শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন

সিলেটে শীত বাড়তেই, হাসপাতাল গুলোতে শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

সিলেট প্রতিনিধি : গত দু’দিন ধরে শীত বাড়তে শুরু করেছে। তাপমাত্রা কমতেই সিলেটে শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে সিলেটের ঘরে-ঘরে টান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। নগরীর সরকারি বেসরকারী হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ বাড়ছে। অনেক হাসপাতালে গিয়েও খালি মিলছেনা শিশুরোগীর শয্যা। রোগীর চাপে সরকারি হাসপাতাল গুলোতে বাধ্য হয়ে এক বেডে ৪ জন শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হঠাৎ করে সিলেটের হাসপাতাল গুলোতে শিশু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শিশুরা হাজির হচ্ছে হাসপাতালে। আক্রান্তদের মধ্যে জলবসন্ত, ফুসকুড়ি, ডায়রিয়া, সর্দি জ্বর, টাইফয়েডের রোগী থাকলেও, অধিকাংশ শিশু নিউমোনিয়া ও টান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।


জানা গেছে, রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর সরকারী- বেসরকারী হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঠান্ডা জনিত রোগে নবজাতক থেকে শুরু করে ৩-৫ বছরের অনেক শিশু নতুন করে ভর্তি হয়েছেন। বিকেলের দিকে অনেক অভিভাবক হাসপাতালে বেড না পেয়ে আউটডোর কিংবা জরুরী বিভাগে চিকিৎসক দেখিয়ে সন্তান নিয়ে বাসায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ভর্তি হওয়া এবং ফিরে যাওয়া শিশুদের বেশির ভাগই সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।


শুক্রবার বিকেলে ১৮ মাস বয়সী শিশু সন্তানকে নিয়ে নগরীর রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন শান্তিগঞ্জ উপজেলার সালেহা খাতুন (৩০)। এর আগে তিনি শিশুকে নিয়ে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় নগরীর একাধিক বেসরকারী ক্লিনিকে যোগাযোগ করেন। কিন্তু সেখানে সিট না পেয়ে শেষ পর্যন্ত রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।


শনিবার দুপুরে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পুরো ইউনিট েেরাগীতে ভরপুর। অধিকাংশ শিশু নিউমোনিয়া ও ঠান্ডজনিত রোগী এবং অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ছাতক উপজেলার রহিমা বেগম তার ১৫ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে যান একটি বেসরকারী হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে সন্তানের জন্য কোন সিট খালি না পেয়ে চলে যান উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।


সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩টি শিশু ওয়ার্ডে ৭ শতাধিক শিশু চিকিৎসাধিন আছে। একটি সিটে ৪ জন শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা: সৌমিত্র চক্রবর্তী। তিনি শনিবার সন্ধ্যায় তিনি আমাদের প্রতিবেদককে বলেন, গত কয়েক দিন থেকে হাসপাতালে শিশুরোগীর চাপ বাড়ছে। শিশুদের ফ্লোরে  দেয়া যায়না। আবার কাউকে ফিরিয়েও দেয়া সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতালের একটি বেডে ৪ জন শিশুকে রেখেও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত ওসমানী হাসপাতালের ৩টি সাধারণ শিশু ওয়ার্ডে ১০৬ শয্যার বিপরীতে ৭ শতাধিক জন শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।


রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. তারেক আজাদ বলেন, আমাদের হাসপাতালে শিশু রোগী সবসময়ই একটু বেশী থাকে। হাসপাতালটিতে শিশুদের জন্য আলাদা ১২৫টি শয্যা রয়েছে। সকল শয্যা পুর্ণ রয়েছে। প্রতিদিনই পুরাতন রোগীকে ছাড়পত্র দিলেই শয্যা খালি হচ্ছে।


সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. এটিএম তারেক রাসেল মিশু বলেন, গত কয়েক দিন  থেকে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বেশীর ভাগ শিশু নিউমোনিয়া আক্রান্ত। এনআইসিইউ শতভাগ পূর্ণ থাকায় নতুন করে ভর্তি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। উইমেন্স হাসপাতালে শিশুদের জন্য ১০০ আলাদা শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে শনিবার পর্যন্ত ৮০টি শয্যা পূর্ণ রয়েছে। শিশুদের নিয়ে কেবিনে ভর্তির প্রবণতা কম।
সিলেটের ডেপুটী সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় শংকর দত্ত বলেন, সিলেট জুড়ে শিশুদের ঠান্ডজনিত রোগের প্রকোপ হঠাৎ করে  বেড়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন জনিত কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। এজন্য অভিভাবকদেরকে শিশুদের প্রতি অধিক যতœবান হতে হবে।


তিনি জানান, জেলার আওতাধিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে প্রতিদিন শিশুকে নিয়ে ভিড় করছেন রোগীর স্বজনরা। তবে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শেষ করে খুব কম শিশুই বাড়ি ফিরতে পারছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।


শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক সার্জন (আরএমও) ডা. মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালটিতে ১৫টি শিশু শয্যা থাকলেও বর্তমানে ১১ জন শিশু রোগি ভর্তি রয়েছে। তবে বর্হিবিভাগে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক শিশু বর্হিবিভাগে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।


সিলেটে হঠাৎ শিশুরোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এখনো তেমন শীত না নামলেও হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে নবজাতক ও শিশুরা নানা ধরনের রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে শিশুদের অধিকাংশই কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ভাইরাস জনিত কারণে ডায়রিয়াও দেখা দিচ্ছে। এজন্য এই সময় শিশুদের বাড়তি যতœ নেওয়া প্রয়োজন। তাতে শিশুদের নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।


তিনি বলেন, শীতের নামার প্রাক্কালে নবজাতক ও শিশুদের কোনো ভাবে ঘরের মেঝেতে বা সেঁতসেঁতে জায়গায় রাখা যাবে না। এ সময় সব শিশুদের কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে। সুষম খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। বাড়তি সচেতনতা ছাড়া শিশুদের টান্ডাজনিত রোগ থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS