শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৯ অপরাহ্ন

ফের ডুবল সিলেট ও সুনামগঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪
  • ৫৭ Time View

ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদনদীর পানি দ্রুত বেড়ে ইতোমধ্যে সিলেট নগরীসহ এই দুই জেলার বিভিন্ন স্থান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মেঘালয়ে মুষুলধারে বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীগুলোতে বাড়ছে পানি। সুরমা নদী কানাইঘাটে, কুশিয়ারা নদী অমলসিদে, সারি নদী সারিঘাটে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। অন্যান্য পয়েন্টেও পানি দ্রুত বাড়ছে।

ইতোমধ্যে সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কোম্পানিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা নতুনভাবে তলিয়ে গেছে। গোয়াইন ঘাটের প্রধান দুটি সড়ক উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সারি নদীর দুই কূল পানিতে ডুবে গেছে। সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় সুরমা নদী কানাইঘাটে বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একদিনে এই নদীর পানি ১০০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৩১৩ মিলিমিটার হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামছে বিভিন্ন নদী দিয়ে। এতে সুরমা, কুশিয়ারা, ধলাই, সারি, সারিগাঙ্গ, ডাউকিসহ সব ক’টি নদীর পানি বাড়ছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। সিলেট আবহাওয়া অফিস সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৭ ঘণ্টায় ১০৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এতে সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বেশি বাড়ায় নগরীসহ ১৩ জেলায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টি হবে। অতি বৃষ্টি, ভারি বৃষ্টি সব ধরনের বৃষ্টি হবে এই এলাকায়। এতে নদ-নদীর পানি আরও বাড়বে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বিক অবস্থায় মনে হচ্ছে তৃতীয়বারের মতো বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে সিলেট বিভাগের মানুষেরা। এর আগে জুনের মাঝামাঝি এবং মে মাসের শেষদিকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। পানিবন্দি হয়ে পড়েন সিলেট মহানগরীসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সাধারণ মানুষ। সরকারি বিভিন্ন দফতরের তথ্যমতে প্রথম ধাপে বন্যায় সিলেটে তেমন ক্ষতি হয়নি। তবু ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৪৮০ কোটি টাকা। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বলতে গেলে; তছনছ হয়ে গেছে সিলেট।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির দিকে বিশেষ নজর রাখছি। আগের বারের মতো এবারও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, নগদ টাকা, চাল মজুদ রয়েছে। লোকজনকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে এ বছর প্রথম দফা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে সুনামগঞ্জবাসী। উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে ১৫ দিনের মধ্যে এই বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে সুনামগঞ্জবাসী। 

৩১ জুলাই রাত থেকে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে সুরমা, চলতি যাদুকাটা, রক্তি, বৌলাই, পাটলাই, পিয়াইন, কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে সুনামগঞ্জ সদর তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি বেড়ে তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা ও আনোয়ারপুর অংশ তলিয়ে যাওয়ায় তাহিরপুরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সুরমা নদীর পানি উপচে এই সড়কের লালপুর এলাকা নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

এছাড়া যাদুকাটা নদীর পানি বেড়ে লাউড়েরগড় সড়ক ও রক্তি নদীর পানি বেড়ে তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। রক্তি নদীর পানি বেড়ে সাচনা-সুনামগঞ্জ সড়ক নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকা বড়ছড়া চারাগাঁও বাগলী রজনীলাইন লাকমাছড়া, লালঘাট ছড়া দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করেছে। সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ির ঘাট, তেঘরিয়া, নবীনগর, ষোলঘর, উকিলপাড়া, মল্লিকপুর, বড়পাড়া, পশ্চিম নতুনপাড়া, পূর্ব নুতানপাড়া, শান্তিবাগ, পাঠানবাড়ি, হাছনবসত, কালীপুর, হাছনবাহার এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। 

সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের সুলতানপুর, চানপুর, কেজাউড়া, গুজাউড়া, দরিয়াবাজ, আব্দুল্লাহপুর, ইছাঘড়ি, লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের ইসলামপুর, গোয়াচুড়া, বাহাদুরপুর, নীলপুর, গোবিনপুর, নোয়াগাঁওসহ ২০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল দ্বিতীয় বারের মতো প্লাবিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মহাশিং আক্তাপাড়া, নলজুর জগন্নাথপুর, পাটলাই সোলেমানপুর, ঝালোখালী মুসলিমপুর, সুরমা ছাতক ও সুনামগঞ্জে, যাদুকাটা শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুরমা সুনামগঞ্জ ছাতক ও দিরাইয়ে ও যাদুকাটা শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পানি বাড়বে। আগামী দুদিন পানি বাড়তে পারে। মেঘালয়ে এখনও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলের পানি সিলেটের বৃষ্টির পানি একত্রে সুনামগঞ্জের সুরমা নদী দিয়ে মেঘনা নদীতে প্রবাহিত হয়। সিলেটের পানি সুনামগঞ্জে মিলিত হয়ে দ্রুত পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুকনো খাবার, নগদ টাকা, জিআর চাল মজুদ রয়েছে। লোকজনকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন পরিস্থিতির দিকে বিশেষ নজর রাখছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS