নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শেরপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৮ হাজার ৩৪০ কেজি চালসহ গোলাম মোস্তফা (৫৫) নামে আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের মাগুড়াতাইর সড়ক থেকে পুলিশ চালগুলো জব্দ করে।
গ্রেপ্তার গোলাম মোস্তফা শেরপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি শেরপুর পৌর শহরের বারোদুয়ারি হাটখোলা মহল্লার বাসিন্দা। শেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে গোলাম মোস্তফা বর্তমানে দলীয় কোনো পদে নেই। গোলাম মোস্তফা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জব্দ করা চাল বর্তমানে শেরপুর থানা–পুলিশের হেফাজতে আছে। চাল জব্দের ঘটনায় আজ শুক্রবার দুপুরে শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন বিশেষ ক্ষমতা আইনে থানায় মামলা করেছেন। এই মামলায় গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ মামলায় আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
মাগুড়াতাইর এলাকার দুজন বলেন, গতকাল গভীর রাতে তাঁদের গ্রামের পাকা সড়ক দিয়ে চালের বস্তাবোঝাই দুটি নছিমন খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাঁজর বাজার থেকে শেরপুর শহরের দিকে যাচ্ছিল। চালের বস্তা দেখে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হলে তাঁরা বিষয়টি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানান। পরে শেরপুর থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চালের বস্তাগুলো জব্দ করে।
এসআই শাহাদাত প্রথম আলোকে বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২৭৮ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। প্রতিটি বস্তায় ৩০ কেজি করে চাল ছিল। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, খামারকান্দি ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক মো. শাহজামালের নামে এসব চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। এসব চাল গভীর রাতে কেন শেরপুর শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তা মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
পরিবেশক শাহজামাল বলেন, ৭১৯টি কার্ড তাঁর আওতায় রয়েছে। গত ২৯ ও ৩০ নভেম্বর তিনি ৬৩৪ জন কার্ডধারী ভোক্তার মধ্যে ১৫ টাকা কেজি হিসাবে এই চাল বিক্রি করেছেন। তাঁর কাছে আরও ৮৫টি কার্ডের চাল এখনো মজুত রয়েছে। ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব চাল তালিকাভুক্ত ভোক্তাদের মধ্যে বিক্রি করা হবে।
জব্দ করা চালের বিষয়ে শাহজামাল বলেন, জব্দ হওয়া চাল কোনো ভোক্তারা স্থানীয় ফড়িয়াদের (চাল ক্রেতা) কাছে বিক্রি করে থাকতে পারে। তবে ওই চাল তিনি বিক্রি করেননি।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর গোলাম মোস্তফা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, তিনি স্থানীয় বাজারে চাল কেনাবেচা করেন। তবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কেনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। মাগুড়াতাইর গ্রামের সড়কে চাল আটকের সংবাদ পেয়ে তিনি রাতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন-এ-কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, দুস্থ ও দরিদ্র পরিবারের কাছে এসব চাল বিক্রির করার নির্দেশ রয়েছে। যেসব দরিদ্র পরিবার এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত, শুধু তারাই এই চাল কেনার সুযোগ পায়। তবে পরিবেশকদের কাছ থেকে চাল কেনার পর ভোক্তারা ওই চাল আবার বিক্রি করেছেন, এমন কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকার বলেন, চাল জব্দের ঘটনায় গোলাম মোস্তফাসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। গোলাম মোস্তফাকে আজ বিকেল চারটার দিকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS