‘অর্থনীতির গলার কাঁটা’ ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। পরের প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) খেলাপি ঋণ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ রেকর্ড খেলাপি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই অর্থবছর শেষ করলো দেশের ব্যাংক খাত।
এদিকে শুরু হওয়া নতুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেশের ব্যাংক খাতের রেকর্ড খেলাপি ঋণ কমানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের মার্চ শেষে যার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এদিকে মার্চ মাস শেষে ব্যাংক খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা।
অপরদিকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সয়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা বা ২৫ শতাংশ।
এছাড়া আগের বছরের মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২৪ সালের একই সময়ে ৫০ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অনিয়ম, কেলেঙ্কারি, দুর্বল কর্পোরেট গভর্ন্যান্স এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবের ফলে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিচ্ছে প্রকৃত পরিমাণ তার চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্র পরিচালিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মার্চ মাসে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা, যা তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৭ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি মন্দ ঋণ কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্ত জনতা ব্যাংকের, ৩০ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণ করা ঋণের ৩১ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের মন্দ ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা বা বিতরণকৃত ঋণের ২৮ শতাংশ।
খেলাপি ঋণ এমন এক সময়ে বেড়েছে যখন আইএমএফের কাছ থেকে সরকার ৪.৭ ডলার ঋণ পেতে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালিত ব্যাংকগুলোতে মন্দ ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এই লক্ষ্যমাত্রা ৫ শতাংশ।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply