রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বক্তব্য প্রকাশ তদন্ত কমিটির সামনে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৩১ Time View
IDRA

আইনবহির্ভূতভাবে বীমা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের অভিযোগ উঠেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক সদস্য এবং বর্তমান চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে । এরই মধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে । গতকাল এ কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বীমা কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট দায়েরকারী আবু সালেহ মোহাম্মদ আমিন মেহেদী কমিটির কাছে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। গতকাল কমিটি আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানার জন্য ডেকেছিল। তিনি মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হয়ে কমিটির কাছে অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

তবে সম্প্রতি গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো এক প্রতিবাদপত্রে তিনি দাবি করেছেন আইডিআরএতে যোগ দেয়ার আগেই তিনি তার পারিবারিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেছেন।

এর আগে ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল সদস্য হিসেবে আইডিআরএতে নিয়োগ পান ড. এম মোশাররফ হোসেন। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট তাকে সংস্থাটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০-এ স্বার্থের বিরোধের বিষয়ে ২৭ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কর্তৃপক্ষ বা কমিটি কর্তৃক সভায় আলোচিত ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে এমন কোন বিষয়ে যদি কর্তৃপক্ষের কোন সদস্য বা কর্মকর্তা বা কমিটির কোন সদস্যের আর্থিক বা অন্য কোন সংশ্লেষ থাকে যা এ আইনের অধীন তার দায়িত্বকে ক্ষুণ্ন করতে পারে তাহলে তিনি বিষয়টিতে তার ক্ষমতা প্রয়োগের বা কর্তৃপক্ষ বা এর কোন কমিটি কর্তৃক আলোচনার আগেই কর্তৃপক্ষকে বা কর্তৃপক্ষের কমিটিতে লিখিতভাবে সেই বিষয়ে তার স্বার্থসংশ্লিষ্টতা ও এর প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত করবেন।’ উপধারা ২-এ বলা হয়েছে, ‘কোন সদস্য বা কর্মকর্তা বা কমিটির সদস্য এই ধারার বিধান অনুসারে স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অবহিত করতে ব্যর্থ হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং দোষী সাব্যস্ত হলে অনধিক ১ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

সম্প্রতি আবু সালেহ মোহাম্মদ আমিন মেহেদী নামের পুঁজিবাজারের একজন বিনিয়োগকারী বীমা কোম্পানিতে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিধিবহির্ভূত বিনিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিটে বলা হয়, আইডিআরএ চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন লাভস অ্যান্ড লাইভস অর্গানিকস লিমিটেড কোম্পানির মাধ্যমে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি পিএলআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়। ২০১৯ সালে গঠন করা পিএলআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ৫ লাখ শেয়ার লাভস অ্যান্ড লাইভস অর্গানিকসের কাছে রয়েছে। এছাড়া পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩৫ লাখ, বি এম ইউসূফ আলীর কাছে সাড়ে ৭ লাখ এবং মোস্তফা হেলাল কবীরের কাছে পিএলআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির আড়াই লাখ শেয়ার রয়েছে। পিএলআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পর্ষদে লাভস অ্যান্ড লাইভস অর্গানিকসের প্রতিনিধি হিসেবে মো. বোরহান উদ্দিন দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ঠিকানা ব্যবহার করেছেন, যেটি একসময় আইডিআরএ চেয়ারম্যানের আবাসিক ঠিকানা ছিল।

রিটে আরো বলা হয়, লাভস অ্যান্ড লাইভস অর্গানিকস লিমিটেড (এলএলওএল) ও গুলশান ভ্যালি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (জিভিএআইএল) গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বীমা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে এলএলওএল এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ফান্ড, এলএলওএল এমপ্লয়িজ কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড, জিভিএআইএল এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ফান্ড ও জিভিএআইএল এমপ্লয়িজ কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০-এর ২৭ ধারা অনুসারে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ক্ষেত্রে স্বার্থগত দ্বন্দ্বের কারণে বীমা কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আইডিআরএর বিভিন্ন সভায় চেয়ারম্যান হিসেবে ড. এম মোশাররফ হোসেন অংশগ্রহণ করেছেন, যেখানে বীমা কোম্পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে তার মালিকানাধীন কোম্পানির মাধ্যমে এসব বীমা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ বিধিমালারও লঙ্ঘন। আইডিআরএর আইনের সেকশন ১৪(১)(ঘ) ও (ঙ) অনুসারে এ ধরনের কার্যক্রমের ফলে পদ থেকে অপসারণের বিধান রয়েছে।

এছাড়া লাভস অ্যান্ড লাইভস অর্গানিকস লিমিটেড (এলএলওএল) ও গুলশান ভ্যালি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (জিভিএআইএল) গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আমান কটন, রিংশাইন টেক্সটাইল, আশুগঞ্জ পাওয়ারের বন্ড, অরিজা এগ্রো, মাস্টারফিড এগ্রো, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স ও একমি পেস্টিসাইডসের পাবলিক অফারে যোগ্য বিনিয়োগকারী (ইআই) কোটায় বিনিয়োগ করা হয়েছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত সব তথ্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ড. এম মোশাররফ হোসেন আইডিআরএর সদস্য ও চেয়ারম্যান থাকাকালে বীমা কোম্পানির শেয়ার ও পিএলআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন কিনা সেটি তদন্ত ও যাচাই করার নির্দেশ দেন। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে তদন্ত করে এ বছরের ১৭ এপ্রিলের মধ্যে কিংবা তার আগে আদালতের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত সাপেক্ষে আইডিআরএ আইন ২০১০-এর সেকশন ১৪ অনুসারে ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা সেটি প্রতিবেদন আকারে আদালতের কাছে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS