গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষের বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছে তিস্তা দ্বিতীয় সেতু। বহুল প্রতীক্ষার এ সেতু উদ্বোধনের মাত্র একদিনের মাথায় চুরি হয় প্রায় ৩০০ মিটার বৈদ্যুতিক ক্যাবল। ওই চুরির রেশ না কাটতেই এবার সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার (২৩ আগস্ট) দিবাগত রাতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর-ঘাটে তিস্তার নদীর মওলানা ভাসানী সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট চুরির ঘটনা ঘটে। রোববার বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে, কয়টি লাইট চুরি হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃক্ষ।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশল উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘রিফ্লেক্টর লাইট চুরির বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। বিষয়টি স্থানীয় থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।’
এর আগে বুধবার চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেদিন সন্ধ্যায় সেতুতে বাতি জ্বলতে দেখা যায়নি। পরদিন বৃহস্পতিবার অনুসন্ধানে জানা যায় সেতুর ল্যামপোস্টের হরিপুর পয়েন্ট থেকে সংযোগ নেওয়া ৩১০ মিটার বৈদ্যুতিক তার দুর্বৃত্তরা কেটে নিয়ে গেছে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার চুরি হলো রিফ্লেক্টর লাইট।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে এবং স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পরপর চুরির ঘটনায় সেতু এলাকায় নিরাপত্তাহীনতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী।
সেতুর অদূরে সুন্দরগঞ্জের পাঁচপীর এলাকার বাসিন্দা জুয়েল রানা জানান, ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুর নুন্যতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার লোকজন ও যানবাহন এই সেতু দিয়ে পারাপার হয়। অথচ সন্ধ্যা হলেই অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে দুই পারের কয়েক কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ পুরো সেতুটি।
একই এলাকার শামীম মিয়া জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এসব চুরির ঘটনা ঘটছে।

সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ রিফ্লেক্টর লাইট চুরির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তার চুরির ঘটনায় সেতুর সিকিউরিটি ইনচার্জ নুর আলম বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় শুক্রবার রাতে মামলা করেছেন। চোরচক্রকে শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
তিনি আরও জানান, সেতু এলাকায় যানজট নিরসন ও সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করতেও পুলিশ দায়িত্ব পালন অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া অধিকতর নিরাপত্তার জন্য ওই এলাকায় দ্রুত পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের কাজ চলমান আছে।
উদ্বোধনের ৫ দিনে দুদফা দুর্ঘটনা
এ পরিস্থিতিতে উদ্বোধনের পাঁচদিনে বহুল প্রতীক্ষার এই সেতুতে পৃথক দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। পৃথক দুর্ঘটনায় একজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। দুটি ঘটনায় ঘটেছে সন্ধ্যার পর।
সবশেষ রোববার রাত ১১টার দিকে সেতুর উত্তর পাশে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত হয়েছেন। এর আগে শুক্রবার মোটরসাইকেলের ধাক্কায় খদেজা বেগম (৮০) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি চালু হওয়ার পর থেকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চলাচল করছে। একদিকে আলোবিহীন সেতু অন্যদিকে একটি মোটরসাইকেলে দুই থেকে চার জন পর্যন্ত আরোহী নিয়ে সেতু পার হন তারা। দুর্ঘটনা রোধে সবার সচেতনতার পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
প্রসঙ্গত, মোট ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরঘাটে তিস্তার ওপর নির্মিত ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি দেশের ইতিহাসে এলজিইডির সর্ববৃহৎ প্রকল্প। যার অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড)। গত ২০ আগস্ট এ সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS