শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৩:০৩ অপরাহ্ন

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে বাংলাদেশে ফিরলেন জাহিদ আমিন

তানজিম হাসান পাটোয়ারী
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১১৬৪ Time View

বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিংয়ে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি সারা বিশ্বে প্রথম স্থান দখল করে আছে সেটি হলো যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। যুগ যুগ ধরে দেশ-বিদেশের শীর্ষ মাধাবীরাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। অন্যান্য দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ থেকেও অনেক শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

এমনই এক শিক্ষার্থী হলেন জাহিদ আমিন যিনি সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। যোগ দিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে। এছাড়া তিনি কাজ করছেন ‘উত্তরণ’ নামে বাংলাদেশী একটি এনজিওতে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত কথা হয় জাহিদ আমিনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইকোনোমিক নিউজ টোয়েন্টিফোর এর নিজস্ব প্রতিবেদক তানজিম হাসান পাটোয়ারী।

তানজিম: কেমন আছেন?

জাহিদ: ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

তানজিম: আমিও ভালো আছি। আপনি তো সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। অক্সফোর্ডে যাত্রাটি কেমন ছিল আপনার?

জাহিদ: আমি মূলত ওয়েইডেনফেল্ড এন্ড হপম্যান ট্রাস্ট স্কলারশিপের মাধ্যমে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিলাম। ২০২১ সালে আমার মাস্টার্স শুরু হয় যা শেষ হয় ২০২২ সালে।

তানজিম: ওয়েইডেনফেল্ড এন্ড হপম্যান ট্রাস্ট স্কলারশিপটি খুবই নামকরা একটি স্কলারশিপ। এ স্কলারশিপটি পাওয়ার জন্য আপনাকে কি কি করতে হয়েছিল?

জাহিদ: এ স্কলারশিপটি মূলত নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা আছে এমন ব্যক্তিদের দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যে কোনো একটি সংগঠনে দুই বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। যেহেতু আমার সেসময় একটি এনজিওতে দুই বছর কাজের অভিজ্ঞতা ছিল তাই এটি আমাকে স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছিল।

তানজিম: আপনি ব্যাচেলর পর্যন্ত বাংলাদেশে পড়ালেখা করেছেন। এরপর যখন অক্সফোর্ডে গেলেন সেখানকার পড়ালেখার সাথে মানিয়ে নিতে আপনার কি কোনো সমস্যা হয়েছিল?

জাহিদ: আসলে ইউরোপ কিংবা আমেরিকান শিক্ষার্থীদের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীরা বেসিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে। তাই দেখা যায় তারা দুই ঘণ্টা পড়ে যেটা আয়ত্ত করতে পারে আমাদেরকে সেটা সাত থেকে আট ঘণ্টা পড়তে হয়।

তানজিম: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে অক্সফোর্ডের শিক্ষাব্যবস্থার পার্থক্য কোন কোন জায়গায় আছে বলে আপনি মনে করেন?

জাহিদ: বেশ কিছু পার্থক্য আছে। বাংলাদেশে একাডেমিক পড়ার উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে অক্সফোর্ডে একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি গবেষণা এবং প্রায়োগিক বিষয়ের উপরও জোর দেওয়া হয়। সেখানে পড়াকালীন সময়ে আমাদেরকে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের পার্লামেন্ট মেম্বারদের সাথে মিটিং করানো হয়েছিল তারা কোনো বিষয়ে কীভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেটি জানার জন্য। তাহলে বুঝতেই পারছেন তাদের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা উন্নত।

তানজিম: গবেষণার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় ফান্ডিং এর প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনাকে কতটা সহায়তা করেছিল?

জাহিদ: সব ধরনের সহযোগিতাই পেয়েছিলাম সেখানে। অক্সফোর্ড খুবই গবেষণা বান্ধব একটি বিশ্ববিদ্যালয়। তারা গবেষণাকে সবসময় কদর করে।

তানজিম: আপনি স্কলারশিপ নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন এবং প্রায় এক বছর ছিলেন। এ স্কলারশিপের আওতায় আপনার কোন কোন খরচ বহন করা হয়েছিল?

জাহিদ: সব ধরনের খরচই পূরণ হয়ে যেত। সেখানে থাকা থেকে শুরু করে খাবারের খরচ, যাতায়াত খরচ, ভ্রমণ ফি সহ সব ব্যয়ই এ স্কলারশিপের আওতায় ছিল। যার কারনে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে কোনো ব্যয় বহন করতে হয় নি।

তানজিম: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা পড়ালেখা করেন তাদের বেশিরভাগই পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য কিংবা অন্য কোনো উন্নত দেশে অত্যন্ত উচ্চ বেতনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। কিন্তু আপনি বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। এটি বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রাপ্তি। আপনার বাংলাদেশে ফিরে আসার পেছনে কারণ কি ছিল?

জাহিদ: প্রথমত দেশের প্রতি ভালোবাসা। আমি মনে করি যে দেশে আমার জন্ম এবং যে দেশে আমি বড় হয়েছি সে দেশের প্রতি আমার কিছু দায়িত্ব আছে। আর সে দায়িত্ববোধ থেকেই মূলত দেশে ফিরে এসেছি। এছাড়া নিজ দেশের প্রতি একটি টান তো আছেই। আর আমি সবসময় চাই নিজ দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে। আর এসব কারণে বাংলাদেশে ফিরে আসা।

তানজিম: আপনি সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। সেখানে যোগদানের পেছনে কি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো প্রচেষ্টা ছিল?

জাহিদ: আমি মূলত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের আহবানে সেখানে যোগদান করি। কারণ সেখানকার শিক্ষকরাও চেয়েছিলেন আমি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে সেখানকার গবেষণার পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখি।

তানজিম: আপনি বর্তমানে ‘উত্তরণ’ নামে একটি এনজিওতেও কর্মরত আছেন। সেখানে আপনি কি ধরনের কাজ করেন?

জাহিদ: এনজিওটি মূলত একটি সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠন যেটি আমার নিজ জেলা সাতক্ষীরায় অবস্থিত। সেখানে আমি মূলত প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ বিভিন্ন বিপর্যয়ের সময় অসহায় মানুষের সেবায় কাজ করে থাকি।

তানজিম: বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে পড়তে গেছেন অথবা আগামীতে যাবেন তাদের উদ্দেশ্যে কি আপনি কিছু বলতে চান?

জাহিদ: অবশ্যই। আমি বলব উচ্চশিক্ষার জন্য আমরা যেখানেই যাই না কেন আমাদের নিজ দেশকে যেন ভুলে না যাই। কারণ আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ, কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক যাদের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের পড়ালেখা  হয়েছে, তাদেরকে কোনোভাবেই আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। বরং যদি সম্ভব হয় তাহলে উচ্চশিক্ষা শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসুন। কারণ এতে করে বাংলাদেশে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হবে যা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে আরো এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

তানজিম: নিশ্চয়ই। আশা করি আপনাদের মতো মেধাবীরা আগামীতে বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষে বাংলাদেশে ফিরে এসে দেশের হাল ধরবে এবং দেশকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে ভূমিকা রাখবে। এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

জাহিদ: ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS