মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০২ পূর্বাহ্ন

পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৮৩ Time View

৫ম দিনে বৃষ্টি হওয়া নিয়ে রাতভর ছিল শঙ্কা। তবে মধ্যরাতে পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার রমিজ রাজা জানালেন, মাঠে খেলা গড়াবে। পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরের সূত্রে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এই কথা জানান তিনি। বাংলাদেশও স্বপ্ন দেখতে থাকে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের। শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্নই সত্য হলো দ্বিতীয় সেশনে এসে। ব্যাটারদের সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে পেল ৬ উইকেটের জয়।

পাকিস্তানের সঙ্গে টেস্ট এলেই বাংলাদেশের স্মৃতিতে উঠে আসে মুলতান টেস্টে হারের স্মৃতি। দীর্ঘদিন পর সেই হারের ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছে রাওয়ালপিন্ডির প্রথম টেস্ট। ১০ উইকেটের জয় পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার বাংলাদেশকে দিয়েছে টেস্টে পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ। এবার দ্বিতীয় টেস্টেও এলো অসামান্য এক জয়। দিনের শুরুতে দুই উইকেট হারালেও নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিমরা ঠিকই দলকে নিয়ে যান ১৮৫ রানের ল্যান্ডমার্কে।

চতুর্থ দিনে পেসারদের দাপুটে পারফরম্যান্সের পর জয় ছিল সময় আর ধৈর্য্যের ব্যাপার। ৫ম দিনের দ্বিতীয় সেশনে এসে এলো সেই ক্ষণ। শেষ দিনের টাইগার ব্যাটারদের সুবাদে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই। পাকিস্তানও ঘরের মাঠে নিজেদের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার এমন লজ্জার শিকার হয়েছে।

বাংলাদেশ দিন শুরু করেছিল ১৪৩ রানের লক্ষ্য নিয়ে। ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটি থেকে এদিন যোগ হলো আরও ১৪ রান। দলীয় ৫৮ রানে জাকির আর ৭০ রানে ফেরেন আরেক ওপেনার সাদমান। দুই ওপেনার মিলে ১০ ওভারে রান তুলেছেন পার করেছেন ৫০ এর মার্ক। এরপরেই অবশ্য বিপত্তি। মির হামজার বলে ব্যক্তিগত ৪০ রানে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন জাকির। জীবন পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি আরেক ওপেনার সাদমান। মিডঅফে আলতো শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন শান মাসুদের হাতে। খুররাম পেয়েছেন নিজের প্রথম উইকেট।

অধিনায়ক নাজমুল শান্ত আর মুমিনুল এরপর খেললেন নিখুঁত টেস্ট ইনিংস। ভেজা আউটফিল্ডের কারণে শুরুতে খানিক কষ্ট হলেও শেষ পর্যন্ত ঠিকই নিজেদের খুঁজে পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক ও বর্তমান অধিনায়ক। ২০ ওভার খেলে দুজন যোগ করেন ৫৭ রান। ম্যাচটাও ততক্ষণে পাকিস্তানের নাগালের অনেকটা বাইরে।

লাঞ্চের পর শান্ত পারেননি নিজের ইনিংস বড় করতে। সালমান আঘার বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। করেছেন ৩৮ রান। দ্বিতীয় টেস্ট জিততে তখনো বাংলাদেশের প্রয়োজন এখন ৫৮ রান।

সেখান থেকে এরপর আর ফিরতে হয়নি বাংলাদেশের। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মিলে বাংলাদেশকে নিয়ে গেলেন জয়ের আরও কাছে। মুমিনুল ফিরলেও সাকিব আল হাসান এসেছিলেন জয় করতে। তাতে বাংলাদেশ আবারও পেল দেশের বাইরে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ। এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ছিল বিদেশে সিরিজ জয়ের স্মৃতি। এবার তাতে যুক্ত হলো পাকিস্তানের নাম।

গতকালের দিনটাই মূলত ভিত গড়ে দেয় জয়ের। তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে হাসান মাহমুদ তুলে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। ২১ রানের লিড থাকলেও ব্যাকফুটেই ছিল পাকিস্তান। ৪র্থ দিন বাংলাদেশের পেসাররা ঝরালেন আগুন। নাহিদ রানার গতির সামনে অসহায় পাকিস্তানের টপ আর মিডল অর্ডার। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং স্পেল উপহার দিলেন।

সঙ্গ দিলেন হাসান মাহমুদ নিজেও। দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান আর সালমান আঘাকে ফিরিয়েছেন। ১৭২ রানে পাকিস্তানের ইনিংস গুটিয়ে গেলে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ১৮৫ রান।

এর আগে লিটন কুমার দাস এবং মেহেদি হাসান মিরাজের প্রথম ইনিংসে গড়া ১৬৫ রানের বিশ্বরেকর্ড জুটিটাও টাইগারদের আত্মবিশ্বাসের পালে দিয়েছে বাড়তি হাওয়া। টেস্ট ক্রিকেটে ৫০ এর আগে ৬ উইকেট হারানোর পর ৭ম উইকেটে বিশ্বরেকর্ড ১৬৫ রানের জুটি গড়েন দুই টাইগার ব্যাটার। লিটন পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক। প্রথম ইনিংসের পাকিস্তানের ২৭৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ গিয়েছিল ২৬২ পর্যন্ত।

১২ রানে পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের ম্যাচে ফিরতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। গ্যালারিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়েছিল সিরিজের শুরু থেকেই। শেষ পর্যন্ত সিরিজ শেষে উঁচুতেই থাকলো লাল-সবুজের সেই পতাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS