রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

২০ হাজার টাকা চুক্তিতে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে বৃদ্ধাকে হত্যা করেন নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৩৭ Time View

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ঢাকার অদূরে সাভারে হাজেরা খাতুন নামের এক বৃদ্ধাকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন এক নারী। পুলিশ বলছে, মমতাজ পারভীন নামের ওই নারী বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে হাজেরা খাতুনের বাসায় গিয়েছিলেন। আরেক ভাড়াটে ও তাঁর প্রবাসী ‘স্বামী’ মমতাজকে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে হাজেরাকে হত্যার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন।

নিহত হাজেরা খাতুনের বয়স ৭৩ বছর। আর মমতাজ পারভীনের বয়স ৪৭ বছর। পুলিশ বলছে, হাজেরাকে হত্যার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন আইয়ুব নামের লন্ডনপ্রবাসী এক ব্যক্তি ও তাঁর ‘স্ত্রী’ লাবণ্য। লাবণ্য হাজেরার বাসায় ভাড়া থাকেন। তাঁদের পরিকল্পনায় হাজেরাকে হত্যা করতে পারভীনকে নিযুক্ত করেন শহীদুল ইসলাম নামের এক যুবক।

গত ২৮ জুন সাভারের দক্ষিণ সবুজবাগ এলাকায় নিজ বাড়িতেই খুন হন হাজেরা বেগম। এ ঘটনায় ৬ ও ৭ ডিসেম্বর সাভার থেকে পারভীন ও শহীদুলকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। পারভীন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলেছে পুলিশ। তবে লন্ডনপ্রবাসী আইয়ুব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি গ্রেপ্তার হওয়া দুজন।

পুলিশ বলছে, পারভীন সেলাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অসুস্থ স্বামী ও সন্তান নিয়ে সাভারের ডোগরমোড়া এলাকায় থাকেন। সাভারে মুঠোফোন মেরামতের দোকান রয়েছেন শহীদুলের। মুঠোফোন মেরামত করতে গিয়ে শহীদুলের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর।

পারভীন জবানবন্দিতে বলেন, শহীদুলের মাধ্যমে লন্ডনে থাকা আইয়ুবের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। হাজেরা খাতুনের বাসায় ভাড়া থাকতেন আইয়ুবের স্ত্রীর পরিচয় দেওয়া লাবণ্য নামের এক নারী। ওই নারীকে বাসা ছেড়ে দিতে বলেছিলেন হাজেরা খাতুন। লাবণ্য যেন হাজেরা খাতুনের বাসায় থাকতে পারেন, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে শহীদুলকে দায়িত্ব দেন আইয়ুব। এ বিষয়ে কথা বলতে পারভীনকে হাজেরার কাছে পাঠান শহীদুল। লাবণ্যকে বাসায় থাকতে দিতে রাজি না হলে হাজেরাকে হত্যা করতে বলা হয় পারভীনকে। এই কাজের জন্য তাঁকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

জবানবন্দিতে পারভীন আরও বলেন, ঘটনার আগের দিন আইয়ুবের ‘স্ত্রী’ লাবণ্য তাঁকে মুঠোফোনে বলেন, ওই বাড়িতে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা আছে। এ জন্য বোরকা পরে মুখ ঢেকে আসবেন। কোনোভাবেই যেন ক্যামেরায় মুখ না দেখা যায়। পরদিন হাতে গ্লাভস, বোরকা ও ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ওই বাসায় যান তিনি। লাবণ্যকে বাসা ছাড়তে না দেওয়ার কথা বলতেই হাজেরা খাতুন রেগে যান। এ সময় পারভীন সঙ্গে থাকা দড়ি দিয়ে হাজেরার হাত বাঁধেন, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেন। তারপর হাজেরা খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসেন।

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহহিল কাফী বলেন, খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত পারভীন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি যে কারণে খুনের কথা বলেছেন, সেটি খুবই তুচ্ছ। তবে হাজেরাকে পরিকল্পিতভাবেই খুন করা হয়েছে। টাকার জন্য তিনি খুন করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, হাজেরা খাতুনকে হত্যায় পারভীন একাই অংশ নিয়েছেন—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ঘটনার পর হাজেরা খাতুনের মুঠোফোন নিয়ে যান পারভীন। সেই মুঠোফোন তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে বোরকা পরিহিত অবস্থায় দেখা যাওয়া নারী পারভীন বলে তাঁর স্বামী নিশ্চিত করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার উপপরিদর্শক হাসান শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে হাজেরা খাতুনকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন পারভীন। তবে খুনের পর তিনি টাকা পাননি বলে জানিয়েছেন। হাজেরা খাতুনকে খুন করতে যাওয়ার আগে গ্লাভস, দড়ি ও স্কচটেপ কিনে দিয়েছিলেন শহীদুল।

খুনের কারণ নিয়ে সন্দেহ পরিবারের
হাজেরা খাতুন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করতেন। ২০১১ সালে তিনি অবসরে যান। স্বামী বেঁচে নেই। তাঁর দুই মেয়ে স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে অন্যত্র থাকেন। ওই বাড়ির তিনতলায় তিনি একাই থাকতেন। হাজেরা খাতুন খুনের ঘটনায় তাঁর মেয়ে তানিয়া আক্তার সাভার থানায় অজ্ঞাত এক নারীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

হাজেরাকে হত্যার যে কারণ পারভীন বলেছেন, এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তানিয়া আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে পারভীন বাড়িতে ঢুকে তাঁর মাকে খুন করেছেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই তাঁর। কারণ, এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন। তবে হত্যার কারণ সম্পর্কে পারভীন যে কথা বলছেন, সেটি তাঁদের বিশ্বাস হচ্ছে না। এটি বানানো গল্প বলেই তাঁদের মনে হয়েছে। যে ভাড়াটিয়া নারীকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, ওই নারীর পরিবার স্বেচ্ছায় বাসা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS