রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৮ অপরাহ্ন

পোশাক ক্রয়ে লাগাম টানা শুরু ক্রেতাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০২২
  • ১২৮ Time View
Garments

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ক্রয়াদেশ কমানোর বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে বাংলাদেশের কিছু কারখানায় সম্প্রতি বার্তা পাঠিয়েছে ইউরোপভিত্তিক এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ইঅ্যান্ডএইচ নামের ওই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি ইউরোপ পরিস্থিতির অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটেছে। যুদ্ধ দুই দেশের মধ্যে হলেও প্রভাব দেখা যাচ্ছে বৈশ্বিক। প্রধান মুদ্রা, কাঁচামাল, জীবাশ্ম জ্বালানির দাম বাড়ছে। ব্যবসার প্রেক্ষাপটগুলোয়ও প্রভাব পড়ছে। রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র ও পরিবেশকদের জন্য ক্রয়াদেশ কমিয়ে আনতে হবে।’

এ বিষয়ে ইঅ্যান্ডএইচ বলেছে, বিদ্যমান পরিস্থিতি অবশ্যই ক্ষতির মুখে ফেলবে, কারণ এরই মধ্যে কাপড় ও অ্যাকসেসরিজের ক্রয়াদেশ দিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অবশ্যই ব্যবসার ওপর সার্বিক সংকটের প্রভাব কমাতে হবে। যার জন্য ঝুঁকি ভাগ করে নিতে হবে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের উত্তাপ টের পাওয়া যাচ্ছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে হয়েছে সবসময়ের চেয়ে বেশি। এ অবস্থায় আগামী মৌসুমের ক্রয়াদেশগুলোর পুনরায় পর্যালোচনার বিষয়ে সহায়তার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, ইঅ্যান্ডএইচ এরই মধ্যে বাংলাদেশের কারখানায় দেয়া পোশাকের ক্রয়াদেশগুলো স্থগিত করেছে।

আগামী মৌসুমে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির ক্রয়াদেশ কমানো পূর্বাভাস মূলত রাশিয়ার বাজারকে কেন্দ্র করে। কিন্তু গোটা ইউরোপের বাজারের জন্য পোশাকের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্রয়াদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে শুরু করেছে। দেশের পোশাক রফতানিকারক কারখানা কর্তৃপক্ষ, ইউরোপভিত্তিক একাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধের পরোক্ষ প্রভাবের শঙ্কায় ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দেয়ার বিষয়ে ধীরগতিতে চলার নীতি অনুসরণ করতে শুরু করেছে। আগামী মৌসুমের জন্য পোশাকের নমুনা উন্নয়ন হলেও সেগুলো নেয়ার বিষয়ে ক্রেতাদের তাগিদে ভাটা দেখা যাচ্ছে।

পোশাক পণ্যের অন্যতম বড় রফতানিকারক গ্রুপ মাইক্রো ফাইবার। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (অর্থ) ড. কামরুজ্জামান কায়সার বলেন, অর্থবছরের এ সময়টায় তৃতীয় বা চতুর্থ মৌসুমের ক্রয়াদেশ আসে। কভিড পরিস্থিতি ছাড়া প্রতি বছর এ সময়ে যে ক্রয়াদেশ আসে, সেই প্রবাহ এখন নিম্নমুখী। যুদ্ধের বিষয়টি সব জায়গায়ই নাড়া দিয়েছে, বিভিন্নভাবে যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোয় প্রভাবও পড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জার্মানিসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে ইনফ্লেশন শুরু হয়ে গেছে। কভিড সামগ্রিকভাবে আমাদের অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়াতেও শুরু করেছিলাম। এখন আবার নতুন দুর্যোগের কারণে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায় অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা, শঙ্কা আসছে। অনেকের ক্রয়াদেশ কমে গেছে বা কমছে। অনেকে বার্তা পাচ্ছে।

পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন প্রতিনিধিরা বলছেন, যুদ্ধজনিত সার্বিক পরিস্থিতির প্রভাবের কারণেই ক্রেতারা এখন ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ মানসিকতা প্রকাশ করছে। মানুষ যেহেতু খাদ্য কিনতে পারছে না, পোশাক পণ্য নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়ে গিয়েছে। ফলে ক্রেতারা ভাবছে এত বেশি ক্রয়াদেশ দিয়ে পণ্য ওয়্যারহাউজে মজুদ হবে। এজন্য তারা কিছুটা ধীরে চলো নীতিতে চলে গেছে। আমাদের কাছে ক্রয়াদেশ নিয়ে আলোচনাগুলোও সেই আঙ্গিকেই আসছে।

নিট পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, হঠাৎ করে ১০-১৫ দিন ধরে ক্রয়াদেশ শ্লথ হয়ে গেছে। যে গতিতে ক্রয়াদেশগুলো আসছিল তা কমেছে। ক্রয়াদেশগুলোর গতি এখন কম। সুনির্দিষ্ট করে পোল্যান্ডের ক্রয়াদেশ শ্লথ হয়েছে এবং হচ্ছে। পোল্যান্ডের বিপুল পরিমাণ পোশাক পণ্য বাংলাদেশ থেকে যায়। এসব পণ্যের বেশির ভাগই পোল্যান্ড থেকে রাশিয়া যেত। পোল্যান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়ায় কোনো পণ্য পাঠাবে না। এতে ক্ষতি পোল্যান্ডেরই। কারণ পণ্য আমদানির অনেক বিকল্প রাশিয়ার আছে। তবে ১০-১৫ দিন ধরে সব ক্রেতাদের ইনকোয়্যারির গতি কম।

কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে ২০২০ সালে ২০১৯-এর তুলনায় পোশাক রফতানি কমে যায় ১৭ শতাংশ। এরপর ২০২১ সালে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয় ৩০ শতাংশের বেশি। রফতানি হয় ৩৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেও। জানুয়ারি মাসে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৪২ দশমিক ৭১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS