আরাফার ময়দান বিচার দিবসের হাশরের ময়দানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়; যেখানে সমগ্র মানবজাতি একত্রিত হবে সুবিস্তৃত এক ময়দানে। এ দিবস সবচেয়ে বেশি কল্যাণপ্রাপ্ত দিবস। এ দিবসে আল্লাহ তাআলা তার ক্ষমা, রহমত ও দয়া উপস্থাপন করেন।
আরাফার ময়দান হারাম এলাকার সীমানার বাইরে অবস্থিত। মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় ২২ কি.মি. দূরে অবস্থিত আরাফার ময়দান। এ ময়দানের প্রান্তে দাঁড়িয়েই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
এ দিনের মূল কাজ হলো সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফায় গমন করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা ও দোয়া, জিকির ও ইসতেগফার পাঠ করা। আরাফায় জোহর-আসর সালাত একসাথে পরপর কসর করে আদায় করা এবং সূর্যাস্তের পর আরাফা ত্যাগ করে মুজদালিফায় গমন করা।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হজের সব হলো আরাফায়। (মুসনাদে আহমদ ৪/৩৩৫)
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আরাফা ব্যতীত আর কোনো দিবস নেই যে দিন আল্লাহ তার অধিক বান্দাহকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করেন এবং বান্দাদের সন্নিকটে চলে আসেন।
শয়তান এ দিনে সকল মানুষের আল্লাহর প্রতি জিকির, দোয়া ও ইসতেগফার করতে দেখে সবচেয়ে বেশি হীন ও লাঞ্ছিত হয়ে যায়। ক্রোধান্বিত ও বেদনা বিধুর হয়ে যায়।
৯ জিলহজ মিনায় ফজরের সালাত আদায়ের পর আরাফার উদ্দেশে দলবদ্ধ হয়ে রওনা হতে শুরু করেন হাজিরা। সাধারণত সবাই বাসে যান, তবে হেঁটেও যান কেউ কেউ।
আরাফার সীমানার ভেতর প্রবেশ করে নামিরা মসজিদে ইমামের খুতবা শোনেন হাজিরা এবং জোহর-আসরের নামাজ একসাথে ইমামের পেছনে আদায় করেন তারা। তবে মসজিদে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অধিকাংশ হাজি আরাফার মাঠে তাবুতে একাকি জোহর-আসর একসাথে পড়ে থাকেন।
এখানে নামাজ আদায়ের নিয়ম হলো, জোহরের সময়ের প্রথম দিকে এক আজান ও দুই ইকামাতে যথাক্রমে জোহর ও আসর কসর করে পরপর আদায় করা। এ দুই সালাতের আগে, মধ্যে ও পরে কোনো সুন্নাত পড়ার নিয়ম নেই। আসরের সময়ের আগেই এ দুই ওয়াক্তের নামাজ পড়ে ফেলতে হয়।
আরাফার দিবসের রোজা, পূর্বের এক বছরের ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। তবে এ রোজা হাজিদের জন্য নয়, বরং যারা হজ করতে আসেননি তাদের জন্য। আপনার পরিবারবর্গকে বাড়িতে এ দিনে রোজা রাখতে বলুন। হাজিদের জন্য আরাফার দিনে রোজা রাখা মাকরুহ।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিনে রোজা রাখেননি। তিনি সবার সম্মুখে দুধ পান করেছেন। (মুসলিম ১১৬৩)
সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে গেলে অত্যন্ত বিনয়ী ও তাকওয়ার সাথে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন হাজিরা। এ দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম, এ জন্যই আরাফায় আসেন তারা।
কেবলার দিকে মুখ করে দুই হাত উচুঁ করে চোখের পানি বিসর্জন দিয়ে হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, ক্ষমা চান, দয়া কামনা করেন ও মনের আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ তাআলার কাছে ব্যক্ত করেন।
আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ, দুরূদ ইবরাহীম, তালবিয়াহ, তাকরির, জিকির, ইসতেগফার ও দোয়া করেন বেশি বেশি করে। প্রথমে নিজের জন্য ও পরে পরিবার-আত্মীয়স্বজনদের জন্য তারপর প্রতিবেশী-পরিচিতজনদের জন্য এবং শেষে পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা উত্তম।
আরাফার দিনে এ দোয়া পড়া উত্তম-
لا إله إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ، لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَئْيٍ قَدِيْرِ
লা ইলাহা ইল্লালাহু ওআহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু্, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই-ইন কদির।
‘আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। সকল সার্বভৌমত্ব ও প্রশংসা একমাত্র তারই। তিনি সর্ব বিষয়ের ওপর সর্বশক্তিমান।’ (তিরমিজি ৩৫৮৫)
৯ জিলহজ আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ফরজ। সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পর থেকে আরাফাতে অবস্থানের প্রকৃত সময় শুরু হয়। আরাফার ময়দানে মধ্যপ্রহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব। আর তার সময় শেষ হয় আরাফার দিবাগত রাতের শেষে দশ তারিখের সূর্য উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
আরাফার ময়দানে সূর্যাস্তের পর লাল-হলুদ আভা বিলীন হওয়া পর্যন্ত ধীরস্থির অবস্থান করতে হয় এবং মাগরিবের আজানের পর সালাত আদায় না করেই মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হতে হয়। হাজিরা মাগরিব সালাত আদায় করেন মুজদালিফায় গিয়ে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply