কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসছে স্টার এডহেসিভস লিমিটেড। কোম্পানিটি তার ব্যবসা সম্প্রসারণে পুঁজিবাজার থেকে ৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এ বিষয়ে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে কোম্পানির নানা দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেন স্টার এডহেসিভস এর কর্মকর্তারা। তারা হলেন স্টার এডহেসিভস লিমিটেডের হেড অফ বিজনেস মো. মিরান খান, প্রতিষ্ঠানটির চীফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) মো. জুলফিকার আলী এবং হেড অফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সিব্বির হোসেন।
পুঁজিবাজারে আসছে এসএমই খাতের কোম্পানি স্টার অ্যাডহেসিভ লিমিটেড। কোয়ালিফাইয়েড ইনভেস্টরস অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে কোম্পানিটি ৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ বোর্ডে তালিকাভুক্ত হবে। পারটেক্স স্টার গ্রুপের এই অঙ্গ প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দিক নিয়ে অর্থসূচকের সাথে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অব বিজনেস মো. মিরান খান এবং প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মো. জুলফিকার আলী।
স্টার অ্যাডহেসিভ কি ধরনের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে? এই পণ্যগুলো প্রধানত কোন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে?
মো. মিরান খান. স্টার অ্যাডহেসিভস পারটেক্স স্টার গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। স্টার এডহেসিভ ইম্পোর্ট সাবস্টিটিউট (আমদানি বিকল্প) বিভিন্ন ধরনের এডহেসিভস ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। স্টার বন্ড ও গাম কিং ব্র্যান্ডের রাবার এবং রেজিন এডহেসিভস বাংলাদেশের মার্কেটে সুদৃঢ় অবস্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই পণ্যগুলি সাধারণত ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রি, সু ইন্ডাস্ট্রিসহ হাউজহোল্ড কাজেও ব্যবহার হয়ে থাকে।
দেশে অ্যাডহেসিভ পণ্যের বাজারের আকার কেমন? এখানে আপনাদের কোম্পানির অংশ কতটুকু?
মো. মিরান খান: বাংলাদেশে এডহেসিভ পণ্যের বাজারের আকার প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্টার এডহেসিভ প্রায় ২০% শেয়ার নিয়ে এই বাজারে জোরালো ভূমিকা তৈরি করেছে। এছাড়াও এ বাজারে দেশী-বিদেশী আরো অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে। এর মধ্যে কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানিও আছে। এদের সাথে প্রতিযোগিতা করেই নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে স্টার অ্যাডহেসিভ।
দেশে অ্যাডহেসিভের বাজার কী হারে বাড়ছে? আগামী দিনে এই খাতের সম্ভাবনা কতটুকু?
মো. মিরান খান: দেশে বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি এডহেসিভ ব্যবসায়ে মনোযোগী হওয়ায় এই ব্যবসার দ্বার প্রশস্ত হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক পণ্যের উপর থেকে নির্ভরতা কমছে। এই ব্যবসার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অনেক বেশি।
গত ৫ বছরে স্টার অ্যাডহেসিভের পারফরম্যান্স কেমন ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির চীফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) মো. জুলফিকার আলী বলেন,
২০১৭ সালের জুন মাসে স্টার অ্যাডহেসিভের বার্ষিক আয় ছিলো ১৭.৭৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জুন মাসে আমাদের আয় ছিলো ২৩.৪৯ কোটি টাকা। জুন ২০১৯ এ ৩৭ কোটি টাকা, জুন ২০২০ এ করোনা মহামারি পরিস্থিতে আমাদের আয় কিছুটা কমে যায়। সেবছর আমাদের বার্ষিক আয় ছিলো ২৫.৩২ কোটি টাকা। তবে তার পরের বছরেই আবারও আমাদের ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ায় এবং গতবছর অর্থাৎ জুন ২০২১ এ আমাদের আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪১.২৪ কোটি টাকা।
বাজারে আসার ঠিক আগে আগে কয়েক দফায় আপনারা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়েছেন? হঠাৎ করে মূলধন বাড়ানোর কারণ কী?
মো. জুলফিকার আলী: স্টার এডহেসিভ বিজনেস অপারেশন চালানোর স্বার্থে সিস্টার কনসার্ন থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নিয়েছিল। মার্কেটে আসার আগে সিস্টার কন্সার্ন লোনগুলিকে শেয়ারে কনভার্ট করে। যার কারণে মূলধন বৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি পাঁচটি সিস্টার কন্সার্ন এর নামে শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এমনকি বসুন্ধরা গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপের স্টাফ প্রভিডেন্ট ফান্ড স্ব-প্রণোদিত হয়ে স্টার এডহেসিভ প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনেছে।
পুঁজিবাজার থেকে ৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে স্টার অ্যাডভেসিভ। এতে কোম্পানির ব্যবসায় কী প্রভাব পড়বে?
মো. জুলফিকার আলী: মার্কেট থেকে উত্তোলিত পাঁচ কোটি টাকায় নুতন পণ্য উৎপাদন, ফ্যাক্টরি বিল্ডিং রিনোভেশন, লোন পরিশোধ করবে কোম্পানিটি।
স্টার অ্যাডহেসিভ নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
মো. জুলফিকার আলী: স্টার এডহেসিভস তার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার অংগীকার নিয়েই এই মার্কেটে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। যার প্রতিফলন ইতোমধ্যে কোম্পানিটি দিতে সক্ষম হয়েছে। গত অর্থ বছরে ১০% ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি।
সবশেষে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টরস অফারকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সিব্বির হোসেন।
এসময় সিব্বির হোসেন বলেন, প্রতিটি ব্যবসার ক্ষেত্রেই ব্যবসার পেছনে যিনি আছেন বা যে বা যারা এই ব্যবসাটা পরিচালনা করছেন সেই ব্যাবসাটির পরিচিতির ক্ষেত্রে এই বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ক্ষেত্রে স্টার এডহেসিভস লিমিটেড এর যিনি প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক আজিজ আল কায়সার, একাধিক ব্যবসাকে সফলভাবে পরিচালনা করার উনার দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সিটি ব্যাংক লিমিটেড উনার নেতৃত্বে দীর্ঘ সময় ধরে পরিচালিত হচ্ছে। তার ব্যবসায়িক জীবনের সফলতার খ্যাতি পুরো দেশজুড়ে।
তিনি আরও বলেন, স্টার এডহেসিভস লিমিটেডের পরিচালক যেহেতু উনি নিজেই এবং উনি এই এডহেসিভস এর ব্যবসা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন উনার বাবার থেকে। তাই বিনিয়োগাকারীদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো, স্টার এডহেসিভ হুট করে ব্যবসা শুরু করে হঠাৎ করে পুঁজিবাজারের আসা কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। দীর্ঘ সময় ধরে আমরা সফলতার সাথে ব্যবসাটি পরিচালনা করে আসছি।
তাই কোয়ালিফাইড ইনভেস্টরদের উদ্দেশ্যে নির্ভয়ে স্টার এডহেসিভস এ বিনিয়োগ করার অনুরোধ করা যাচ্ছে।
এনএন
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply