নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশের শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনসহ সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক, স্বঘোষিত জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা-বিরোধী কবিতাগুলি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যেখানে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-বিরোধী অপশক্তির কণ্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছেন। একই সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে কবিতা লিখেছেন। প্রগতির বেশ ধরে সারাজীবন বাংলা একাডেমিতে চাকরি করে ভেতরে ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপশক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী লেখা লিখে ‘গিরগিটি বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে নিজেকে নিরাপদে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে গেছেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতা ও সাহিত্যের নামে বাণিজ্যচর্চা ও তার প্রতিষ্ঠিত জুয়াখেলার (রাইটার্স) ক্লাবের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে আসছি। নিম্নে আমরা সুস্পষ্টভাবে তার ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিচ্ছি।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বাংলাদেশের কবিতার একজন ছদ্মবেশি গিরগিটি। গিরগিটি প্রাণীটির নাম আপনারা অনেকেই শুনেছেন। পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে এরা খুব সুন্দর ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। বদলে ফেলতে পারে নিজেদের গায়ের রং। এমনই একজন গিরগিটি বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। গিরিগিটির মতো তিনিও খুব সুন্দর রং বদলাতে পারেন। যেকোনো ঋতুতেই নিজেকে দারুণ মানিয়ে নিতে পারদর্শী তিনি। এখন তিনি নিজের নামের সঙ্গে নিজেই জুড়ে দিয়েছেন ‘জাতিসত্তার কবি’। কে কবে তাকে এমন একটি অভিধায় অভিহিত করেছেন- এমন একটি প্রশ্নের উত্তরে বাংলা সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত সাহিত্য-সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী ও কবি বলেছিলেন, ‘হুদাকে কেউ এই অভিধাটি দেয়নি। সে নিজেই নিজের কবিতার বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখে দিয়ে তার অন্ধ ও মূর্খ স্তাবকদের দিয়ে প্রচার করিয়ে নিচ্ছে। এতটাই নির্লজ্জ ও মৌলবাদী সে। আর আমি জানি, বাংলা সাহিত্যে তার বুলি কপচানো ফাঁপা কবিতার কোনো স্থান নেই। এজন্য তাকে আমি আমার কবিতার সংকলনেই রাখিনি।’ তাছাড়া কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসেও মুহম্মদ নূরুল হুদার নামের আগে ‘জাতিসত্তার’ শব্দবন্ধটি প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এখন সাধারণ মানুষ তাকে তার স্বাধীনতাবিরোধী লেখালেখি ও অসাধু কর্মকাণ্ডের কারণে জাতিসত্তার পরিবর্তে জাতিহত্যার বেহুদা কবি বলে গালি দিয়ে থাকে। তার দরবেশি আলখাল্লায় এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করতে কার্পণ্য করেননি। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত সরকারের একজন একান্ত খাস অনুগত দাস হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিতি পাওয়া তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার স্বামী জিয়াউর রহমানকে নিবেদন করে যে ভক্তি-গদগদ কবিতা লিখেছেন, তাতে করে তিনি এখন কীভাবে বাংলা একাডেমির ডিজি হন বা ডিজি হয়ে এতটা সময় কীভাবে পার করেছেন, তা এদেশের সকল প্রগতিশীল লেখক-কবি-সাহিত্যিককে হতবাক করে দিয়েছে। তাছাড়া বাংলা একাডেমিতে সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন সময় তার লাম্পট্য, অসততা, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, লেখক-কবিদের ঠকানো মানসিকতা, প্রকল্পের বিষয়ে অস্বচ্ছতা এবং বিএনপি-জামায়াত ও মৌলবাদঘেঁষা তার অতীত জীবনের ফিরিস্তি খতিয়ে দেখলে উঠে আসবে তার সকল জোচ্চুরি ও অনৈতিক কারসাজি।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে লেখা তার ধৃষ্টতাপূর্ণ চরণগুলো এবার পড়া যাক: ‘কালুর ঘাটে মেজর জিয়া/ মুক্ত জাতির মুক্ত হিয়া/ স্বাধীনতার দিলেন ডাক/ অবাক মানুষ হয় সবাক।…’ (কবিতা: বাংলাদেশের আমানি, কাব্যগ্রন্থ: পদ্মাপারের ঢেউসোয়ার, প্রকাশকাল: ২০০৪, ষাট বছরের কবিতা (সংকলন), পৃষ্ঠা: ৮৫৫-৮৫৬)।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে তার ব্যঙ্গাত্মক ‘হাসিনা’ শীর্ষক কবিতাটি আমাদের হস্তগত হয়েছে- প্রশংসার আড়ালে মানুষ কীভাবে মানুষের নিন্দা করতে পারে, কতটা অরুচিকর ও পাঠ-অযোগ্য কবিতা লিখতে পারে, তার বিদ্রূপের খড়গহস্ত কতটা কুৎসিত ও কদর্য হতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকবে এই কবিতাটি। তাছাড়া এই কবিতার সারবস্তুইবা কী- পাঠকমাত্রই তা অনুধাবন করতে পারবেন। কবিতাটি উদ্ধৃতি করছি:
হাসিনা-
জ্বি না,/ মেয়ে নয়, ছেলে।/ মাতা নয়, পিতা।/ পত্নী নয়, পতি।/ নেত্রী নয়, নেতা।/ কথা শুনে হেসেই বাঁচি না।/ অথচ যখন দেখি তখন হাসি না/ নারী নয়, নর;/ শ্যামাঙ্গী শরীর তার জলের নহর। / ছলাৎ ছলাৎ দাঁড়ী, বানেভাসা গাঙেয় বাঙালি,/ হাসি নেই কান্না নেই বেহুয়া কাঙালি।… (রচনাকাল: ৯.৮.৯৫, কাব্যগ্রন্থ: মৌলাধুনিক, ষাট বছরের কবিতা (সংকলন), পৃষ্ঠা নং ৬১৪।
প্রিয় পাঠক, খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা তার অতীব প্রশংসামূলক ‘খালেদা’ শীর্ষক কবিতাটি এবার উদ্ধৃতি করছি: খালেদা তোমার গমনপথে হাঁটে পরিপাটি/ বাংলাদেশ। সুশীতল পাটি, অড়হর, মটরশুটির ডাল, ধানশীষ, গিরিমাটি,/ সরোবর, শাড়ির আঁচল, আমআঁটি/ যখন আকুল করে তুমুল তোমাকে- শাদা বক উড়ে যায়, ছায়া তার পড়ে জলবাঁকে;/ তোমার সুপদ্ম পদ সে মুহূর্তে নদীমাতৃ আঁকে। (রচনাকাল: ৯.৮.৯৫, কাব্যগ্রন্থ: মৌলাধুনিক, ষাট বছরের কবিতা (সংকলন), পৃষ্ঠা নং ৬১৩)।
মুহম্মদ নূরুল হুদার লেখা ‘জিয়া উদ্যান’ শীর্ষক কবিতাটি উদ্ধৃতি করছি: জিয়া উদ্যান এ উদ্যান যুনিফর্ম পরেছে সবুজ। আঁকা ডালপালা / বৃক্ষসেনা সারি সারি রয়েছে দাঁড়িয়ে।/ দুহাত বাড়িয়ে তুমি বুকে টেনে নাও এ কোন স্বদেশ?/ তোমার স্বদেশ ছিলো জবাস্বপ্নময়,/ আকাশে তারার ফুল ফুটে আছে মানব শাখায়,/ বোটলব্রাশের শাখা সাফ করে কবন্ধ হৃদয়। সকালে জগিং শেষে স্বাস্থ্যচারী হরিষে হাঁপায়।/ তোমার স্বদেশ নয় সুখী মানুষের ছায়াপড়া পাথুরে কবরে/ মাটির শয্যায় শুয়ে অনশ্রু শুধু চেয়ে-থাকা, তোমার স্বদেশ নয় খালবিল, জলকেলি, চ্ছলোচ্ছল চাকা, তোমার স্বদেশ নয় ধাবমান হরিণের শিঙ আঁকাবাঁকা।/ তোমার স্বদেশ মানে কর্মযোগী চাঁদ সদাগর/ সবুজ পোশাক পরা হাসিখুশি উদ্যানমানুষ/ নিজ হাতে বানাচ্ছেন সর্পহীন প্রাকৃতিক ঘর,-/ তোমার স্বদেশ নয় মানুষের হাতে গড়া পাষাণ কবর। (রচনাকাল: ৯.৮.৯৫, কাব্যগ্রন্থ: মৌলাধুনিক, ষাট বছরের কবিতা (সংকলন), পৃষ্ঠা নং ৬১২)।
অন্যদিকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হওয়ার পর অর্থের বিনিময়ে তিনি তার রাইটার্স ক্লাবভুক্ত অনেক লেখককে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দিয়েছেন এবং সদস্য করেছেন মর্মে জনশ্রুতি আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং বিভিন্নজনের ফেসবুকে এই সুবিধাবাদী কবি সম্পর্কে নানা অভিযোগ ও অসততার কথা প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি একজন তরুণ কবি, মুজিবপিডিয়ার সহকারী সম্পাদক শিমুল সালাহউদ্দিন পরম্পর ডট কমে একটি নিবন্ধে দেখিয়েছেন যে, কবি নূরুল হুদা সাহিত্যিক চুরিতেও সিদ্ধহস্ত। ‘মহাপরিচালকের মহাচুরি’ শীর্ষক একটি নিবন্ধে তিনি সকল প্রমাণাদিসহ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
নিবন্ধটির লিংক: https://poros-por.com/front/singel/7/41587
তার জন্মজেলা কক্সবাজারের সী বিচে সরকারি সম্পত্তি জবরদখল করে ‘হুদা মঞ্চ’ নামে একটি বেদি স্থাপন করেছেন। স্থানীয় লোকজনসহ নানা পরিবেশবাদী সংগঠন এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অভিমত প্রকাশ করেছেন এবং ঐ মঞ্চটিকে ‘বেহুদা মঞ্চ’ নামে আখ্যায়িত করে থাকেন। সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি, ঐ জায়গায় তিনি তার ছেলের নামে ‘বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করে দোকানপাট ভাড়া দেওয়ার নীলনকশা এঁটে যাচ্ছেন।
বাংলা ইনসাইডার শীর্ষক একটি অনলাইন পোর্টালের ভাষ্যমতে, প্রশাসনের এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখন নব্য আওয়ামী লীগার ও হাইব্রিডদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তার একটি বড় প্রমাণ মুহম্মদ নূরুল হুদা। এখন যিনি মুজিবপ্রেমী, ১৯৯৫ সালে তিনিই ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানের একান্ত ভক্ত এবং তাদেরকে নিবেদন করে স্তুতি ও প্রশংসামূলক কবিতা লিখেছেন। তিনি কীভাবে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের মতো এমন স্পর্শকাতর একটি জায়গা দখল করলেন- সেটি একটি বড় প্রশ্ন। প্রশাসন এবং সরকারের ভেতর খুঁজলে এমন আরও অনেক গিরগিটি গর্ত থেকে বেরিয়ে আসবে এবং যেকোনো সংকটে এরাই সবার আগে রং বদলাবে, যেমন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা সময়ে সময়ে তার রং বদলিয়েছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা আরও জানতে পেরেছি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শ ও চেতনাবিরোধী এবং বিএনপি-জামায়াতের আশীর্বাদপুষ্ট ও জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ সাব্যস্তকারী চরম সুবিধাবাদি কবিতার গিরগিটি কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার মতো ব্যক্তির বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থাকা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর, যা বাংলাদেশের সুস্থধারার শিল্পসংস্কৃতি ও সাহিত্যের জন্য একটি অশনিসংকেত বলে আমরা মনে করি।
ফলে, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ থেকে আমরা অবিলম্বে তার অপসারণ চাই।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply