নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাঙ্গালীর হাজার বছরের লড়াই সংগ্রামের পথ ধরে ১৯৭১ সাল এ জাতির জীবনে নিয়ে এসেছিল মুক্তির এক চরম উন্মাদনা।
সেই উন্মাদনা ও দেশপ্রেমে উজ্জিবীত হয়ে আমরা সেদিন জীবনের মায়া ত্যাগ করে হাতে তুলে নিয়েছিলাম অস্ত্র । অবতীর্ণ হয়েছিলাম পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে। আমরা একাত্তরের সেই রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। সেই সময় আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষকে আপনজন মনে করে আমাদের মাতৃভূমি ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম অসীম সাহসিকতার সাথে। শত্রুমুক্ত করেছিলাম আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে। এই লড়াইয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগ, দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানী ও এক কোটি মানুষ দেশান্তর হতে বাধ্য হয়েছিল পাক হানাদার ও তার দোসরদের নির্বিচার গণহত্যা ও পাশবিক নির্যাতনের কারণে। সীমাহীন ত্যাগ, স্বজন হারানো শোকবার্তা আর অসীম সাহসীকতার যে দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করেছিলাম তা এক অনন্য ইতিহাসের মর্যাদা লাভ করেছে।
একাত্তরের পাক হানাদার এবং তাদের দোসরদের আত্মসমর্পনের মাধ্যমে আমাদের পূর্ণাঙ্গ বিজয় অর্জিত হয়। স্বাধীন দেশের মানুষ ও রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা বুকভরা আশা নিয়ে দেশ মাতৃকার পুণর্গঠনে আরো ত্যাগ স্বীকারে এগিয়ে আসে। দূর্ভাগ্য দেশপ্রেমিক মানুষের এই আশা শুরুতে স্তিমিত হয়ে পড়ে। ১৯৭২ সালে দেশ পরিচালনায় যে সংবিধান প্রণীত হলো সেখানে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে একটি শব্দও সন্নিবেশিত হলো না। ১৯৭১ এর ১০ই এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের ঘোষনায় অঙ্গীকার করা সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সামান্যতম প্রতিফলন হলোনা। বৃট্রিশ এবং পাকিস্থানী ঔপনিবেশিক আমলের নির্যাতনমূলক আইনকানুন, আদালত ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই বহাল রাখা হলো। বিগত একান্ন বছর ধরে এই সংবিধান চর্চা আর প্রয়োগের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী এক ব্যক্তির স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করছে।
স্বাধীনতার একান্ন বছর পরে আমরা রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা আত্মপীড়ন ও আত্ম-জিঙ্গাসার সম্মুখীন হয়ে আসছি। আমরা কি আজকের এমন একটি বাংলাদেশের জন্য জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছিলাম। আজও যেখানে আইনি বেআইনীভাবে দেশের মানুষকে হত্যা করা হয়, শুম করা হয়, নারীর সম্ভ্রমহানি হয় ক্ষমতার দাপটে। সংখ্যালঘু আর ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠি নিজ জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়। জনগনের ভোটাধিকারকে হরণ করা হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়।
আজও শাষক গোষ্ঠী বৃটিশ-পাকিস্থানী কায়দায় বিভিন্ন চাতুরিপূর্ণ শ্লোগান তুলে জাতিকে বিভক্ত করে তাদের শাসন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার অভিপ্রায়ে। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত শাষক গোষ্ঠি তাদের অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য বিদেশী রাষ্ট্রের কাছে নির্লজ্জ ও বেআইনি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে তুলছে। অসৎ ব্যবসায়ী, আরाনীতিবিদরা জনগনের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে দেশের অর্থনীতিকে চরন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
আমরা জাতি হিসাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াকু ও সাহসী। আমরা এবং আমাদের পূর্বসূরীরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে দুইবার স্বাধীন করেছি। একবার ১৯৪৭ সালে এবং আরেকবার একাত্তরের রক্তা লড়াইয়ের মাধ্যমে। কিন্তু আজ অবধি জনগনের নুন্যতম মৌলিক অধিকার অর্জিত হয় নাই। তারপর আমরা এখনও আশাবাদী। বয়োবৃদ্ধ হয়েও আমরা রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা সকলে মনেপ্রাণে তারুন্যে ভরপুর হয়ে জনগনের মুক্তির জন্য ডাক দিয়ে যাই আরেকটি সর্বাত্মক প্রতিরোধের। আমরা আজ পর্যন্ত হার মানিনি।
-এম এস আই
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply