বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘জনগণ মনে করে, স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, সেটি হবে সারা দেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া, যা সরাসরি গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী। গণহত্যাকারী, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না।’
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে বিএনপির বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সারা দেশে খুন, হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই ও রাহাজানি বেড়েই চলেছে। বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারছে না, সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে চাইছে, এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে স্থানীয় নির্বাচন থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জন-রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণহত্যাকারী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান, সারা দেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসনের স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করলেও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনও তাদের কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না।’
তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচার শাসক টাকা পাচার আর লুটপাট চালিয়ে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর করে দিয়েছিল। অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছিল দেশের সব সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন করে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তুলেছিল।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সরকার এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া ২০১৭ সালে ভিশন-২০৩০ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে বিএনপি ২৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরবর্তীতে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ঘোষণা করা হয় ৩১ দফা কর্মসূচি। এই ৩১ দফা নিয়ে বিএনপির উদ্যোগে সারা দেশে জনগণের সঙ্গে সংলাপ চলছে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্র-সরকার-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল মেরামতের জন্য দফা ৩১টি হলেও এর চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো—একটি নিরাপদ, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ, একইসঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। এটি নিশ্চিত করা না গেলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি কোনটিই টেকসই হবে না।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত হলো প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন। এজন্যই জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায় বিএনপি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, আজ ও আগামী দিনের রাজনীতিতে বিএনপির এই ৩১ দফা হচ্ছে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সনদ। তবে এই ৩১ দফাই শেষ কথা নয়, সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের জন্য এই ৩১ দফায়ও সংযোজন-বিযোজনের সুযোগ রয়েছে। এমনকি, বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রস্তাবনার খুব বেশি মৌলিক বিরোধ নেই।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply