মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন

আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ঋণের ৩৩ শতাংশই খেলাপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪

দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণও লাফিয়ে বাড়ছে। চলতি বছরের তিন মাসে (এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ ৮২২ কোটি টাকা বেড়েছে। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় দেড় ডজন প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ উচ্চমাত্রায় রয়েছে। পাশাপাশি তারল্য সংকটে ভুগছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। নানা অনিয়মের কারণে ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় আমানত পেতে সমস্যা হচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির অভাবেও এ খাতের খেলাপি ঋণ বাড়ছে বলে জানান তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি ছিল ৭৪ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকার। এসব ঋণের মধ্যে ২৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা খেলাপি বা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ১৫ শতাংশ খেলাপি। গত মার্চ প্রান্তিক শেষে ঋণ স্থিতি ছিল ৭৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। সে সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৩২ শতাংশ। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৮২২ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

গত বছরের সবশেষ প্রান্তিক ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ খেলাপি। সে হিসাবে ছয় মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

আলোচিত জুন প্রান্তিক শেষে আদায় অযোগ্য (মন্দ ঋণ) ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা বা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২৮ দশমিক ২২ শতাংশ। মার্চে ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা বা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২৬ দশমিক ৯১ শতাংশ।

বলা হচ্ছে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুরবস্থার পেছনে অনেকাংশেই দায়ী বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার। তিনি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করেছেন, পুরো খাত এখন তার জের টানছে।

পি কে হালদার সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পিপলস লিজিংয়ের খেলাপি ঋণের হার ৯৯ শতাংশ বা ১ হাজার ৯৬ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) খেলাপির হার ৯৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ বা ৭৪৩ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের খেলাপি ঋণ ৯৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ বা ৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। আর পি কে হালদার সংশ্লিষ্ট এফএএস ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৮৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা ও আভিভা ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৭১ দশমিক ৭২ শতাংশ বা ১ হাজার ৯০২ কোটি টাকা।

এর বাইরে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ এখন ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ, জিএসপি ফাইন্যান্সের ৯২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ৮৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, সিভিসি ফাইন্যান্সের ৫৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্সের ৫৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, আইআইডিএফসির ৫৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ, হজ ফাইন্যান্সের ৫৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ফিনিক্স ফাইন্যান্সের ৫৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ, বে লিজিংয়ের ৫২ দশমিক ৮২ শতাংশ ও উত্তরা ফাইন্যান্সের ৫০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এরপরই খেলাপি ঋণে শীর্ষে আছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, মাইডাস ফাইন্যান্স, ইসলামিক ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, ইডকল এবং লংকাবাংলা ফাইন্যান্স।

আলোচিত এপ্রিল-জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকে যা ছিল ৪৪ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। তবে আলোচিত তিন মাসেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন সাড়ে ৪৮ হাজারের বেশি ব্যক্তি আমানতকারী।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS