বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, “জুলাই সনদ” বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্যের এক নতুন অধ্যায়, যা দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় “পি আর” নামক একটি “জনবিচ্ছিন্ন দাবি”, গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চলমান ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে।
ফারুক বলেন, “বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রায় ছয় মাসের পরিশ্রমের ফল হিসেবে যে ‘ঐক্যমত কমিশনের দলিল’ বা ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুসের উপস্থিতিতে বিএনপি, জামায়াতসহ মোট ৩৬টি রাজনৈতিক দল এ সনদে স্বাক্ষর করেছে। এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ।”
সাবেক এই চিফ হুইপ স্মৃতিচারণ করে বলেন, “আমি ৫৫ বছর আগে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছি এই দেশ স্বাধীন করার জন্য। আজও সেই একই স্পৃহা নিয়ে বলি— আমরা যারা জিয়াউর রহমানের আদর্শে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং তারেক রহমানের দূরদর্শিতায় বিশ্বাস করি, তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আমাদের প্রিয় সহযোদ্ধাদের ত্যাগ কখনো ভুলিনি— ইলিয়াস আলী, আলম, হারুনসহ অনেকেই হারিয়ে গেছেন। যারা গতকাল বৃষ্টিতে ভিজে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, তারা আমাদের জাতির গর্ব।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও কিছু বিশৃঙ্খলা ঘটেছিল, সেটি দুঃখজনক। আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি আমাদের ঐক্য ভাঙতে পারবে না। যাদের কোনো দাবি ছিল, তারা ইউনুস সাহেবের বাসভবনে গিয়ে আলোচনা করতে পারতেন। আমি বিশ্বাস করি, এই ঐক্য বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে নতুন পথে নিয়ে যাবে।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, “আমরা সবাই জানি, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন। সেই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই আমাদের ঐক্য দরকার — যেন আবার কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার দেশে প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে। গত ১৬ বছর ধরে হাসিনা সরকার দেশের গণতন্ত্রকে দমন করেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত, কারাবন্দি, এমনকি হত্যা ও নিখোঁজের শিকার হয়েছে। এ অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “‘জুলাই সনদ’-এর মূল লক্ষ্য একটাই — বাংলাদেশে যেন আর কোনো অনির্বাচিত সরকার গঠিত না হয়। কেউ যেন মুক্তিযুদ্ধের নামে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে। আমি ঐক্যমত কমিশনের সব দাবি সমর্থন করছি। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তবে বাংলাদেশের জনগণই বিজয়ী হবে।”
তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে আহ্বান জানান, “আসুন, আমরা ভাই ভাই হয়ে প্রতিজ্ঞা করি — জুলাই সনদে যা লেখা আছে, ইনশাআল্লাহ, যেই দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করব। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও জনগণের অধিকার রক্ষাই হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।”
সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি মনজুর রহমান ভ্ূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহেল রানার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, ফরিদা ইয়াসমিন, তাঁতীদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি সাংবাদিক রাশেদুল হক, মৎস্যজীবী দলের নেতা ইসমাইল হোসেন সিরাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার চৌধুরী, নজরুল ইসলাম সবুজ, সহ-সভাপতি মোঃ মোকাদ্দম হোসেন, মোঃ সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন হৃদয়, রাজিব আহমেদ, জেসমিন জুই, মোঃ নোমান, বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজভি আহমেদ, যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মানিক, যুব বিষয়ক সম্পাদক মোঃ বরকত পাটোয়ারী, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি শেখ শহীদ, উত্তরের সভাপতি ফয়েজ পাটোয়ারী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, মোঃ মামুন হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সানাউল্লাহ ভূঁইয়া, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হাইকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, কাফরুল থানার সভাপতি মোঃ খোকন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন হাওলাদার, কাফরুল থানা যুবদলের নেতা তোফাজ্জল হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা রিয়াজ উদ্দিন, চকবাজার থানা স্বেচ্ছাসেবক দালের সাবেক সভাপতি মুসা ফরাজী, ছাত্রনেতা মানিক হোসেন, যুবদলের নেতা মোঃ আবু জাফর দেওয়ান প্রমুখ।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply