শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৪:০২ অপরাহ্ন

৪০ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পদত্যাগ শুরু হয়েছে, যা চলছে এখনো। কোনো কোনো উপাচার্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, কেউ কেউ ছাত্রদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেছেন। আর উপাচার্যদের একটি অংশ আত্মগোপনে রয়েছেন। আবার কোনো কোনো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ ঠেকাতে ছুটিতে গেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করছেন উপাচার্য। আর অনেকে পদত্যাগ এড়াতে ছুটি নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছিলেন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন, মামলা করেছেন। এ কারণে এসব শীর্ষ কর্মকর্তা পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন।

তথ্য অনুযায়ী, পদত্যাগ, আত্মগোপন ও ছুটিতে থাকার কারণে ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যশূন্য। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষও পদত্যাগ করছেন। গতকাল সচিবালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু করতে দ্রুত পদায়ন করা হবে। তিনি বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেগুলো চালু করতে হবে। আমরা চাইব, সত্যিকার শিক্ষানুরাগী, যোগ্য এবং প্রশাসনিক দক্ষতায় যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে। আমরা চেষ্টা করব, বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাতে অতিদ্রুত পদায়ন হয়।

টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ফরহাদ হোসেন ৫ আগস্টই পদত্যাগ করেছেন। এরপর থেকেই মূলত উপাচার্যদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে।

পদত্যাগের তালিকায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নূরুল আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম কামরুজ্জামান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশীদ।

এছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামরুল আলম খান, গাজীপুরের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাবিবুর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মিহির রঞ্জন হালদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুর রশীদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের তালিকা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

আন্দোলন চলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে :উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের দাবিতে ‘স্টেপ ডাউন উপাচার্য’ কর্মসূচি পালন করছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ঐ কর্মসূচি পালন শুরু করেন। উপাচার্যের বাংলোর সীমানাপ্রাচীরের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ভেতরে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) উপাচার্য মো. জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ৬ আগস্ট উপাচার্য জামাল উদ্দিন ভূঞা শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে ১০ দিনের ছুটি নেন। এর পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন। আলটিমেটাম দেওয়ার পর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন পদত্যাগ না করায় প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারারের পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন করছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) উপাচার্য ড. মো. নাসিম আখতারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। ড. মো. নাসিম আখতার আত্মগোপনে রয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS