বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৬ অপরাহ্ন

ইসলামে ঘুমানোর সঠিক নিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪
  • ৯৩ Time View

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তারই ইবাদতের উদ্দেশ্যে। তাই আমাদের প্রতিটি সময় যেন তার ইবাদতেই কাটে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। সেদিক থেকে কেউ যদি সঠিক নিয়ম মেনে ঘুমায় তাহলে তার ঘুমের সময়টাও ইবাদতে গণ্য হবে।

ঘুমানোর কিছু সুন্নত আছে। এছাড়া কিছু সময় ও পদ্ধতিতে ঘুমানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞাও আছে। সেগুলো মেনে চললে ঘুমও ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে ইনশাআল্লাহ।

পবিত্রতার সঙ্গে ঘুম-

প্রিয় নবী (সা.) যখনই ঘুমাতেন অজুর সঙ্গে ঘুমাতেন। মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, যে মুসলিম ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ও মহান আল্লাহকে স্মরণ করে রাত কাটায় (ঘুমায়) এবং রাতে জেগে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভের দোয়া করে, আল্লাহ তাকে তা দান করেন। (আবু দাউদ ৫০৪২) এ ক্ষেত্রে যদি গোসল ফরজ হয়ে থাকে, তাহলেও কমপক্ষে অজু করে ঘুমানো।

ক্ষমা করে ঘুুমানো-

ঘুমের আগে সবাইকে ক্ষমা করে ঘুমানো। হাদিসে এমন ব্যক্তিদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ এসেছে। এক সাহাবির ব্যাপারে রসুল (সা.) তিন দিন জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল যে সে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে সবাইকে ক্ষমা করে ঘুমায়। সে অন্তরে কোনো মুসলমানের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করত না। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, এ গুণ আপনাকে এত বড় মর্যাদায় উপনীত করেছে। আর সেটাই আমরা করতে পারি না। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব ৫/১৭৮)

অসিয়ত করে ঘুমানো-

যদি কারো কাছে অসিয়ত করার মতো কোনো সম্পদ থেকে থাকে, তাহলে অসিয়ত করে ঘুমানো। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির কিছু অর্থ-সম্পদ আছে, আর সে এ সম্পর্কে অসিয়ত করতে চায়, সে মুসলিম ব্যক্তির উচিত হবে না অসিয়ত লিখে না রেখে দুটি রাতও অতিবাহিত করা।’ (মুসলিম ৪০৯৬)

লাইট বন্ধ করে ঘুমানো-

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন ঘুমাবে তখন বাতি নিভিয়ে দেবে, দরজাগুলো বন্ধ করবে, মশকের মুখ বন্ধ করবে, খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যাদি ঢেকে রাখবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় তিনি আরো বলেছেন, কমপক্ষে একটি কাঠ আড়াআড়ি করে পাত্রের ওপর রেখে দেবে।’ (বুখারি ৫৬২৪)

বিছানা ঝেড়ে নেয়া-

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, যদি তোমাদের কোনো ব্যক্তি শয্যা গ্রহণ করতে যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির ভেতর দিক দিয়ে নিজ বিছানাটা ঝেড়ে নেয়।

কারণ সে জানে না যে বিছানার ওপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কি না। তারপর পড়বে, হে আমার রব, আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠব। যদি আপনি এরই মধ্যে আমার জান কবজ করে নেন তাহলে, তার ওপর রহম করবেন। আর যদি তা আমাকে ফিরিয়ে দেন, তবে তাকে এমনভাবে হিফাজত করবেন, যেভাবে আপনি আপনার নেক বান্দাদের হেফাজত করে থাকেন। (বুখারি ৬৩২০)

ডান দিক হয়ে ঘুমানো-

বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাজের অজুর মতো অজু করে নেবে। তারপর ডান পাশে শুয়ে পড়বে।’ (বুখারি ২৪৭)

হাদিসে বর্ণিত দোয়া পাঠ করা

ঘুমানোর আগের দোয়া-

اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমারই নামে ঘুমাই এবং তোমার নামেই জাগ্রত হই।’
হজরত হুজাইফাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলায় নিজ বিছানায় শোয়ার (ঘুমানোর আগে) সময় নিজ গালের নিচে হাত রাখতেন আর এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি ৩৩১৪)

ঘুম থেকে জাগার পরের দোয়া-

لْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ

উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়া না বা’দা মা আমা তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।

অর্থ : ‘সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি ঘুমের পর আমাদের জাগ্রত করেছেন এবং আমাদের তার কাছেই ফিরে যেতে হবে।’ আবার যখন মহানবী (সা.) ঘুম থেকে সজাগ হতেন, তখন এই দোয়া বলতেন। (বুখারি ৬৩১২)

এছাড়া প্রতি রাতে নবীজি (সা.) বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে দুহাত একত্র করে হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব গোটা শরীরে হাত বোলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তার দেহের সম্মুখ ভাগের ওপর হাত বোলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন। (বুখারি ৫০১৭)

উপুড় হয়ে না ঘুমানো-

আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) জনৈক ব্যক্তিকে পেটের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বললেন, আল্লাহ তাআলা এ রকম শোয়া পছন্দ করেন না। (তিরমিজি ২৭৬৮) এভাবে না ঘুমানোর কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলেছেন যে এভাবে জাহান্নামিরা উপুড় হয়ে পড়ে থাকবে। সে জন্য রাসুল (সা.) এটা থেকে বারণ করেছেন।

এশার আগে না ঘুমানো-

আবু বারজা (রা.) বলেন, আল্লাহর রসুল (সা.) এশার আগে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। (বুখারি ৫৬৮)

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS