দেশের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত জুলাই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ শতাংশ কম। এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এরপর কখনোই তা ১০ শতাংশে নিচে নামেনি।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণের বড় অংশ ব্যয় হয় আমদানিতে। তবে ডলার-সংকটের কারণে চাহিদামতো ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাচ্ছে না। তাই আমদানি কমে গেছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় এখন কেউ নতুন করে প্রকল্প নিতে চাইছেন না। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। তখন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এরপর জুলাইয়ে ঋণ কমে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকায় নামে। তাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমে হয় ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। বর্তমান মুদ্রানীতিতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এদিকে জুলাই থেকে নতুন পদ্ধতিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, যা স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাইয়ে স্মার্ট রেট ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, যা আগস্টে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। ফলে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগে ব্যাংকঋণের সুদহার ছিল সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। ঋণের সুদ বৃদ্ধির ফলে চাহিদা কিছুটা কমেছে।
আলাপকালে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, এখন সরকারি-বেসরকারি প্রায় ১৫টি ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়েছে। তাঁরা দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এরপরও কেউ কেউ আগ্রাসীভাবে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ইসলামি ধারার কয়েকটি ব্যাংক চাহিদামতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তারল্য জমা রাখতে না পারায় তাদের নিয়মিত জরিমানা গুনতে হচ্ছে। অন্যদিকে যেসব ব্যাংকের টাকা রয়েছে, তারা ঋণের ব্যাপারে বেশ সতর্ক। পরিস্থিতি না বুঝে তারা ঋণ ছাড় করছে না। এর ফলে ঋণ বিতরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ‘ছয় মাস ধরে নতুন করে তেমন বিনিয়োগ হচ্ছে না। মাঝে পোশাকের ক্রয়াদেশও কমে গিয়েছিল, আবার বিদেশিরা পোশাকের ভালো মূল্যও দেয়নি। সামনে নির্বাচন। তাই বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা অপেক্ষা করছেন। তবে অনেকের পরিকল্পনা আছে নতুন প্রকল্প করার। নির্বাচনের পর পরিস্থিতি ভালো হতে পারে। তখন আবার বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়বে। আশা করছি, জানুয়ারি থেকে পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াবে।’
দেশে দেড় বছর ধরে ডলারের সংকট চলছে। এতে ডলারের দাম ৮৫ থেকে বেড়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। মাঝে ডলারের দাম বাড়ার কারণেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে। কারণ, প্রতি ডলারে খরচ ২৫ টাকার বেশি বেড়ে গিয়েছিল। এখন আমদানি ঋণ কমে যাওয়ায় বেসরকারি ঋণ কমে গেছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply