ব্লু-ইকোনমি সাগর ও সাগরকেন্দ্রিক সম্পদকে টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করার নাম। পৃথিবীর সাগর-মহাসাগরে মহান আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। মহান আল্লাহ যার মধ্যে তার বান্দাদের জন্য বিপুল সম্পদ রেখে দিয়েছেন। তা ছাড়া মানুষের যাতায়াত, পণ্য পরিবহনের জন্যও সমুদ্রপথ প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
মহান আল্লাহ তার এই মহানিয়ামতের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বলেন, তোমাদের (প্রকৃত) প্রতিপালক তো তিনিই, যিনি সমুদ্রে তোমাদের জন্য সুস্থিরভাবে নৌযান পরিচালনা করেন, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো, তিনি তোমাদের প্রতি বড়ই দয়ালু। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৬৬)
এ আয়াতে মহান আল্লাহ সামুদ্রিক সফরের সাহায্যে যেসব অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ফায়দা লাভ সম্ভব, সেদিকে ইঙ্গিত করেছেন। সাগরে জাহাজ চলাচলের সুবিধা ভোগের মাধ্যমে মানুষ যেমন বহু কল্যাণ ভোগ করছে, তেমনি এখানকার মাছ ও অন্যান্য প্রাণী, সমুদ্রে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মূল্যবান মণি-মুক্তা, খনিজ সম্পদও বিশ্ব অর্থনীতির চাকা গতিশীল করেছে।
ওশান ইকোনমি অ্যান্ড ইনোভেশনের ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি ব্যবসা-বাণিজ্য সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল। দেড় হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ কোরআনের মাধ্যমে মানুষকে জানিয়েছিলেন, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সাগর কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে, সে নৌকায় যা সমুদ্রে মানুষের জন্য কল্যাণকর বস্তু নিয়ে চলে তাতে বিবেকবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৪)
এ ছাড়া মহান আল্লাহ সাগরকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বানিয়েছেন। তার উত্তাল ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ দেওয়া হয়। প
বিত্র কোরআনের সুরা: নুরের ৪০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ভিন্ন একটি প্রসঙ্গে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের উপমা দেন। ইরশাদ হয়েছে,
অথবা (তাদের আমলসমূহ) গভীর সমুদ্রে ঘনীভূত অন্ধকারের মতো, যাকে আচ্ছন্ন করে ঢেউয়ের ওপরে ঢেউ, তার ওপরে মেঘমালা। অনেক অন্ধকার; এক স্তরের ওপর অপর স্তর। কেউ হাত বের করলে আদৌ তা দেখতে পায় না। আর আল্লাহ যাকে নুর দেন না তার জন্য কোনো নুর নেই।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৪০)
ব্লু-ইকোনমি আধুনিক বিশ্বে টেকসই উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে পরিচিত। এটি কেবল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য নয়, বরং মানবজাতির প্রয়োজনীয় সম্পদের টেকসই ব্যবহারের একটি মডেল। পবিত্র কোরআনে সাগর ও এর সম্পদ সম্পর্কে আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে, যা সাগরের সঠিক ব্যবহার ও এর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার আহ্বান জানায়। আল্লাহর প্রদত্ত এই সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে মানবসমাজ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
কোরআন আমাদের শিক্ষা দেয়, সাগরের অগণিত নিয়ামত এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসকে সংরক্ষণ ও সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনমান উন্নত করা সম্ভব। এটি আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং পৃথিবীতে ভারসাম্য রক্ষারও একটি উপায়। তাই ব্লু-ইকোনমির ধারণা কেবল একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নয়, বরং তা কোরআনের নির্দেশিত সৃষ্টির প্রতি দায়িত্বশীল আচরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply