শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৪:১১ অপরাহ্ন

বানিয়াচংয়ে মাদ্রাসা ছাত্র হত্যার রহস্য উন্মোচন

লিটন পাঠান
  • আপডেট : সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৩

হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বড়ইউড়ি ইউনিয়নের কদুপুরে চাঞ্চল্যকর মাদ্রাসা ছাত্র বিলাল মিয়া হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। সেই সাথে ঘাতক আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় এমন একটি লোমহর্ষক ঘটনার রহস্য উদঘাটন করায় বানিয়াচং থানা পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। গত শনিবার বিকেলে লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমল-৪ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় জবানবন্দির বরাত দিয়ে বানিয়াচং থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব জানান, গত ২৬জানুয়ারি কদুপুর গ্রামের ধানের জমি থেকে বিলাল মিয়া (১০) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ সে নোয়াগাঁও গ্রামের ঈমান উদ্দিন ওরফে গয়বুল্লাহ’র পুত্র। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। এরপর থেকে শুরু হয় একটি কু-লেস মামলার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের তদন্ত গত ২৫ জানুয়ারি কদুপুর বাজারে তাফসিল মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

নিহত বিলালের বাড়ি নোয়াগাঁও হলেও সে তার পিতার সাথে নানার বাড়ি কদুপুরে থেকে স্থানীয় কদুপুর মিছবা-উল-উলুম মাদ্রাসায় ১ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। ওইদিন রাতে কদুপুর মিছবা-উল-উলুম মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষে কদুপুর বাজারে মেলা বসে। বিলাল আহমদ উক্ত মেলাতে সন্ধ্যা অনুমান ৬ টার দিকে খেলনা কিনার জন্য আসে। প্রতিবেশী নোয়াগাঁও গ্রামের লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) এর মিশুক (অটো রিক্সা) দেখে তাতে উঠার বায়না ধরে। কিন্ত সেই বায়নাই যেন তাহার মৃত্যুর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) এর মাথায় খারাপ বুদ্ধি আসে। মেলাতে চটপটি খেতে দেখে কদুপুর গ্রামের জড়িত ৩ শিশু বয়স যথাক্রমে (১৭), (১৬), (১৬)। মিশুক চালক লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) পরিকল্পনা করে উক্ত ৩ শিশুর সাথে বলাৎকার করার। অতঃপর লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) নিহত বিলাল আহমদ (৯) কে তার সাথী জড়িত ৩ শিশুসহ বিলালকে জোরপূর্বক মিশুক গাড়ীতে উঠায়। আর লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) তার মিশুক চালিয়ে কদুপুর গ্রামের জনৈক নুর মিয়ার বাড়ীর পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়।

সেখানে লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) এর মিশুক (অটো রিক্সা) থেকে জড়িত ৩ জন শিশু নিহত বিলাল আহমেদ (৯) কে নামিয়ে জোর পূর্বক পরিহিত প্যান্ট খুলে ফেলে। পরে লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) উক্ত প্যান্ট ঢিল মারিয়া নুর মিয়ার পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। আসামী লায়েক আহমদ হৃদয় এবং জড়িত ৩ জন শিশু জোরপূর্বক নিহত বিলালকে ধরে আহমদীয়া মক্তবের মালিকানাধীন শুকনো জমিতে নিয়ে যায়। সেখানে আসামী লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) প্রথমে বিলালকে জোরপূর্বক বলাৎকার করে। এরপর ৩ শিশুও পালাক্রমে বিলালকে বলাৎকর করে। এক পর্যায়ে বিলাল উক্ত ঘটনার বিষয়টি বাড়ীতে গিয়ে বিচার দিবে বললে আসামী লায়েক আহমদ হৃদয় ও জড়িত ৩ জন শিশুদেরকে জানায়। এতে হৃদয়সহ ৩ শিশু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং বিলালকে খুন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এক পর্যায়ে আসামী লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) নিহত বিলাল আহমেদ (৯) কে গলায় ও নাকে টিপ দিয়া ধরে। জড়িত ৩ শিশু ভিকটিমের হাতে পায়ে ধরাধরি করে ঘটনাস্থলে বোরোধানি জমিতে পানি ও কাঁদার মধ্যে নিয়া যায়।

সেখানে আসামী লায়েক আহমদ হৃদয় (২০) নিহত বিলালের ঘাড়ে দুই হাত দিয়া চাপ দিয়া ধরে কাদার মধ্যে মুখমন্ডল ঢুকাইয়া রাখে অন্য ৩ শিশু ভিকটিম, বিলাল আহমদকে হাতে পায়ে ধরে রাখে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ গোপন করার জন্য ৪ জন মিলে লাশের উপরে কাদা দিয়া ঢেকে রাখে। তারা ৪ জন লাশের পাশে বোরো জমির পানিতে হাত-মুখ ধুয়ে পূণরায় মিশুক গাড়ী চড়ে কদুপুর বাজারে চলে আসে এবং তারা তাদের নিজ নিজ বাড়ীতে চলে যায়। পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি ভোর পর্যন্ত ঘাতক হৃদয়সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। পরে তারা পুলিশের নিকট ঘটনার স্বীকার করলে এবং আদালতেও হৃদয় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়। পুলিশ নুর মিয়ার পুকুর সেচ দিয়ে নিহত বিলাল আহমদ এর পরিহিত প্যান্ট এবং অপহরণ কাজে ব্যবহৃত আসামী লায়েক আহমদ হৃদয়ের চালিত মিশুক (অটো রিক্সা) জব্দ করে এবং ৪ জনকে আদালতে সোপর্দ করলে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS