পবিত্র কোরআনের ফজিলত-পূর্ণ সুরা হচ্ছে ইখলাস। এ সুরা মুখস্থ নেই এমন মুসলমান খুঁজে পাওয়া ভার। প্রতিটি মুসলমানের সুরা ইখলাস মুখস্থ। এ সুরায় মহান আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণার পর তার সন্তান আছে বলে যে ভ্রান্ত ধারণা করা হয়, এর প্রতিবাদ করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের অন্যতম ছোট সুরা হিসেবেও বিবেচিত হয় এ সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এর রুকু ১, আয়াত ৪। ১১২তম সুরা। এ সুরায় মহান আল্লাহর অস্তিত্ব ও সত্তার অনুপম ব্যাখ্যা রয়েছে।
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সাহাবিকে একটি মুজাহিদ দলের প্রধান করে অভিযানে পাঠালেন। নামাজে তিনি যখন তার সাথীদের নিয়ে ইমামতি করতেন, তখন ইখলাস সুরাটি দিয়ে নামাজ শেষ করতেন। তারা যখন অভিযান থেকে ফিরে এলেন তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে ব্যাপারটি আলোচনা করলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাকেই জিজ্ঞেস কর কেন তিনি এ কাজ করেছেন? এরপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দিলেন, এ সুরাটিতে মহান আল্লাহর গুণাবলি রয়েছে। এজন্য সুরাটি পড়তে আমি ভালোবাসি। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। (বুখারি: ৭৩৭৫)
قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ اَللّٰهُ الصَّمَدُ لَمۡ یَلِدۡ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّهٗ کُفُوًا اَحَدٌ
উচ্চারণ: কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুস সামাদ। লাম ইয়ালিদ। ওয়ালাম ইউলাদ। ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ। অর্থ: বলুন, তিনি আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন বরং সকলেই তার মুখাপেক্ষী। তার কোনো সন্তান নেই এবং তিনি কারও সন্তানও নন এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
এক. ইসলামের মূল মর্ম হচ্ছে তাওহিদ। এ সুরায় শেখানো হয়, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তিনি কারও থেকে জন্ম নেননি, কোনো কিছুর সমতুল্য নন তিনি। তিনিই আমাদের পালনকর্তা। তার সম্পর্কে জানা থাকা প্রত্যেক ঈমানদারের কর্তব্য।
দুই. মহান আল্লাহর সমকক্ষ কোনো দিন কেউ ছিল না এবং কোনো দিন হতেও পারবে না। এবং আকার-আকৃতিতেও কেউ তার সাথে সামঞ্জস্য রাখে না। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন, বরং সবাই তার মুখাপেক্ষী। তার সাথে কাউকে শরিক করা জুলুম ও গর্হিত পাপ।
তিন. সন্তান প্রজনন সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য- স্রষ্টার নয়। অতএব, তিনি কারও সন্তান নন এবং তার কোনো সন্তান নেই। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ বলেন, আদম সন্তান আমাকে অবিশ্বাস ও অস্বীকার করে। আমাকে গালি দেয়, এটাও তার জন্য উচিত নয়। তার মিথ্যাচার হচ্ছে, সে বলে আমাকে যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন সেভাবে তিনি কখনও আমাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন না। অথচ দ্বিতীয় সৃষ্টি প্রথম সৃষ্টির চেয়ে কোনোভাবেই কঠিন নয়। আর আমাকে গালি দেয়ার ব্যাপারটি হলো, সে বলে আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। অথচ আমি একক, জন্মগ্রহণ করিনি এবং কাউকে জন্মও দেইনি। আর কেউই আমার সমকক্ষ নেই। (বুখারি: ৪৯৭৪)
চার. মহান আল্লাহ একক স্রষ্টা ও রব, তাই একনিষ্ঠভাবে একমাত্র তার ইবাদত করা আমাদের কর্তব্য। তিনি ছাড়া অন্য কোনো সত্ত্বার ইবাদত বৈধ নয়।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply