দেশে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হচ্ছে, তার তুলনায় রপ্তানির হার কমে আসায় আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ডলার সংকটের মাঝে বেশ চাপে পড়ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশে মোট বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ২০ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এক হাজার ২৯৩ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এ সময় আমদানি হয়েছে এক হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারের পণ্য। এতে করে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১৮১ কোটি ৮০ লাখ (১ দশমিক ৮১ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১১১ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ২০ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।
মূলত আমদানিতে বিভিন্ন নীতিগত শর্ত দেওয়ার কারণে দেশে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি কিছুটা কমছে। চলতি হিসাবের পরিস্থিতিও উন্নতি হয়েছে। তবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে আর্থিক হিসাবে। এর মূল কারণ, যে হারে দেশে বিদেশি ঋণ আসছে তার চেয়ে বেশি আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের সামগ্রিক লেনদেনেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
দেশের আর্থিক হিসাব গণনা করা হয় বৈদেশিক আর্থিক সম্পদ ও দায় থেকে। এখানে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ, পোর্টফোলিও বিনিয়োগ, অন্যান্য বিনিয়োগ ও রিজার্ভ সম্পদ। বিনিয়োগের ধারা (সম্পদ ও দায়), বিনিয়োগের দলিল (ইকুইটি, বন্ড, নোটস এবং ঋণ) এ হিসাবের আওতায় আসে।
ডলার সংকট কাটাতে নানা উপায়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের জুলাই থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানির শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। একইসঙ্গে তুলনামূলক কম প্রয়োজন বা বিলাসী পণ্যের এলসি খোলার সময় ৭৫ থেকে শতভাগ পর্যন্ত নগদ মার্জিনের শর্ত দেওয়া আছে। এ মার্জিনের টাকা দিয়ে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণও নেওয়া যাবে না। এছাড়া বড় এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে তথ্য নিয়ে তার সঠিকতা যাচাই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ডলার সংস্থান করা ছাড়া ব্যাংকগুলোকে এলসি খুলতে মানা করা হয়েছে। এর প্রভাবে গত অর্থবছরে আমদানি ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, রপ্তানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর্থিক হিসাবে ৩৯২ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঘাটতি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৮৪ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply