শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পিবিআই এর তদন্তে বাদীই পিতার হত্যাকারী, চুরির নাটক, স্বীকারোক্তি ও আলামত উদ্ধার চুনারুঘাট থানার ওসি মোঃ নুর আলম ক্লোজড আইএফআইসি ব্যাংকে “পরিবর্তনের পরিক্রমায় এক বছর” শীর্ষক টাউন হল সভা অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় নির্বাচন করার মত সক্ষমতা এখনো অর্জন করতে পারেনি : জাতীয় সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ২৪তম টেক্সটাইল সিরিজ অফ এক্সিবিশন্স ২০২৫ এর পর্দা নামলো জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্র প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু, জিএস ছাত্রশিবিরের মাজহার ইসলাম নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ সুশীলা কার্কির ইসরাইলের হামলায় গাজায় আরও ৫০ জন নিহত সন্ধ্যা ৭টার মাঝে জাকসু নির্বাচনের ফল প্রকাশের আশা সিইসির নির্বাচন আয়োজনের অভিজ্ঞতা না থাকায় ফল প্রকাশে সময় বেশি লাগছে: জাবি প্রক্টর

শিশু অধিকার কি শুধুই মুখের বুলি

মাজেদুল ইসলাম আখিফ
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪

মাজেদুল ইসলাম আখিফ: 

অধিকার, অধিকার সবাই তো বলে অধিকারের কথা, তাই বলে তো বায়ান্ন ও একাত্তরে দিয়েছিল প্রাণ মোদের পূর্বপুরুষরা। যার ফলে পেয়েছি অধিকার, কিন্তু এই অধিকার কি  পূর্ণ ভাবে, সমবণ্টন করতে পেরেছি? হয়তো পারিনি, একদিন অবশ্যই পারব, আমাদের চেষ্টা ও শ্রম দ্বারা।  আজকে আমি কথা বলব শিশু অধিকার নিয়ে, অনেকে বলবে এতো অধিকার আছে কিন্তু  শুধু কেন শিশু অধিকার? আমি বলব এই শিশু অধিকার যদি আগে সমবন্টন করতে না পারি, তাহলে আগামী দিনের অন্যান্য অধিকার গুলো এমনে মুখের বুলি হিসাবে থাকবে, পূরন হবে না একাত্তরের  রক্ত মাখা সপ্ন গুলো, থাকবে না কোনো মূল্য ঐ এক সাগর রক্তের।

শিশুরা হলো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তারাই ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দিবে তাদের কে যদি আমরা অধিকার থেকে বঞ্চিত করি,  নষ্ট করি তাদের সুন্দর শিশুকাল  ভেবে দেখেছেন  ভবিষ্যতে ওরা আপনার অধিকারকে কতটুকু গুরুত্ব দিবে যা বীজ না বুনে ফসল পাওয়ার আশা করার মতে।

দেশের অগ্রগতির সাথে সাথে শিশুদের অধিকার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন হচ্ছে দেশের নাগরিকরা। রাস্তার পাশে ক্ষুদায়-কাতর পথ শিশুরা পাচ্ছে এক বেলা হলেও খাবার, ইউনিসেফ, ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স এর মতো শত শত এনজিও নিরলসভাবে  কাজ করছে ঐ অবেহেলিত শিশুদের জন্য, সভ্য সমাজ মনে করে শুধু মাত্র তারাই অধিকার থেকে বঞ্চিত। কিন্তু স্রোতের অনুকূলে ফিলিস্তিনের গাজায়  প্রতিদিন মরছে শত শত শিশু, বোমার আঘাতে ছাড়-কার হচ্ছে দেহ, সেখানে কি নাই কোনো শিশু অধিকার? মিয়ানমারে শত শত ফুলের কুড়ি দের হত্যা করায় কি নাই শিশু অধিকার?

পুরো বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত কোথাও নেই  শিশু অধিকারের পূর্ণাঙ্গ রূপ। হয়তো ভাবছেন এমন কেন বলছি, উন্নত দেশগুলো  শিশু অধিকার প্রায় নিশ্চয়তাকরণ করতে পারলেও অর্থনৈতিক ভাবে বেহাল দশাপূর্ণ ও ভূ-রাজনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত, বিশ্ব  সমরনীতির মাঝে টিকতে না পারা  দেশগুলো এখনো পারেনি এই শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে, যা অনুপাতিক হারে খুবই নগন্য বলা যায়।

এক জরিফের মতে  বাংলাদেশে এই পর্যন্ত প্রায় ৫৮% শিশুর অধিকার নিশ্চায়ন করা গেছে। আর এই শিশু অধিকার নিশ্চিত করা প্রত্যেক সভ্য নাগরিকের একান্তই কর্তব্য ।  তারা ফিরিয়ে দিচ্ছেন ও শিশুর অধিকার, শিশুদের অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থানের মৌলিক অধিকার, শিশুদের এই মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিলেই কি শিশু অধিকার নিশ্চায়ন হয়ে যায়?

বাংলাদেশ কিছু শিশুর অধিকার নিশ্চায়ন করা গেলে ও এটি  পুরাপুরি ভাবে নিশ্চায়ন করা যায়নি তার উপর এটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নানা ভাবে।

বাংলাদেশ একটি নিম্ন আয়ের দেশ হওয়াই এখানকার নাগরিকরা এখনো পূর্ণভাবে  মনযোগ দিতে পারেনি এই সব বিষয়ের উপর,তারা এখনো নিজেদের  অন্ন-বস্ত্রের যোগানের দিকেই বেশই মগ্ন, তাই দেশের অধিকাংশ নাগরিক  শিশু অধিকারের গুরুত্ব এবং শিশু অধিকার নিশ্চায়নের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে না। যদিও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কিছু অংশের অগ্রগতি হয়েছে তাই একদিকে যেমন এর অগ্রগতি রয়েছে তেমনি শিশুঅধিকার সম্পর্কে  তাদের অজ্ঞতার কারণে এটি  বিরাট প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়িয়েছে এই শিশু অধিকার বাস্তবায়নে।  জাতীসংঘের মতে ১৮ বছর এর কম বয়সী সকল  নারী-পুরুষই শিশু।  আর এই শিশু অধিকার বাস্তবায়নে ঐ প্রতিবন্ধক বস্তুটির নাম হচ্ছে বুলিং।

বুলিং শব্দটি কম বেশি সকলের পরিচিত , প্রায় সব বয়সের মানুষেরাই কখনো বুলিং এর শিকার হয়েছেন অথবা নিজের অজান্তেই বুলিং করেছেন৷  কিন্তু এই বুলিংয়ের সবচেয়ে বেশি শিকার হয় শিশুরা, কারণ তারা কম বয়সী ও তাদের গায়ের জোর ও প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা খুবই নগন্য হওয়াই তারা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বুলিং এর শিকার হয়। ইংরেজি ভাষায় বুলিং বলতে বুঝায় কাউকে মানসিক ও শারিরীক ভাবে অপদস্ত করার উদ্দেশ্যে নানা ভাবে হয়রানি করাকে বুঝায় । বুলিং এর ক্ষেত্রে সবসময় কোনো না কোনো প্রত্যক্ষদর্শী থাকে, আর এই প্রতক্ষ্যদর্শীদের বেশির ভাগই হয়ে থাকে শিশু,  আর এই বুলিং আমারা নিজেদের অজান্তে নিজেরাই করছি শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ ও বিনোদনের জন্য, যার বিনিময়ে আমরা পেতে পারি এক বিপর্যস্ত সমাজ,  এক বিপর্যস্ত রাষ্ট্র, যেটির কালো ছায়ায় গ্রাস করতে পারে পুরো পৃথিবী।  শিশুদের বুলিং এ শিকার হওয়ার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে সুন্দর শিশুকাল, নষ্ট হয়ে যেতে পারে শিশুদের জীবন।  প্রত্যক মানুষেই একটি গণ্ডির ভিতরে সীমাবদ্ধ আর প্রত্যক মানুষেরেই সীমাবদ্ধতা রয়েছে, শিশুরা সাধারণত  অপরিপক্ষ হওয়ার কারণে তাদের সীমাবদ্ধতা গুলো একটু বেশিই লক্ষণীয় তাই বলে আমরা এই ত্রুটিকে কাজে লাগিয়ে বুলিং এর মতো অদৃশ্য বিষক্রিয়া তাদের মাঝে ছড়িয়ে  দিতে পারি না, ধ্বংশ করতে পারিনা জাতির গঠনতন্ত্রের হাতিয়ার।  শারীরিক ত্রুটি, বর্ণবাদ, প্রতিভার অবমূল্যায়ন কোনদিন হতে পারে না শিশু অধিকার নিশ্চায়নের  ফুলঝুড়ি।  আমরা যাদের বুলিং করছি তারা কী মানুষ না, আমরা কি এটা কোনোদিন  ভেবেদেখি? বুলিং করে আমরা কেন অন্যের জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়ার হুমকিতে ফেলব?

বর্ণবাদ, শারীরিক ত্রুটি আর প্রতিভার অবমূল্যায়ন করে কেন তাদের সত্তা ও প্রতিভা নষ্ঠ করব,  আপনার সৃষ্টিকর্তা কি আপনাকে এই অধিকার দিয়েছেন ? বই এর পড়া সারাদিন মুখস্ত করে আপনি ভালো শিক্ষার্থী কিংবা ভালো  শিক্ষক হতে পারবেন কিন্তু বইয়ের ঐ নৈতিকতার জ্ঞানটুকু কি বাস্তব জীবনে কখনো প্রয়োগ করে দেখেছেন?

সাধারণত  আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে  বুলিং এর  শিকার হয় থাকি তার মধ্যে উল্লখযোগ্য হলো :-পারিবারিক বুলিং, সামাজিক বুলিং , প্রাতিষ্ঠানিক বুলিং ও সাইবার বুলিং।

সামাজিক বুলিং ও পারিবারিক বুলিং:-

সাধারনত পরিবার ও সমাজ কর্তৃক বুলিং এর শিকার হওয়াকে সামাজিক ও পারিবারিক বুলিং বলে, একটা শিশু কিভাবে বেড়ে উঠবে তা সম্পূর্ণ রূপে নির্ভর করে তার পরিবার ও সমাজের উপর।  পরিবার ও সমাজ যেমন পারে একজন আদর্শ নাগরিক ও  আদর্শ মানুষ বানাতে ঠিক তেমনি পারে রাষ্ট্রের জন্য হুমকি সরূপ সহিংস্র জঙ্গি বানাতে,  পারিবারিক ও সামাজিক সমতাগুলো সব শিশুরাই রক্ষা  করতে পারে না থেকে যায় ত্রুটি আর এই ত্রুটি থেকে পারিবারিক ও সামাজিক বুলিং এর সৃষ্টি। এই বুলিং পরিবার ও সমাজকে বানাতে পারে সহিংস্র জঙ্গি তৈরির কারখানা।

প্রাতিষ্ঠানিক বুলিং:-

প্রতিষ্ঠান বলতে আমরা সাধারনত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান  গুলোকে বুঝে থাকি। আর এই  শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গুলো জাতি তৈরির কারখানা, শুধুমাত্র জাতি নই এক আদর্শ  সভ্য জাতি কিন্তু স্রোতের অনূকুলে এটি হতে পারে ধ্বংশাত্মক জাতি তৈরির কারখানা।  এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ছেয়ে গেছে বুলিং এর কালোছায়াই রীতিমত অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে এই বুলিং।  বুলি এর শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে সবাই শিক্ষা গ্রহনের জন্যই আসে। কিন্তু এই শিক্ষা গ্রহনের মাঝে কিছু অপূর্ণতা থেকে যায় তা হলো  নৈতিকতার ।  আর এই নৈতিকতার অভাবে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে অনেকে।   শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থী সবাই যেন এক লীলাখেলায় মেতে উঠেছে এই বুলিং এর, কিন্তু  তারা এটা ভেবে দেখে না এর ক্ষতিকর প্রভাব, কতটুকু  দীর্ঘস্হায়ী ও সংকটময়  হতে পারে।  ‘আমি  সব শিক্ষার্থী এবং সব  শিক্ষকের কথা বলছিনা।আমি তাদের বলছি যারা অন্যের অধিকার নিয়ে নূণ্যতম উদগ্রীব না।  আমি চাই না আবার নতুন করে তাদের  নৈতিকতা শিখাতে, আমি চাই তারা যেন “এই বুলিং এর ক্ষতিকর প্রভাবটুকু জানোক।

সাইবার বুলিং:-

তথ্য ও প্রযুক্তির ছোয়াঁয় পুরো পৃথিবীটা একটি বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত হয়েছে। যার ফলে এখন সবার হাতে হাতে  কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের মতো যোগাযোগ প্রযুক্তি ছড়িয়ে রয়েছে , যেটি আমাদের করে তুলছে উন্নত ও সমৃদ্ধ , এর এই অভূতপূর্ন সমৃদ্ধির ফলে এটি শিশুদের করে তুলছে আধুনিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত,  আর এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে বুলিং এর শিকার হয় অনেক শিশু,  যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ট্রল করে মানহানির মতো ঘটনা ঘটিয়ে বুলিং করা হয়।  যা দিন দিন শিশুদের জন্য হয়ে উঠছে অনিরাপদ  ও বিপদজ্জনক।

বুলিং এর প্রভাব :- 

বুলিং শুধুমাত্র একটি শব্দ নই এটি শিশুদের জন্য হয়ে উঠছে এক অদৃশ্য বিষক্রিয়া, এই বুলিং এর কারণে নষ্ঠ হয় হাজারো ফুলের কুড়িদের জীবন, ধ্বংশ হচ্ছে  সুন্দর ভবিষ্যৎ এর পৃথিবী। বুলিং এর কারণে শিশুরা  হয়ে উঠতে পারে  সহিংস্র ও আক্রমণাত্মক, তাদের মাঝে হ্রাস পাই নৈতিকতা, যার ফলে সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয় যা একদিনে সমাধানযোগ্য নই।  অতিরিক্ত বুলিং এর কারণে শিশুদের স্ট্রেস হয়, এই স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বিপর্যস্ত করে দেয় জীবন, শিশুকাল হলো মানুষের ব্যাক্তিত্ব  ও  ভিত্তি মজবুত করার সময় এই বয়সে অতিরিক্ত স্ট্রেস এর শিকার হলে শিশুদের নার্ভস ব্রেক ডাউন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, যা শিশুদের জন্য  বিরুপ প্রভাব ফেলে। 

বিশ্ব স্বাস্থা সংস্থার মতে প্রতিবছর ১৮ বছর এর কম-বয়সী আত্মহত্যাকারীদের ৮৫ শতাংশ আত্মহত্যা করে এই বুলিং এর শিকার হয়ে, এবং ৫৬ শতাংশ শিশু মানসিক অসুস্ততায় ভুগে প্রতিনিয়ত। শিশুকালের এই বুলিং এর স্মৃতি ভবিষ্যতে তাদের বিপদগামী ও উগ্রবাদী করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

দিন থেকে দিন মানুষ শিশু অধিকার নিয়ে খুবই সচেতন হচ্ছে, শিশু অধিকার নিশ্চায়নে সবাই অগ্রগামী ভূমিকা রাখছে কিন্তু কিছু অজ্ঞতার কারণে এই শিশু অধিকার বিঘ্ন হচ্ছে নানা ভাবে, বুলিং, শিশুশ্রম ও যৌন হয়রানির মত কিছু অদৃশ্য বিষক্রিয়া আমাদের শিশুদের ধ্বংস করছে  আমাদের অগোচরে,  তার জন্য অবশ্যই আমরাই দায়ী, আমরা দিন দিন শিশু অধিকার নিয়ে সচেতন হলেও  কীভাবে শিশু অধিকার বিঘ্নিত হচ্ছে, এর গুরত্ব কি তা নিয়ে মোটেও উদগ্রীব নয়। যদি সচেতনতাকেই মূল লক্ষ বানিয়ে তাদের অধিকার সমভাবে ফিরিয়ে দিতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে এক সুন্দর সমাজ, এক সুন্দর পৃথিবীর আশা, আমরা করতে পারি।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS