শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪১ অপরাহ্ন

বয়স বাড়লে কোন কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১৯২ Time View

সারা বিশ্বে মানুষের দেহে লুকিয়ে থাকে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি অসংক্রামক রোগ। এরমধ্যে ক্যানসার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও মানসিক রোগ অন্যতম। বয়স বাড়ার সঙ্গে অনেক উন্নত দেশে কিছু স্ক্রিনিং পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সুস্থ থাকতে এসব পরীক্ষা নিরিক্ষা নিয়ে লিখেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লে: কর্ণেল নাজমুল হুদা খান।

প্রতিবছর ৪ কোটিরও বেশি মানুষ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ অবস্থায় সারাবিশ্বে রুটিন স্ক্রিনিং পরীক্ষা-নিরীক্ষার গুরুত্ব বেড়েছে। জেনে নিই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোন পরীক্ষাগুলো করতে হবে।

১. উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে যেকোনো বয়সেই। উচ্চ রক্তচাপের কারণে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি জটিলতাসহ নানান সমস্যা হতে পারে। বাংলাদেশে ২১ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এরমধ্যে অর্ধেক নারী এবং দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষই জানে না যে তাদের উচ্চরক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যা রোধে নিয়মিত রক্ত চাপ মাপা জরুরী।  

২. রক্তের গ্লুকোজ:  রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, স্ট্রোক, অন্ধত্ব, হৃদরোগসহ নানান ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে নিয়মিত ফাস্টিং ব্লাড সুগার ও এইচবিএওয়ানসি পরীক্ষা করা দরকার।  

৩. চোখের পরীক্ষা: দৃষ্টি মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের অন্যতম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দৃষ্টিশক্তি কমতে শুরু করে। চোখে ছানি পড়াসহ নানান সমস্যা দেখা দেয়। গ্লুকোমা হলে চোখের অপটিক নার্ভ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীকালে দেখা দেয় দৃষ্টিহীনতা। তাই চল্লিশের পর বছরে একবার চক্ষু পরীক্ষা করাতে হবে।

৪. রক্তের চর্বি: অতিরিক্ত চর্বি শরীরের জন্য মারত্মক ক্ষতিকর। চল্লিশ ঊর্ধ্ব সকলের বছরে অন্তত একবার রক্তের লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করাতে হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বিশেষ করে শরীরের জন্য ক্ষতিকারক ট্রাইগ্লিসারাইট, এলডিএল এবং  কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখা  হয়। এসবের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়।  

৫. শ্রবণশক্তি: বয়স বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক সমস্যা কিংবা সংক্রমণের ফলে শ্রবণশক্তি কমে যায়। তাই প্রতি দুই-তিন বছর অন্তর অডিওগ্রাম পরীক্ষা করা জরুরি।  

৬. ক্যান্সার স্ক্রিনিং: বাংলাদেশে প্রতিবছর ক্যান্সার রোগী বাড়ছে দেড় লাখের বেশি; মারা যায় প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, অথচ একটু সচেতনতাই  প্রায় অর্ধেক মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। চল্লিশের পর পুরুষের প্রোস্টেট ক্যানসার ও নারীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। সাধারণত ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের রক্তে প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন এর  মাত্রা নির্ণয়ের মাধ্যমে প্রোস্টেটের ক্যান্সার স্ক্রিনিং করা যায়। বাংলাদেশে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাই নিরাপদ থাকার জন্য প্রতি বছর অন্তত একবার ত্বক ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে কিনা সেটি পরীক্ষা করা উচিত। বিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সী প্রত্যেক নারীর স্তন ক্যানসার সনাক্ত করতে ম্যামোগ্রাম করতে পরামর্শ দেন চিকিৎসকগন। দুই থেকে তিন বছর পরপর হলেও এই পরীক্ষাটি করা উচিত। সার্ভিক্যাল বা জরায়ুমুখ ক্যানসার শনাক্ত করতে প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা করা হয়। নারীদের অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ সার্ভিক্যাল ক্যানসার। একুশ বছর বয়সের পর প্রত্যেক নারীর এই পরীক্ষাটি করা উচিত।  

৭. হাড় ও জয়েন্টের রোগ: বয়স হলে অস্টিওপোরেসিস, আর্থ্রাইটিসসহ হাড়ের নানান রোগ দেখা দিতে শুরু করে। হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। হাড় ও জয়েন্টে ব্যাতথা ও চলাচলে মারাত্মক ও অসুবিধা দেখা দেয়। ঘনত্ব পরীক্ষার মাধ্যমে হাড়ের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা যায়।  

৮. থাইরয়েডের সমস্যা: হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া, ক্লান্তি ও অবসাদ, নখ ভেঙে যাওয়া, ত্বকের শুষ্কতার মতো সমস্যা দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে থাইরয়েড পরীক্ষা করাতে হবে। সাধারণত টি৩, টি৪, টিএসএইচ পরীক্ষার মাধ্যমে থাইরয়েডের সমস্যাসমুহ চিহ্নিত করা হয়।

১০.দাঁতের পরীক্ষা: দাঁত থাকতে কেউ দাঁতের মর্ম বোঝে না- প্রচলিত এই প্রবাদটি আমরা সবাই জানি। দাঁতের পরীক্ষায় অবহেলা না করে নিয়মিত পরীক্ষা করা ও চিকিৎসার মাধ্যমে দাঁতের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।  

১১. স্থুলতা নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেকেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না। সুস্থ থাকতে স্থুলতা নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরী।  

১২. কিডনির কার্যক্ষমতা স্ক্রিনিং: কিডনির কার্যক্ষমতা পরীক্ষার জন্য কিডনি ফাংশন টেস্টের মাধ্যমে রক্তে ইউরিয়া, সিরাম ক্রিয়েটিনিন, সিরাম ইলেকট্রোলাইটস এগুলো দেখা হয়। কিডনির রোগের ক্ষেত্রে সিরাম ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন ও ইলেকট্রোলাইটস সমূহে ব্যত্যয় ঘটে। কিডনিতে সমস্যা কিংবা শরীরের জয়েন্টে সমস্যার জন্য সিরাম ইউরিক এসিডও পরীক্ষা করা হয়। প্রস্রাবের সংক্রমণ, ডায়াবেটিস সনাক্ত এবং কিডনির কার্যক্রম জানতে ইউরিন ফর আর/এম/ই একটি অন্যতম পরীক্ষা। এ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্রাবের রং, শর্করা, প্রোটিন এবং বিভিন্ন ধরনের কণিকার উপস্থিতি  জানা যায়।    

১৩. লিভার ফাংশন টেস্ট: এ পরীক্ষার মাধ্যমে, এর মধ্যে সিরাম বিলিরুবিন, এসজিপিটি, এসজিওটি ইত্যাদির পরিমান জেনে লিভারের কার্যক্ষমতা দেখা হয়। এছাড়া HBsAg ও Anti HBC পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি / সি শরীরে আছে কি না, সেটি নির্ণয় করা হয়।  

১৪. এক্সরে চেস্ট: বুকের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের অবস্থা; বিশেষ করে শ্বাসনালির সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া শনাক্তকরণ, হৃদযন্ত্র স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বড় কি না বা ফুসফুসে পানি জমেছে কি না প্রভৃতি সনাক্তে এক্সরে চেস্ট পরীক্ষাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১৫. আল্ট্রাসনোগ্রাম: পেটের ভেতরে অঙ্গগুলোর গঠন ও কার্যক্রমে কোনো সমস্যা আছে কি না সেটি বোঝার জন্য কিংবা গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের গঠনগত অবস্থা পরীক্ষার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়ে থাকে।

১৬. সিবিসি চেকআপ: রক্তের এ মাধ্যমে শরীরের হেমোগ্লোবিন, ডাব্লিউবিসি, প্ল্যাটিলেট গণনা করা হয়। এর মাধ্যমে শরীরের রক্ত শূন্যতা, সংক্রমন ও রক্ত জমাট বাঁধা জনিত সমস্যা আছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়।

১৭. ইসিজি পরীক্ষা: সাধারণ একটি ইসিজির মাধ্যমে জেনে নেয়া যায় হৃদপিণ্ডের সার্বিক অবস্থাটিও ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS