মোঃ আব্দুল্লাহ হক, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি: আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে চুয়াডাঙ্গায় শীতজনিত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। দিন-রাতের তাপমাত্রার অস্থিরতা, ঠান্ডা বাতাস এবং রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন যে, হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে ঠাঁই কমে যাওয়ায় বহির্বিভাগেও রোগীর চাপ এখন চরমে।
হাসপাতালে রোগীর ভিড় ও পরিসংখ্যান
হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বর মাসের প্রথম ১৬ দিনে (১ নভেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বর রাত ১০টা পর্যন্ত) মোট ৫৪৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি: ৩৬৩ জন, যাদের অধিকাংশ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি: ১৮৫ জন নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ রোগী।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোটা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ কয়েকগুণ বেড়েছে। একইসঙ্গে, ঠান্ডাজনিত অসুস্থতার কারণে ছোট শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়াও উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, দিনের গরম ও রাতের ঠান্ডার তীব্র ব্যবধান ছোট শিশুদের শ্বাসযন্ত্রে দ্রুত জটিলতা সৃষ্টি করছে।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ দিনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস গ্রামের শাহানাজ (২ দিন বয়স) গত ৩ নভেম্বর রাতে ভর্তি হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়। অন্যদিকে, আলমডাঙ্গার রামচন্দ্রপুর গ্রামের সালমা (১ দিন বয়স) ৯ নভেম্বর ভর্তি হয়ে পরদিন দুপুরে মৃত্যুবরণ করে।
বহির্বিভাগেও প্রতিদিন শত শত রোগী শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা, কাশি ও ডায়রিয়ার কারণে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আসাদুল হক মালিক খোকন জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে অধিকাংশ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
“সম্প্রতি দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। এ কারণে অনেক শিশু ঠান্ডায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ সময় বাবা-মায়ের সচেতনতাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন তিনি।
তিনি আরও যোগ করেন, “রোটা ভাইরাসের কারণে শিশুসহ সব বয়সী ডায়রিয়ার রোগী বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে এবং আউটডোরে আমরা দুই শিশু বিশেষজ্ঞ মিলে গড়ে ৩০০-৪০০ জন রোগীকে দেখছি। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া খুব দ্রুত ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তাই মায়ের দুধ খাওয়ানো, গরম কাপড় পরানো এবং সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত হাসপাতালে আনার পরামর্শ দিচ্ছি।”
মোমিনপুর এলাকার অভিভাবক রাজু আহমেদ বলেন, “আমার ছেলের হঠাৎ সর্দি–জ্বর হয়, পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে এনেছি। ডাক্তাররা নিউমোনিয়া বলেছে। সাত দিন ধরে হাসপাতালে আছি, এখন কিছুটা ভালো আছে।”
অন্যদিকে, জোসনা আক্তার নামের এক মা জানান, গত তিন দিন ধরে তার চার বছর বয়সী বাচ্চার পেটে ব্যাথা এবং এরপর থেকেই সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। ফয়সাল নামের আরেক বাবা জানান, ঠান্ডা লেগে মেয়ের কাশি–শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তিনি বলেন, “বাড়ির চিকিৎসায় কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে আনি। এখন অক্সিজেন চলছে।”
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি করে বলেছেন, চুয়াডাঙ্গায় শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় শ্বাসকষ্টজনিত রোগী বাড়ছে। তিনি এই সময় সচেতন থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply