মোঃ আব্দুল্লাহ হক, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত ৪১তম তিন দিনব্যাপী তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের শেষ দিনে দেখা দেয় এক অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী মুফতি আমীর হামজার উপস্থিতিতে মাহফিলে মিডিয়া কর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
এসময় কমিটির লোকজন বলেন মোবাইল ফোন বা ক্যামেরা দিয়ে ওয়াজ ভিডিও করা হলে তা ভেঙে দেওয়া হবে
সোমবার (৪ নভেম্বর ২০২৫) রাতে মাহফিল প্রাঙ্গণে স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি উপস্থিত হলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কেউ মোবাইল বা ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ বা লাইভ সম্প্রচার করতে পারবে না।
ফলে সাংবাদিকরা বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
এই ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
সাংবাদিকদের অভিযোগ, ইসলাম প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে মিডিয়া— সেখানে ধর্মীয় মাহফিলে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এক অস্বাভাবিক পদক্ষেপ।
একজন স্থানীয় প্রতিবেদক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন “মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামিক বক্তব্য ও তাফসির সারা দেশে পৌঁছে যায়। মিডিয়ার উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা মানে সত্যের আলো সীমাবদ্ধ রাখা।”
ফরিদপুর গ্রামের মাঠে ২ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই তিন দিনব্যাপী মাহফিলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদরা অংশ নেন।
শেষ দিনে সূরা তওবা-এর ১১১ নম্বর আয়াতের তাফসির পেশ করার কথা ছিল মুফতি আমীর হামজার।
ধর্মীয় বক্তা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয় হলেও, সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ায় তার বক্তব্য ও উপস্থিতি ঘিরে জনমনে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
ধর্মীয় অঙ্গনের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমানে ইসলামের বাণী প্রচারে মিডিয়া একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম।
সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে আজ ইসলামী দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে।
তাই অনেক ইসলামিক সংগঠনই এখন তাফসির মাহফিল সরাসরি সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়।
এই প্রেক্ষাপটে ফরিদপুরের মাহফিলে মিডিয়া নিষিদ্ধ হওয়া এলাকাবাসীর কাছে বিস্ময়কর ও প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন অনেকে।
স্থানীয় সমাজকর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন“ধর্মীয় মাহফিলে মিডিয়াকে বাদ দেওয়া মানে সন্দেহ তৈরি করা। মিডিয়াই তো ইসলামিক আলোচনাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়।
অন্যদিকে, মাহফিল আয়োজক কমিটির এক সদস্য দাবি করেন, “অনুষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও পবিত্রতা রক্ষার জন্যই মিডিয়া নিষেধ করা হয়েছে।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যেহেতু মুফতি আমীর হামজা জামায়াতে ইসলামী মনোনীত নির্বাচনী প্রার্থী, তাই তার বক্তব্য যেন কোনো রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম না দেয়— সেই সতর্কতায় মিডিয়াকে দূরে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মুফতি আমীর হামজা চলতি বছরের ২৫ মে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের এক সমাবেশে কুষ্টিয়া-৩ আসনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা পান।
তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য না হলেও ওলামা বিভাগে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
ধর্মীয় বক্তা হিসেবে তার জনপ্রিয়তা থাকলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা তাকে নতুনভাবে আলোচনায় নিয়ে এসেছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply