বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হুমকিদাতা এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আন্দোলনের সময় বাংলামোটর মোড়ে বেলাল হোসেন নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় হত্যায় প্রতক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্ররোচনার অভিযোগে তাকে ১৩ নম্বর আসামী করা হয়েছে। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
গতকাল সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর শাহবাগ থানায় নিহত বেলালের মা জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোট ২২ জন ও অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামাস খান কামাল, ড. হাসান মাহমুদ, মো. আলী আরাফাত হোসেন, জুনায়েদ আহমেদ পলক, মাহবুবুল আলম হানিফ, সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, এ.এস.এম. ফিরোজ আলম, মোহাম্মদ আব্দুল আউযাল, এস,এম, পারভেজ (তমাল), সাদ্দাম হোসেন, শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, মো. শহীদুল ইসলাম, মো. মোশাররফ হোসেন, মাহবুবা মোশাররফ, মোহাম্মদ ফারহান মোশাররফ, মোহাম্মাদ ফাহিম মোশাররফ, নজিবুল্লাহ হিরো, মো. মকবুল হোসেন।
মামলার এজাহারে বাদী বলেন, আমায় বড় ছেলে মো বেলাল হোসেন রাবি রমনা মডেল থানাধীন কাকড়াইল সংলগ্ন ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করতো। গত ০৪ আগস্ট বিকাল অনুমান সাড়ে ৪ টার সময় শাহাবাগ থানাধীন বাংলামটর মোড়ের সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আমার ছেলে মো. বেলাল যৌক্তিক দাবির পক্ষে একাত্ততা পোষন করে ছাত্র আন্দোলনে যোগদান করে। এসময় শাহবাগ হতে বাংলামোটর মোড়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় উল্লেখিত আসামীরাসহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ আওয়ামী অঙ্গ সংগঠনের দুষ্কৃতিকারী সন্ত্রাসীদের আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে আমার ছেলে মো. বেলাল হোসেন ঘাড়ের পেছনে সাভিক্যাল কর্ডে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়া পড়ে। আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী তার বন্ধু রিয়াজ তাৎক্ষনিকভাবে রক্তাক্ত মুমূরর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে আমার ছেলেকে ভর্তি করায়। তৎপরবর্তীতে দীর্ঘ ৫ দিন আইসিওতে মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে থাকা অবস্থায় গত ০৮ আগস্ট বেলা আনুমানিক ১১ টা ৪০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ছেলেকে মৃত ঘোষনা করেন।
জানা গেছে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যাংকের অর্থ লুটপাটসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকার সুর করে আচরণের ভোল পাল্টেছেন তিনি। এনআরবিসি ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা তৎকালীন কোটা সংস্কার আন্দোলনে শামিল হলে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে সতর্ক করেছিলেন। একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ সংক্রান্ত কোন পোস্ট শেয়ার ও মন্তব্য করলে, তাকে প্রশাসনিক হয়রানির হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। অথচ তৎকালীন সরকার পতনের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অর্থ সহায়তা দিয়ে অতীত অপকর্মের ইতি টানতে মরিয়া পারভেজ তমাল।
সূত্র বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করেছেন পারভেজ তমাল। এমনকি এনআরবিসি ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা তৎকালীন কোটা সংস্কার আন্দোলনে শামিল হলে এবং এ সংক্রান্ত কোন মন্তব্য করলে তাকে প্রশাসনিক হয়রানির হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া কেউ যাতে আন্দোলনে শামিল হয়ে দেরি করে ব্যাংকে না ঢুকতে পারে এজন্য তদারকিও করা শুরু করেছিলেন। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে তার নির্দেশে গত ১৭ জুলাই রাতে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা এনআরবিসি ব্যাংকের প্রত্যেক শাখা প্রধান বরাবর পাঠানো হয়।
ব্যাংকের ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যাংকে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোন সমাবেশে শামিল হওয়া বা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোটা সংস্কার সংক্রান্ত কোন ধরনের কোন মন্তব্য, এই সংক্রান্ত কোন তথ্য শেয়ার করা বা পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এই ব্যাপারে মানব সম্পদ বিভাগ হতে প্রেরিত সূত্রপত্র ‘চ’ ই-মেইলে উল্লেখিত নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো। এই আদেশের ব্যত্যয় হলে তার বিরুদ্ধে মানব সম্পদ বিভাগের নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যাংক এবং ব্যাংকের আশেপাশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যথাসময়ের মধ্যে কর্তব্য স্থানে যোগদান করার নির্দেশনাও দেওয়া হয় সেই চিঠিতে।
জানা গেছে, নিজেকে রাশিয়ান অলিগার্ক পরিচয় দেওয়া পারভেজ তমাল রাশিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ছিলেন। নিজের নাম আর পদবী ব্যবহার করে দেশ ছেড়ে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সহায়তায় ঋণ জালিয়াতি, কমিশন বানিজ্য, নিয়োগ বানিজ্য, শেয়ার কারসাজি, মানিলন্ডারিং, বিদেশে অর্থ পাচার, গ্রাহকের কোম্পানী দখলসহ বিবিধ আর্থিক দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply