শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৫ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী: শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র জোরদার হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র জোরদার করা হচ্ছে। ২০১৪’র নির্বাচনের আগে চক্রান্ত করেছে, ২০১৮’র নির্বাচনের আগে করেছে আবার এখন নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে তখন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।

বুধবার (৩ আগস্ট) গণভবনে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির নবনির্বাচিত বোর্ড সদস্যগণ সৌজন্য সাক্ষাতকালে প্রদত্ত ভাষণে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ চতুর্দিক দিয়ে আসবে এবং আসছে। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অপর দিকে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ। তাই এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি ফেলে রাখা যাবেনা। উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই করে রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক দুর্যোগও যেমন আসবে পাশাপাশি যেখানে রাসেলকে (১০ বছরের ছোট্ট) পর্যন্ত খুন করলো আর সেই পরিবার থেকে বেঁচে এসে সরকারে আসলাম সাফল্য এনে দিলাম, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিলাম এটা অনেকেই পছন্দ করবেনা। কাজেই তারা তৎপর আছে সারাক্ষণই। আমি জানি তাদের তৎপরতা অনেক বেশি। তাদের খবরও আমি রাখি, আমারতো অচেনা কেউ নাই। তারা তাদের চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। তিনি করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনকে কেন্দ্র করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃচ্ছতা সাধনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এই স্যাংশনের ফলেই প্রতিটি জিনিষের দাম বাড়ছে এবং আমি জানি না কারা লাভবান হচ্ছে এই যুদ্ধে। লাভবান হচ্ছে অস্ত্র প্রস্তুত ও সরবরাহকারীরা। আর মরছে সাধারণ মানুষ, ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে সাধারণের আজকে কি মানবেতর জীবন। সেটাই সবথেকে দুঃখজনক। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে কার কি লাভ হবে জানি না, তবে বাংলাদেশের মানুষেরতো ক্ষতিই হবে। কারণ, আমরাতো এক একটা জিনিষ টার্গেট করে কাজ করছি। যেমন বলেছি একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। জাতির পিতা যে পদক্ষেপ শুরু করেছিলেন নোয়াখালি থেকে। আমি সেই দায়িত্বটা পালন করে যাচ্ছি। এখন আরো ৫৬ হাজার ঘর আরো তৈরী হচ্ছে (বিনামূল্যে বিতরণের জন্য)। তাহলে এখানে আর কোন ভুমিহীন থাকবে না।

দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন খুঁজে বের করায় সরকারের পাশাপাশি তিনি তাঁর দলের নেতাকর্মীদেরও দায়িত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, তারপরেও আমি আলাদা ভাবে খবর নিচ্ছি। রংপুর সহ বিভিন্ন বিভাগে আমাদের কৃষক লীগ এবং আওয়ামী লীগের যে নেতা-কর্মী রয়েছে তাদেরকে বলেছি- কোথায়কে ভূমিহীন-গৃহহীণ রয়েছে তাদের খোঁজ করে তালিকা করতে হবে। এক একটা এলাকা ধরে আমাকে তালিকা দিতে বলেছি যাতে কেউ বাদ না যায়। আমরা তাদের ঘর করে দেয়ার পাশাপাশি জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেব। কেননা বাংলাদেশে একটা মানুষও আর ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না।

এ সময় তাঁর সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিলেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, কেবল আমরাই নয় এখন ইউরোপের দেশগুলো থেকে শুরু করে আমেরিকা পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় করছে। কাজেই আমরা আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছি ভবিষ্যতে যেন বিপদে না পড়তে হয়। তাছাড়া, ১ কোটি মানুষকে আমরা স্বল্পমূল্যে খাবার দিচ্ছি অর্থাৎ কোন মানুষ যাতে কষ্টে না থাকে সেটাই আমাদের চেষ্টা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি এবং করবেও না। আর অবৈধ ভাবে যারা ক্ষমতা দখলকারি তারাতো ক্ষমতার চেয়ারটা কিভাবে দখলে রাখবে ঐ চিন্তাতেই ব্যস্ত থাকে।

তাঁর কাছে ক্ষমতাটা জনগণকে সেবা করার একটা সুযোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা থাকলে আছে না থাকলে নাই। তবে, থাকলে দেশের মানুণের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ পাই এবং সেই সুযোগটা যতদূর পারি কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। তাই, আমি আমার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তৃণমূল থেকে সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য।

শেখ হাসিনা দুর্যোগকালে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে মানবতার সেবায় সম্পৃক্ত করার উদাত্ত্ব আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, দেশব্যাপী রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যক্রম বিস্তারে বরাবরের মতো তাঁর সরকার এবং তাঁর ব্যক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে আগামী ৪ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক রেডক্রস সংস্থা আইএফআরসির সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) এটিএম আব্দুল ওয়াহাবকে অভিনন্দন জানান।

১৫ আগস্টের দুঃসহ স্মৃতিচারণ করে বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারাটি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, সেই বাঙ্গালি হয়ে কিভাবে ঘাতকরা জাতির পিতার বুকে গুলি চালিয়েছিল! জাতির পিতার খুনীদের এক সময় তাঁদের ধানমন্ডির বাসায় বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, খুনি নূর, ডালিম, জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোস্তাক প্রায়ই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসায় আসত। তারা আমার বাবা, মা, আমার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা দেশ ও এর জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ করতে পারেনি, বরং গণমানুষের ভাগ্য অন্ধকার যুগে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

আবেগ জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, জাতির পিতা এদেশে রেডক্রস সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মানবতার কল্যাণে সেবা করার জন্য, ‘৭৫-এ জাতির পিতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার পর সেই রেডক্রসেরই এক টুকরো কাপড়কে কাফন বানিয়ে তাঁকে দাফন করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের পুরনো মর্যাদা ফিরিয়ে আনাসহ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিকে আধুনিকীকরণের একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি রেড ক্রিসেন্টের জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো নতুন করে করার এবং কমিটিকে কার্যকর করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) এটিএম আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে ভাইস চেয়ারম্যান নূরুর রহমান, ট্রেজারার এম এ সালাম, মহাসচিব কাজী সফিকুল আজম, আরমা দত্ত এমপি, এম মঞ্জুরুল ইসলামসহ অন্যান্য বোর্ড সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS