শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০১:৫৩ অপরাহ্ন

পরিবারসহ পুঁজিবাজারের আলাদিন হিরুকে ১৩৪ কোটি টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের আলাদিন খ্যাত আলোচিত কারসাজিকারক (গ্যাম্বলার) সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক আবুল খায়ের হিরু ও তার পরিবারকে প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। জরিমানার তালিকায় এসেছে হিরুর মালিকানাধীন একাধীক প্রতিষ্ঠানের নামও।

বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৩৪ তম কমিশন সভায় এ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভা শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, চার কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি করে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীদের মোট ১৩৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। হিরু এবং তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ছাড়াও তার বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রীর ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান ও কাজী ফরিদ হাসানকে জরিমানা করেছে বিএসইসি।

কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ৩ অক্টোবর ২০২১ তারিখ হতে ২৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত ফরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে আবুল কালাম মাতবরকে ৭ কোটি ২০ লাখ, ডিআইটি কোপারেটিভ লিমিটেডকে ১৫ কোটি, কাজী সাদিয়া হাসানকে ২৫ কোটি, কনিকা আফরোজকে ১৯ কোটি, মোঃ আবুল খায়েরকে ১১ কোটি ও সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ হতে ২৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে সাজিদ মাদবর কে ১ কোটি ৬০ লাখ, মোহাম্মদ বাসার কে ১ কোটি ১৫ লাখ, মো. আবুল খায়ের কে ১৯ কোটি ১৫ লাখ, কনিকা আফরোজ কে ২ কোটি ৯০ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৯০ লাখ, কাজী ফুয়াদ হাসানকে ১ কোটি, ডিয়াইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেডকে ৮৪ লাখ এবং আবুল কালাম মাদবর কে ২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অক্টোবর ২০২১ তারিখ হতে ২৭ অক্টোবর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত এনআরবি কমার্সিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে মো: আবুল খায়েরকে ২ কোটি ৩০ লাখ, মোঃ আবুল কালাম মাতবরকে ৪ কোটি ১৫ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১১ লাখ, কোনিকা আফরোজকে ১ লাখ, ডিআইটি কোপারেটিভ লিমিটেডকে ১২ লাখ, আলেয়া বেগমকে ১ লাখ, মোহাম্মদ বাসারকে ১ লাখ, মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে ১ লাখ, সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা অর্থদন্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এবং ২৮ জুন ২০২১ তারিখ হতে ৫ আগস্ট ২০২১ তারিখ পর্যন্ত সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে মো: আবুল খায়েরকে ১ লাখ, মোঃ আবুল কালাম মাতবরকে ১ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ২ লাখ, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ, কাজী ফরহাদ হাসানকে ৩৫ লাখ, কাজী ফুয়াদ হাসানকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদন্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এদিকে, ব্রোকারেজ হাউজ মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড কে  ২৮ জুন ২০২১ তারিখ হতে ৫ আগস্ট ২০২১ তারিখ পর্যন্ত সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজি এবং সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করে মূল ব্যবসায়ের বাহিরে বিনিয়োগ করার দায়ে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আবুল খায়েরের স্ত্রী সাদিয়া হাসান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বিনিয়োগকৃত অর্থ প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে ফেরত আনতে আগামী ৩০ কার্যদিবস সময় দিয়েছে কমিশন। এ সময়ের মাঝে উক্ত বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত না আনলে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা গুণতে হবে মোনার্ক হোল্ডিংসকে।

বিএসইসি এজানিয়েছে, ফরচুন শুজ-এর শেয়ার কারসাজির জন্য তাদেরকে সর্বোচ্চ ৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের জন্য ৫০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের জন্য ৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের জন্য ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

উল্লেখ, ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে প্রথম আলোচনায় আসেন হিরু। প্যারামাউন্টের হাত ধরেই অন্যান্য ইনস্যুরেন্সের কারসাজিতে নামেন তিনি। পরে ইনস্যুরেন্সের পাশাপাশি অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতেও জড়িয়ে পড়েন।

পরিবারের সদস্য ও অন্য সহযোগীদের নিয়ে কারসাজির বিশাল সিন্ডিকেট বা চক্র গড়ে তোলেন তিনি। এতে রয়েছে স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রীর ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান ও কাজী ফরিদ হাসান।

বাংলাদেশে শেয়ার কেলেঙ্কারিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন হিরু। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও অল্প সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে সমালোচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হিরু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি শেয়ার লেনদেনের বিও হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS