলেন বরিশালের মনোরমা (মাসিমার) উত্তর সুরী, দেশ আজ স্বাধীন,স্বাধীন দেশের মানুষ আমরা,

কে দেশ স্বাধীন করলো কারা স্বাধীন কারলো,কিভাবে দেশ স্বাধীন হলো,কারা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ছিল, কারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করলো,তাদেরকে আমরা কতটুকু স্মরনে এবং মনে রাখতে পেরেছি। আজ আমরা নিজেরা নিজেদেরকে নিয়ে ব্যাস্ত,এই ব্যাস্ততার কারনে আমরা ভুলে গেছি যাদের অবদানে এই দেশ,সে দেশের নেতা ও নেত্রীদের। স্বনামধন্য বিভাগ বরিশাল বিভাগে রয়েছে স্বনামধন্য ব্যাক্তিও।

তাদেরই একজন বরিশালের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী কমলা রানী ঘোষ (মাসিমা) জন্মগ্রহণ ১৯২৬ সালে বাকেরগন্জে। ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন বরিশাল সদর গার্লস থেকে।৭ম শ্রেনীতে পড়া অবস্হায় নারী নেত্রী মনোরমা মাসিমার সঙ্গে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।১৯৪৩ সালে মাতৃমন্দির নামক একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।কিন্তু এই কর্মজীবন মাসিমাকে একটুও সমাজসেবা,বিভিন্ন আন্দোলন থেকে অবসর নিতে দেয়নি,ছুটে চলেছেন নিজের গন্তব্যর দিগে।

ওই বছরই ফকির বাড়ি রোডে বৃটিশদের গরুর গাড়ি থেকে চাল নামিয়ে দুস্হ ও অসহায় মানুষদের মাঝে বিতরন করেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন,৫২র ভাষা আন্দোলন,৬৯ র আন্দোলন,স্বাধীনতা আন্দোলন সহ সব আন্দোলনেই নিজের জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেছেন। ১৯৭১ সালে তিনি ভারত চলে যান মুক্তিযোদ্ধায় অংশগ্রহণ করার জন্য এবং সল্ট লেগ শরণার্থী ক্যাম্পে সংগঠক হিসেবে যোগদান করে।

সহপাঠীদের নিয়ে সংগঠনের প্রেরিত কাপর দিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রের হাজার,হাজার পতাকা তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হস্তান্তর করেন,স্বাধীনতার পর যখন দেশে ফিরে আসে এরপর বরিশাল জেলা মহিলা কমিউনিস্টের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন,সুধু কমিউনিস্ট না ছিলেন বরিশাল মহিলা পরিষদের সহ সভাপতিও। নিজের অর্থায়নে দিয়েছেন অস্যংখ মেয়েদের বিবাহ খরচ দিয়েছেন লেখাপড়ারও।

২০০৮ সালে আন্তজাতিক নারী দিবসে অশ্বিনী কুমার টাউন হলে তৎকালীন ডি,সি সন্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন। পরের বছর সদর গার্লসের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে নারী ও শিক্ষা আন্দোলনের জন্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী  দীপু মনি সন্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন।

ফকির বাড়ি রোডে মাসিমার বাড়ি,( স্বামীর বাড়ি) নাম মাতৃকুটির, ১৯৭৫ র পর থেকে প্রায় ২৫ বছর এই বাড়িটি ছিল আওয়ামীলিগের দুর্দিনের নির্বাচনী ও অফিস কার্যালয়। যার কারনে শত,শত বোমা ও ইট পাটকেলের আগাত সহ্য করতে হয়েছে মাসিমার পরিবারকে। হুমকী খেতে হয়েছে জীবন নাসের,স্বাধীনতার সময়কার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের বর্ননা না হয় নাইবা দিলাম।

মানুষের হুমকী,ধামকী উপেক্ষা করেও নিজ অর্থায়নে চা বিস্কিট খাইয়ে সতেজ রাখতেন অফিসে যাওয়া নেতাকর্মীদের। এদের ভিতরে অন্যতম নেতা ছিলেন সাবেক বরিশালের জেলা আওয়ামীলিগের সহ সভাপতি,সাবেক প্যানেল মেয়র নিজামুল ইসলাম নিজাম,সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আদনান হোসেন অনি,সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিষ্ণুপদ মুখার্জী।কিন্তু দুঃখের কথা হল ১৯৯৬ র পর আওয়ামীলিগ ক্ষমতায় আসার পর অফিসটি স্হানারিত হয়,তারপর থেকে আর নজর নেই দুর্দিনের দিনে উপকার করা আওয়ামী অফিসটির।

অফিসটির দিগে তাকালে মনে হয়,জরাজীর্ন ভাবে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে,কিন্তু দাড়ানোটাও শক্ত না,যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে যেতে পারে। অফিস ঘরটির দিগে তাকালে মনে হয় এত জরাজীর্ণ এবং এত পুরোনো ঘর বরিশালের কোথাও আছো কিনা তা হয়তোবা খুজে দেখা লাগবে।

মাসিমার ৬ সন্তান, ৪ ছেলে ২ মেয়ে, পিছিয়ে নেই দেশের জন্য উৎসগে তারাও যাদের ভিতরে তিন ছেলেই মুক্তিযোদ্ধা, আর এক ছেলে সক্রিয় আওয়ামীলিগ কর্মী,মেয়ে মায়া রানী ঘোষ, বাংলাদেশ বেতার ও মুক্তিযোদ্ধা কালীন আকাশ বানীর সংবাদ পাঠিকা ছিলেন।

তার ছবিটি সংরক্ষন করে সন্মানের সহিত রাখা হয়েছে বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরে। মাসিমার রেখে যাওয়া উত্তরসুরীদের দাবী মৃত্যুর আগে যদি তাদের মায়ের অথাৎ আওয়ামীলিগের দুর্দিনের অফিসটি যদি সংস্কার করে নতুন কোন রুপ দেয় তাহলে  হয়তো আমার মা অথৎা মাসিমার আন্তায় শান্তি পেত। তাই আমাদের দাবি বাংলার মানষ কন্যা,রন্তাগর্ভা শেখ হাসিনা, বরিশালের সিটি মেয়র,জেলা প্রশাষক সহ আওয়ামীলিগের শীর্ষ স্হানীয় নেতৃবৃন্দর কাছে যাতে অচিরেই পুরানো জরাজীর্ণ অফিস ঘরটিকে নতুন রুপ দেয়া যায়।

বরিশাল জেলা আওয়ামীলিগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডঃ তালুকদার মোঃইউনুস জানান,আসলে ঔ খানে যে আওয়ামীলিগের অফিস ছিল কিনা সে বিষয়ে আমি অবগত নেই। বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান হাওলাদার জানান, যেহেতু মাসিমা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ছিল আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি তার ঘরটা যেভাবে জরাজীর্ণ , এবং ভাঙ্গা তাই সমাজের বিত্তবানদের উচিত এ বিষয়ে এগিয়ে আসা।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধার সভাপতি ও জেলা প্রশাষক জসিম উদ্দিন হায়দায়ের সাথে সাক্ষৎা করতে গেলে তাকে অফিসে না পাওয়ায়,কথা হয় ভারপ্রাপ্ত এন,ডিসি সুব্রত বিশ্বাষ দাসের সাথে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান আসলে ডিসি স্যার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এই বিষয়ে আমি কোন বক্তব্য দিতে পারবোনা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS