সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩০ অপরাহ্ন

হবিগঞ্জ হাওরবাসীর বোবা কান্না ভরা বর্ষায়ও হাওরে পানি নেই

লিটন পাঠান
  • আপডেট : শনিবার, ১৭ জুন, ২০২৩

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের হাওরে পানি নেই জেলার প্রত্যন্ত ভাটি এলাকার হাওরও যেন শুকিয়ে কাঠ। শুধুকি হাওর। নদী নালা, খাল বিলেও নেই পানি দিব্যি মাঠ চষে বেড়াচ্ছে গরু। কোথাও পানি নেই। ফলে কমে গেছে মাছও। আউশ ও বোনা আমন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। বোরো মৌসুমে জমির উর্বরতা নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই তাদের। এ যেন হাওরবাসীর মাঝে এক বোবা কান্না সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার সবচেয়ে ভাটি এলাকা হিসেবে পরিচিত আজমিরীগঞ্জ উপজেলা। একে ভাটি এলাকার রাজধানীও বলা হয়। যার অর্ধেক এলাকাই বছরের অর্ধেক সময় জলমগ্ন থাকে। জেলার সবচেয়ে নিচু ভূমি হিসেবেই পরিচিত এটি। হাওরবেষ্টিত এ উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে সুরমা, কুশিয়ারা, কালনী, কৈখাল, ভেড়ামোহনার মতো  খরস্্েরাতা নদীএছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট নদী।

নালা ও খাল। এ উপজেলার দুই পাশ ঘিরে রয়েছে সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলা। এরপরই ধারাবাহিক ভাবে সবচেয়ে ভাটি বানিয়াচং, লাখাই ও নবীগঞ্জ উপজেলা। এসব উপজেলার দুই তৃতীয়াংশই হাওর বেষ্টিত। প্রতি বছরই এপ্রিল, মে মাসে এসব এলাকার হাওরে পানির দেখা মেলে। আর জুন মাসে ভর বর্ষা থাকে। নৌকায় যাতায়াত করতে হয় হাওরের প্রায় সবগুলো গ্রামেই। বর্ষায় তাদের একমাত্র ভরসাও এটি। আর হাওরের অথৈ পানি যেন এক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়। অভাব হয়না মাছেরও। বর্ষার পানির সাথে বেড়ে উঠে আউশ ও বোনা আমন ধান। হাওরে গেলে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এসবের দেখা মেলে কিন্তু এ বছর পূর্ণ বর্ষার মৌসুমেও হাওরে পানির দেখা মিলছেনা।

কোথাও একফুটা পানি নেই হাওরজুড়ে দিব্যি চষে বেড়াচ্ছে গরু হাওরে নেই আউশ ও বোনা আমন ধানের আবাদ। যে ক’টি জমিতে আউশ ও বোনা আমন আবাদ করেছেন কৃষকরা তাও ফলন হবে কি-না তা নিয়ে সন্দিহান তারা। তাদের মনে শঙ্কা তৈরী হয়েছে হাওরে পানি না এলে জমিতে পলিও আসবেনা। ফলে আগামী বোরো আবাদও ভালো হবেনা। মাছও পাওয়া যাবেনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর আউশ ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৩৬৫ হেক্টর। কিন্তু আবাদ হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার ৩১৯ হেক্টর। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৭১, মাধবপুরে ৫ হাজার ৭শ’, চুনারুঘাটে ৬ হাজার ৬২০, বাহুবলে ৩শ’, নবীগঞ্জে ১ হাজার ৫শ’, লাখাইয়ে ৮শ’, বানিয়াচংয়ে ১ হাজার ৮২৫ ও আজমিরীগঞ্জে ৩ হেক্টর।

বোনা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৪২০ হেক্টর। এর মধ্যে মাধবপুরে ২ হাজার ২শ লাখাই ৮শ’ ও বানিয়াচংয়ে ৪২০ হেক্টর।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামের অরবিন্দু দেব জানান, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর হাওরে পূর্ণ বর্ষা মৌসুমেও পানি হয়নি। অন্য বছর এ সময় হাওরে পানি পরিপূর্ণ থাকে। পানি না হলে জমিতে পলি পড়েনা। পলি না হলে বোরো ফসলও ভালো হয়না একই গ্রামের আমির হোসেন জানান, এ বছর বৃষ্টি নেই। অন্য বছর এ সময় হাওর ভর্তি পানি থাকে। পানি না হলে জমির বল হয়না। হাওরে যদি পানি না থাকে তাহলে যেমন ধান হবেনা তেমন মাছও হবেনা তাবিদুর রহমান রহমান বলেন।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলাটি জেলার সবচেয়ে ভাটি এলাকা এখন মৌসুমে আমাদের হাওরে পূর্ণ পানি থাকার কথা। পানি সময়মতো না হওয়ায় হাওরে দিব্যি গরু ঘাস খায়। বানিয়াচং উপজেলার প্রথম রেখ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, এখন মূলত আমাদের বর্ষাকাল। কিন্তু আমাদের এলাকায় এখনও আল্লাহ্ দেননি। এখন ইরি ধান উঠতে শুরু করেছে। পানি থাকলে এ ধান আরও লাগাতে পারতে পারতাম। লাকি ধানও রোপন করতে পারতাম। কিন্তু পানির অভাবে আমরা কিছুই করতে পারছিনা ছিলাপাঞ্জা গ্রামের মো. শামীম বলেন, পানির অভাবের কারণে জমিতে ধান করা যায়নি। কোন ধানই পানির অভাবের কারণে করা যাচ্ছেনা আমরা।

হাওরের মানুষ কিভাবে বাঁচব জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. আশেক পারভেজ বলেন, এ বছর আসলে সারা দেশের মতো হবিগঞ্জেও বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। অন্যান্য বছরের মতো আউশ মৌসুমে যে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা তা এবার হয়নি। ফলে আউশের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু এখন বৃষ্টি হচ্ছে তাই কৃষকরা রোপা আমনের বীজতলা গুলো প্রস্তুত করবে। তবে আমনের ক্ষেত্রে এটি সমস্যা হবেনা বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আউশের লক্ষ্যমাত্রা আমরা আশাকরি আমনের আবাদে পুষিয়ে নিতে পারবো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS