মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:২১ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণ কতটা লাভজনক?

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪

দেশের ব্যাংক খাতের নানা অনিয়মের কারণে খাতটিতে মানুষের আস্থা কমেছে। একই অবস্থার মধ্যে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। অর্থাৎ পুঁজিবাজারও দীর্ঘদিন ধরে আস্থা সংকটে ভুগছে। এর ফলে স্বর্ণে বিনিয়োগের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। বর্তমানে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্বর্ণকে বলা হয় ‘সেফ হেভেন’, এর মানে হচ্ছে বড় ক্ষতির আশংকা ছাড়া বিনিয়োগ করা যায় যেখানে।

চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন মজুমদার অর্থসূচককে বলেন, সাধারণত মূল্যস্তরের উপর ঊর্ধ্বমুখী চাপ বজায় থাকলে তথা অর্থের মূল্য কমতে থাকলে মূল্যবান ধাতুর দাম বাড়তে থাকে। অর্থাৎ স্বর্ণের মত মূল্যবান ধাতু মূল্যস্ফীতির বিপরীতে রক্ষাকবচ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। যেহেতু বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি বিদ্যমান আছে সেহেতু ঝুঁকিবিমুখ মানুষ স্বর্ণকে সম্পদ গচ্ছিত রাখার মাধ্যম হেসেবে বেছে নেয়।

তিনি আরও বলেন, দেশের ব্যাংক খাত এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের বিদ্যমান অস্থিতিশীলতা ও সুশাসনের অভাব খাতগুলোর উপর মানুষের আস্থার চরম অবনতি ঘটিয়েছে। এর ফলে মানুষ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে স্বর্ণে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী হয়েছে।

স্বর্ণে বিনিয়োগ কি লাভজনক?

বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং সফল বিনিয়োগকারীদের কেউ হয়ত আদর্শ বিনিয়োগ বলতে প্রথমেই স্বর্ণের কথা বলবেন না। কিন্তু তারপরেও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু মানুষ নিরাপদ ভেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করে যান।

জানা গেছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৪০ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ২৪ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ১৬ বার। আর ২০২৩ সালে দাম সমন্বয় করা হয়েছিল ২৯ বার। কিন্তু এই ওঠানামার মধ্যে দাম কখনোই অপ্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছেনি।

এছাড়া অল্প শিক্ষিত বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বড় লোকসান হতে পারে। সারাদিন খোঁজখবর রাখতে হয়। ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলেও সুদের হারের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। আর স্বর্ণে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে এমন কোনো বিষয় থাকে না। দাম কমলেও সামান্য আকারে কমে।

তার বাইরে প্রয়োজনে স্বর্ণের একটি ব্যবহারিক উপযোগিতা রয়েছে, সেটাও এ খাতে বিনিয়োগ জনপ্রিয় হবার আরেকটি কারণ। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, স্বর্ণের চাহিদা সবসময় থাকে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান অর্থসূচককে বলেন, স্বর্ণে বিনিয়োগে অনেক বেশি সুরক্ষা। গত ২০ বছরের ইতিহাসে স্বর্ণের দাম কখনো কমেনি, সবসময় দাম উর্ধ্বমূখী ছিলো। স্বল্প মেয়াদে স্বর্ণ কিনে লাভ করা যায়।

তিনি আরও বলেন, আজ স্বর্ণ কিনলে কালকে দর বৃদ্ধি পেলেই লাভ করা যায়। স্বর্ণ কিনলে টাকা ফেরত পাবেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সচেতন মানুষ স্বর্ণে বিনিয়োগ করে। অর্থাৎ এখান থেকে ভালো লাভ করা সম্ভব বলেও মনে করছেন তিনি।

চলতি ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বাজারে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ দাম। আর সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৯৭১ সালে, সে বছর স্বর্ণের ভরি ছিল ১৬০ টাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS