নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার যোগানিয়া গ্রামের তুষার কান্তি সিকদারের বিরুদ্ধে ভয়াবহ প্রতারণা, জমি দখল, জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভূমি সংক্রান্ত দালালি ও প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি আলোচিত মামুন হত্যা মামলার আসামিও। আদালতের নথি, তদন্ত প্রতিবেদন ও স্থানীয়দের সাক্ষ্য অনুযায়ী, তুষার কান্তি সিকদারকে ঘিরে জনমনে ক্ষোভ চরমে উঠেছে।
সম্প্রতি নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এমপি মামলা নং ২৬৭/২০২৫–এর শুনানিতে প্রথম পক্ষ পলাশ কুমার সিকদার অভিযোগ করেন, যোগানিয়া মৌজার ১৪২১ দাগের ২৮ শতক জমি তার ভোগদখলে ছিল। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে সেখানে আবাদ করে আসছেন এবং পাঁচ বছর আগে কুল বরই গাছ রোপণ করেছেন। কিন্তু তুষার কান্তি সিকদার জোরপূর্বক ওই জমির কিছু অংশে টিনের ছাপড়া তুলে দখল করতে চান। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর আদালত বাদীপক্ষের দখল বহাল রাখেন এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় তুষার কান্তি সিকদারের বিরুদ্ধে প্রসিডিং গ্রহণ ও চূড়ান্ত করেন।
এ ঘটনার বাইরে তুষারের বিরুদ্ধে রয়েছে ভয়াবহ প্রতারণার ইতিহাস। জমি কেনাবেচার নামে বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েও তিনি দলিল দেননি। কল্পনা রানী বসুর কাছ থেকে ১৩ শতক জমির দাম নিলেও দলিল হয়নি। পান্নু হুজুর তিন দফায় টাকা দেওয়ার পরও ২৫ শতক জমি পাননি। ভোলা নন্দীর জমি বিক্রির টাকা নিয়ে অন্যের কাছে ৭০ শতক জমি বিক্রি করে দেন। সাবেক বাঐসোনা ইউনিয়নের কুটি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিলেও জমি দেননি; বরং একই জমি আরেক জনের কাছ থেকে আবারও টাকা নেন। বাবলু ঠাকুরের জমি বন্ধক রেখে টাকা নিলেও ফেরত দেননি। সুবোধ মজুমদারের ২৬ শতক জমি বন্ধক রেখে এক লাখ টাকা নিয়ে ফেরত দেননি। রেজওয়ান মাস্টারের ২২ শতক জমির জন্য ৩ লাখ টাকা নিলেও দলিল করেননি। আর জয়দেব দাস বাজারে দুটি ঘর কেনার টাকা নিলেও ঘর পাননি। ক্ষোভে জয়দেব স্ট্রোকে মারা যান বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, তুষার কান্তি সিকদার শুধু প্রতারণার সঙ্গেই জড়িত নন, তিনি মামুন হত্যা মামলারও আসামি। সেই মামলায় একটু আদালত থেকে জামিনে এসে আবারও তিনি প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে ভূমি দখল, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এতটাই বিস্তৃত যে গ্রামজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ৫০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি এখনো বিয়ে করেননি। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি একাধিক পরকীয়ায় জড়িয়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন। তার অর্থনৈতিক দাপট ও দালালি কার্যক্রমের কারণে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে।
যোগানিয়া ও আশপাশের গ্রামগুলোতে এখন তুষার কান্তি সিকদারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, জমি কেনাবেচার নামে একের পর এক মানুষকে প্রতারণার শিকার করেছেন তিনি। কেউ টাকা ফেরত পাননি, কেউ দলিল পাননি, কেউ আবার একই জমি একাধিক জনকে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, তার প্রতারণার বিচার না হলে আরও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেছেন, মামুন হত্যা মামলার আসামি ও চিহ্নিত ভূমি দস্যু তুষার কান্তি সিকদারের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
Leave a Reply