মসজিদে হারাম কর্তৃপক্ষ জানায়, মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববিতে আজ (শুক্রবার, ১৯ জমাদিউস সানি, ২০ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের ইমামতি করবেন ও খুতবা দেবেন যারা, তারা হচ্ছেন প্রখ্যাত দুই শায়খ।
আজ মসজিদে হারামে জুমার নামাজ পড়াবেন সুপ্রসিদ্ধ ইসলামিক স্কলার আলেম ও কারি শায়খ ড. মাহির বিন হামাদ বিন মুয়াক্বল আল মুয়াইকিলি। মসজিদে হারামের এই খতিব, ইসলামি স্কলার ও শিক্ষাবিদ হিসেবেও বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তিনি শায়খ মাহির আল মুয়াইকিলি নামে বেশি পরিচিত।
শায়খ মাহির ১৯৬৯ সালের ৭ নভেম্বর মদিনা নগরীর আল ওয়াজাহ নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছেন। অবশ্য তার মা-বাবা লোহিত সাগর তীরে সৌদির ইয়ানবু শহর থেকে সেখানে বসবাস শুরু করেন। মদিনা নগরীতে শৈশব ও কৈশোরের এক বর্ণাঢ্য জীবন কাটিয়েছেন তিনি। ধার্মিক পরিবারে বড় হওয়ায় ইসলামি অনুশাসনের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে পবিত্র কোরআন পাঠে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেন এবং খুব কম বয়সেই হিফজ শেষ করেন।
তিনি মদিনা নগরীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর গণিতের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। গণিতের জটিল অঙ্ক বুঝিয়ে ব্যাপক সুনাম কুড়ান। পাশাপাশি মদিনার বিভিন্ন মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তাই তাকে নিয়মিত পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের চর্চা করতে হতো। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি চার সন্তানের জনক।
শায়খ মুয়াইকিলি মক্কা নগরীর বালাদ আশ শুহাদা স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। জনপ্রিয় বক্তা ও ইসলামের প্রচারক হিসেবে ব্যাপকভাবে সবার কাছে সমাদৃত। তিনি মক্কার প্রিন্স আবদুল মাজিদ স্কুলের স্টুডেন্টস কাউন্সিলর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মক্কার আবদুর রহমান আস সায়িদি মসজিদের ইমাম ছিলেন কিছুদিন।
শায়খ মাহির ২০০৪ সালে উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিকাহ (ইসলামি আইনশাস্ত্র) বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতকোত্তরে তিনি ‘ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) -এর ফিকাহ চর্চা’ বিষয়ে গবেষণা করেন। ২০১২ সালে তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। পিএইচডি ডিগ্রিতে বিচার ও দণ্ডবিধি বিষয়ে ইমাম আল শিরাজি (রহ.) লিখিত ‘তুহফাতুন নাবিহ শরহুত তানবিহ’ বইয়ের একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেন।
একই সময় শায়খ মাহির উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুডিশিয়াল স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াতের মাধ্যমে তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান।
শায়খ মাহির দুবছর মসজিদে নববিতে তারাবির নামাজের ইমামতি করেন। এরপর ২০০৬ সাল থেকে দুবছর তিনি ইমাম হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি মক্কার মসজিদে হারামে শায়খ আবদুর রহমান আল সুদাইসের সঙ্গে তারাবির নামাজের ইমামতি করেন। ওই বছরই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদে হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। প্রায় সময় তিনি ফজর ও মাগরিবের নামাজে ইমামতি করেন।
মসজিদে নববিতে আজ জুমার নামাজ পড়াবেন শায়খ ড. আবদুল বারি বিন আওয়াদ আস সুবাইতি। তিনি ১৩৮০ হিজরিতে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মক্কায় বড় হয়েছেন। এখানেই তার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা হয়েছিল। তার বংশ ওতাইবা গোত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত।
তিনি অল্প বয়সেই পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেন। এরপর তিনি ১৩৮৯ হিজরিতে শরিয়া বিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য আল-আরকাম ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন। তিনি ১৪০৪ হিজরিতে কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৩৯৯ হিজরিতে মক্কায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম হন। ১৪১০ হিজরিতে তারাবিহ নামাজের ইমামতির জন্য তাকে মসজিদে হারামে ইমাম নিযুক্ত করা হয়। তিনি চার বছর ধরে মসজিদে হারামে নামাজের ইমামতি করেন। ১৪১৪ হিজরিতে তিনি মসজিদে নববিতে ইমাম ও খতিব হিসেবে নিযুক্ত হন।
সূত্র: ইনসাইড দ্য হারামাইন
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply