রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় হরিজন জনগোষ্ঠীর জীবন-মানউন্নয়নে হরিজন সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৮৯ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জন্মগতভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ স্বাধীন এবং পূর্ণ মানবাধিকার ও সমমর্যাদার অধিকারী। বাংলাদেশের সংবিধানে সমতা, সমান সুযোগ এবং বৈষম্য বিরোধী বিধানাবলী লিপিবন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। বাংলাদেশে বসবাসরত এক বিশাল জনগোষ্ঠী যারা হরিজন নামে পরিচিত, যারা জাতিপ্রথা, পেশাগত কারণে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বহুমুখী ঘৃণা-বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার হন।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এই ক্ষনে দাড়িয়ে সুবিধা বঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া অনগ্নশর হরিজন জনগোষ্ঠীকে তাদের অধিকার ও মর্যাদার কথা বলতে হচ্ছে। বিশ্বের সকল বঞ্চিত এবং সচেতন জনগোষ্ঠীর সাথে একাত্মতা জানিয়ে, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের আয়োজনে এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর সহায়তায় আজ ২৮ ডিসেম্বর 2022 রোজ বুধবার, সকাল ১০.০০ টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং ১১.০০ টায় তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট পেশাজিবী মানুষ হিসেবে প্রায় ১৫ লক্ষ হরিজন জনগোষ্ঠীর বসবাস। অথচ রাত্রিয় ও সামাজিক বৈষম্য, অস্পৃশ্যতা, ঘৃণা, পেশাচ্যুতি, ভূমিদখল, অবহেলা, নিরাপত্তাহীনতা, রাষ্ট্রীয় পরিষেবা না পাওয়া ইত্যাদি নানাবিধ অপ্রাপ্তি এই বিশাল সংখ্যক হরিজনদের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্নকে এই বিংশ শতাব্দীতেও বাধাগ্রস্থ করে চলেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, শহর, বন্দর কিংবা গ্রাম-গঞ্জে যারা পেশাগতভাবে আবর্জনা পরিষ্কার ও মলমূত্র নিষ্কাশনের কাজে নিয়োজিত, কিন্তু শুধুমাত্র পেশাগত কারণে এই হরিজনরা সামাজিকভাবে নিগৃহীত, মর্যাদাহীন এবং বঞ্চিতদের মধ্যে বঞ্চিত। এদের বসবাস বা পরিবেশ সরেজমিনে দেখলেই মনে হয় এরা গহিন দ্বীপবাসী, তবে এদের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে ডিজিটাল যুগ, মানুষ বহুমুখী শিক্ষায় উন্নত শিখরে পৌচ্ছানোর প্রচেষ্টায় প্রতিযোগিতা করছে ঠিক সেই সময়ে আমরা হরিজন জনগোষ্ঠী আমাদের ন্যায্য অধিকার চাওয়ার কারণে গরম তেলে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাস্তবচিত্র এখানে তুলে ধরতে চাই। ১১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে বিকেলে বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার শান্তাহার শহরে এশিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁর কর্মচারীরা হরিজন যুবক মিঠুন বাঁশফোরকে মারধর করে কড়াইয়ের গরম তেলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে তার ডান হাত ঝলসে যায়। মিঠুন কে প্রথমে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসা নেওয়া হয়। বর্তমানে বিভিন্ন সুত্রে জানতে পারছি মামলা হয়েছে এবং একজন আসামী গ্রেফতার হয়েছে। একটা স্বাধীন রাষ্ট্রে। হরিজন মানুষের প্রতি এই বর্ণবাদী আচরণ রীতিমতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। স্বাধীন রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সমান অধিকার। এখানে হরিজন সম্প্রদায়কে হোটেলে অভিগ্রমতা নিষিদ্ধ করে রাখা দন্ডনীয় অপরাধ।

আমাদের সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র বিমোচনের জন্য এসডিজি বাস্থবায়নে প্রশংসার খেতাবে ভূষিত হয়েছে। এসডিজিতে বলা আছে কাউকে পিছিয়ে রেখে উন্নয়ন নহে কিন্তু আজও কিছু জনগোষ্ঠী উন্নয়নের আওতায় আসছে না। তার পরেও অভিনন্দন জানাতে হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কণ্যা মানবতার মা জননী বিশ্বের শান্তির দূত জননেত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি এই পিছিয়েপড়া হরিজন জনগোষ্ঠীর জীবন-জিবিকার কথা চিন্তা করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদের সরকারি নিয়োগে জাত হরিজনদের জন্য ৮০% কোটা বরাদ্ধ রেখে প্রজ্ঞাপন দিয়েছেন। কিন্তু নিয়োগ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কৌশলে অর্থ বানিজ্য লিখিত পরিক্ষার বিভিন্ন কৌশল করে নিয়োগ বঞ্চিত করছে। যেখানে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা বা সে জাত হরিজন থাকলেও নিয়োগ হচ্ছেনা। নতুন করে আউটসোসিং এর নিয়োগে রমরমা বানিজ্য করে চলেছে রাষ্ট্রিয় মোদতপুষ্ঠ কিছু দলীয় লোকের, দৌরাত্ব আউটসোসিং পরিচ্ছন্নতাকর্মী

পদে নিয়োগ নিতে হলে গুনতে হবে আশি হাজার হতে লক্ষ টাকা। নির্ধারিত মজুরী প্রদানে করা হয় বঞ্চিত এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং নিয়মিত মাসিক বেতন প্রদান করা হয়না।

অন্যান্য জনগোষ্ঠীর নিজস্ব মাথাগোঁজার ঠাই থাকলেও ভুমিহীন হরিজন জনগোষ্ঠীর নিজস্ব কোন জায়গাজমি বা ঘরবাড়ি নেই। হরিজন জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ সিটিকর্পোরেশন, পৌরসভার কলোনিতে বা রেলওয়ে লাইনের পাসে বসবাস করে। ১৬ বর্গফুটের একটি ঘরে বাবা-মা, ছেলে, ছেলের বৌ, মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনিসহ পরিবারের ৭/৮ জন মানবেতর ভাবে বসবাস করে থাকে। রাষ্ট্র কর্তৃক কিছু আবাসনের কাজ চলমান কিন্তু জাত হরিজনরা সংকার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে কারন হরিজনরা তিন পুরুষকাল একই ঘরে জন্মগ্রহন করে মৃত্যুবরন করেছে এখন নতুন আবাসন হলে যাদের চাকুরি আছে তারা আবাসন পাবে যাদের চাকুরি নাই তারা আবাসনে থাকতে পারবে না, এ উন্নয়ন কেমন আমাদের সংকায় রেখেছে। পান হতে চুন খসলেই পৌরসভা বা সিটিকর্পোরেশন কর্তৃক হুমকিধামকি ও ছাটাই হতে হয়। দেশের সংবিধানের ১১ ধারায় বলা হয়েছে- “প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গনতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে। কিন্তু হরিজন জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ কোথায়?

গোপীবাগ রেলওয়ে হরিজন কলোনী প্রায় ৫০ বছর যাবৎ প্রায় ১২০ টি পরিবার বসবাস করে আসছিল। ২০১৯ সালের দিকে রেলওয়ে স্মপ্রসারণ এর জন্য হরিজন কলোনী উচ্ছেদের করার জন্য আবাসনগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। বর্তমানে হরিজনরা যততত্রভাবে বসবাস করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না, আজ গোপীবাগ রেলওয়ে হরিজন কলোনীর প্রায় ৩০০ মানুষ আজ গৃহহীন। তাদের স্থায়ী আবাসনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর আমাদের আবেদন।

হরিজন জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার অভাব থাকার কারনে বিকল্প কোন পেশায় হরিজনরা যেতে পারছেনা একদিকে বৈষম্য পিছু ছাড়ছে না। বর্তমানে শিক্ষার হার বাড়াতে অন্যান্য পদে মেধা থাকা সত্যেয় ছাত্র/ছাত্রীরা নিয়োগ বঞ্চিত হয়। স্কুল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সেফটিনেট প্রোগ্রামে বেদে দলিত হরিজনদের ভাতা সমূহতে বঞ্চিত করা হয়। বাংলাদেশের ৩২০টি পৌরসভাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মাসিক বেতন এখনো ১৪০০/= (চৌদ্দশত ) হতে ৪০০০/= (চার হাজার) টাকা। বর্তমানে বাজার লক্ষ্য করলে দেখা যায় কি মানবেতর ভাবে বেচে আছে এই মানুষ গুলো অথচ নিতি নির্ধারকগণ ঘুরে তাকান না।

দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে এদেশের নাগরিক হিসেবে হরিজন জনগোষ্ঠীর মানুষেরা উন্নয়নের অংশিদারিত্ব হতে পারে, একটি উন্নত রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সম-অধিকার নিয়ে বাঁচতে চায়। “বৈষম্য নিপাত যাক-মানবতা মুক্তি পাক” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে উপস্থিত সূধী মন্ডলী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।

বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় হরিজন জনগোষ্ঠীর জীবন-মানউন্নয়নে হরিজন সমাবেশ এর মূল দাবী:

১. বর্ণ বৈষম্য বিলোপ আইন দ্রুতপাশ করতে হবে এবং আইনটি কার্যকরী প্রচারানার জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে:

২. হোটেল রেস্তারয়া হরিজনদের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না, তাদের অধিকার দিতে হবে?

৩. বাংলাদেশে সকল জেলা শহর, উপজেলা শহর, ইউনিয়ন, বিভিন্ন হাটবাজার, গ্রাম-গঞ্জসহ সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং বসবাসরত হরিজনদের স্থায়ী ও আধুনিক জীবন যাপনের সকল সুবিধানহ বাসস্থানের বাস্তবায়ন চাই:

৪. সরকারি-বেসরকারী, শায়ত্বশাসিত, সিটিকপোরেশন, পৌরসভাসহ সকল প্রতিষ্ঠানে ৮০% কোটার যথাযথ বাস্তাবায়ন এবং শিক্ষাগত যোগ্যাত্যা অনুযায়ী সকল হরিজনদের চাকুরী দিতে হবে;

৫. পরিচ্ছন্নকর্মী পদের লিখিত পরিক্ষা শিথীল করতে হবে;

৬. আউটসোর্সিং পদ্ধাতি পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS