শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪১ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী রূপপুরে দ্বিতীয় পারমাণবিক চুল্লিপাত্রের উদ্বোধন করলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২
  • ১৫৮ Time View

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটে রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল (আরপিভি) বা পারমাণবিক চুল্লিপাত্র স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাজের উদ্বোধন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি বা নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনকাজের অনুমতি প্রদান করছি। জাতির পিতা আমাদের এই অঞ্চলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালে এখানে দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। একটা পশ্চিম পাকিস্তানে, একটা আমাদের দেশে। জমিও ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলো আমাদের অঞ্চলে আর নির্মাণ করেনি পাকিস্তানি শাসকরা। বরং দুটিই তারা নিজ দেশে নিয়ে যায়। ফলে আমরা পূর্ব বাংলার মানুষ বঞ্চিত হই।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা দেশের টাকা দিয়ে সমস্ত গ্যাস ফিল্ড ক্রয় করেন। ওই সময় আমাদের যখন দুরবস্থা, সেই সময়ও তিনি ভোলেননি যে এই সম্পদ বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ। আমাদের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদসহ সব সম্পদ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য নিশ্চিত করে দিয়ে যান। রাষ্ট্রের মালিকানা নিশ্চিত করেন। সংবিধানের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে বিদ্যুৎ দেওয়াও জীবনমান উন্নত করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেও আলোচনাও করেছেন। কিন্তু তিনি তা শেষ করে যেতে পারেননি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশন প্ল্যান্ট আমরা প্রণয়ন করি। এ বিষয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী সাদেক সাহেবের নেতৃত্বে আমি একটি কমিটিও তৈরি করে দিয়েছিলাম। কমিটি ভিয়েনাসহ অনেক জায়গা যায়। আমরা অনেক কাজ এগিয়ে নিয়ে আসি, নীতিমালা তৈরি করি। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে জমি দেখে যায়। এরপর ২০০১ সালে ক্ষমতায় না আসতে পারায় এ কাজ আর এগোয়নি। বিএনপি-জামায়াত জোটও এসব বিষয়ে কোনও কাজ করেনি।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান, রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর। ঈশ্বরদীর জনপ্রতিনিধি, পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কেন্দ্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটম ও এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ।

উল্লেখ্য, রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল হলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূলযন্ত্র। এর ভেতরে ইউরেনিয়াম থেকে শক্তি উৎপাদন হয়। যা কাজে লাগিয়ে তৈরি হয় বিদ্যুৎ। পারমাণবিক চুল্লিপাত্র স্থাপনের আগে রিঅ্যাক্টর ভবনের বিভিন্ন স্তরের অবকাঠামোসহ সংশ্লিষ্ট পর্যায়গুলো এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। ৩৩৩ দশমিক ৬ টন ওজনের ভিভিইআর-১২০০ রিঅ্যাক্টর ভেসেল প্রস্তুত করতে দুই বছরের বেশি সময় লাগে। এ রিঅ্যাক্টর ভেসেল কৃষ্ণসাগর ও সুয়েজ খাল হয়ে ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের মোংলা বন্দরে আসে। এ রিঅ্যাক্টর ভেসেল পরিবহনে সময় লাগে দুই মাসের বেশি।

২০১৭ সালের নভেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের মূল স্থাপনা নির্মাণের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রয়েছে রাশিয়া। প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের চুল্লি স্থাপন কাজের উদ্বোধন হয়। এখন পর্যন্ত যার অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ।

সরকার বলছে, ২০২৩ সালে রূপপুরের ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে। এরপর সব ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS