বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৩ অপরাহ্ন

পার্লামেন্ট ভেঙে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা ঋষির

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪

যুক্তরাজ্যের সংসদ ভেঙে আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। দেশটির বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কেইর স্টারমার এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন ‘এ মুহূর্তটির জন্যই দেশ অপেক্ষা করছে’।

যদিও বুধবার সারা দিন ধরে দেশটিতে নির্বাচন নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে ছিল। শেষপর্যন্ত এই ঘোষণায় সব জল্পনার অবসান হলো।

সুনাক বলেছেন, ‘আমার সঙ্গে মহামান্য রাজার কথা হয়েছে। আমি তাকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করেছি। এখন যুক্তরাজ্যের মানুষকে তাদের ভবিষ্যৎ বেছে নিতে হবে। তাদের ঠিক করতে হবে, তারা প্রগতির পথে যাবেন, নাকি আবার পুরনো অবস্থায় ফিরে যাবেন, যেখানে কোনো পরিকল্পনা থাকবে না, কোনো নিশ্চয়তা থাকবে না।’

সুনাক যখন এই কথাগুলো বলছেন, তখন তখন প্রবল বৃষ্টি পড়ছে। তিনি পুরো ভিজে যান। দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা চিৎকার করে বলছেন, ‘থিংস ক্যান ওনলি গেট বেটার’ বা ‘পরিস্থিতি শুধু ভালো হতে পারে’। এটাই এবার লেবার পার্টির প্রচারের থিম সং।

সরকারি বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য মন্ত্রীরা তাদের বিদেশ সফর কাটছাঁট করে চলে আসেন। অনেকে তাদের কর্মসূচি বাতিল করেন। তখনই নির্বাচন নিয়ে জল্পনা আরো গতি পায়।

লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ‘নির্বাচন মানে পরিবর্তনের সুযোগ এসেছে। লেবার পার্টিকে ভোট দেয়ার অর্থ, স্থায়িত্বের পক্ষে ভোট দেয়া, জীবনমুখি নীতির পক্ষে ভোট দেয়া এবং বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে ভোট দেয়া।’

সুনাক এমন সময় নির্বাচন ঘোষণা করলেন যখন জনমত জরিপে ২০২২ সালের অক্টোবরের পর থেকে তার দল কনজারভেটিভ পার্টির অবস্থান সবচেয়ে নিম্নে। বিরোধী লেবার পার্টি তাদের চেয়ে একুশ শতাংশ এগিয়ে আছে।

তবে দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে দাড়িয়ে এক বিবৃতিতে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন তার সরকার শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে যা অর্জন করেছে তাতে তিনি গর্বিত।

ঋষি সুনাক ও স্যার কেইর স্টারমার উভয়েই শুক্রবার জনসমক্ষে আসবেন। ব্রিটেনে প্রায় পাঁচ বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার ধারাবাহিকতায় কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের সমর্থনে দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন সুনাক।

অবশ্য এর আগে মিথ্যা বলার কেলেঙ্কারিতে পড়ে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর নেতৃত্বের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন ঋষি সুনাক। কিন্তু তাকে হারিয়ে তখন কনজারভেটিভ পার্টির যে নেতা প্রধানমন্ত্রী হন, সেই লিজ ট্রাস মাত্র দেড় মাস ক্ষমতায় থাকার পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এরপর আবারও নেতৃত্বের জন্য তার প্রার্থিতা ঘোষণা করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়ে দলের নেতা ও পরে প্রধানমন্ত্রী হন সুনাক। নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর শুক্রবারই স্থগিত হবে পার্লামেন্ট।

সুনাক বলেছেন তিনি ‘প্রতিটি ভোটের জন্য লড়াই’ করবেন। অনেকেই ধারণা করেছিলো যে নির্বাচনটি শরৎকালে হবে কারণ সেটি হলে লেবার পার্টির সঙ্গে জনমতের যে পার্থক্য তা কিছুটা ঘুচিয়ে আনা সহজ হতো বলে অনেকে মনে করেন।

স্যার কেইর স্টারমার বলেছেন ‘টোরিদের নৈরাজ্য’ থেকে সরে পরিবর্তনের সময় এটাই।

জাতীয় জনমতগুলোতে লেবার বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছে এবং এখন তারা পূর্ণ প্রচারণায় নেমে পড়তে প্রস্তুত। শুক্রবার সংসদ স্থগিত হয়ে যাবে। এর আগে বৃহস্পতিবার এর কার্যক্রম বন্ধ হবে। তারপর পাঁচ সপ্তাহের নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হবে।

এর মানে হলো গুরুত্বপূর্ণ কোনো আইন থাকলে তা পাশের জন্য মাত্র দুদিন সময় আছে। ফলে সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হয়তো পড়েই থাকবে।

এর আগে নির্বাচনের জন্য অক্টোবর কিংবা নভেম্বরের কথা ভাবা হয়েছিলো। কিন্তু বুধবার সকালে যখন মূল্যস্ফীতি তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয় তখনি গুঞ্জন শুরু হয়।

এমনকি হাউজ অব কমন্সে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরের সময়েও ঘোষণাটি আসবে কি না তা পরিষ্কার ছিল না। পরে ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে দেয়া বিবৃতিতে সুনাক মূল্যস্ফীতির কথা উল্লেখ করেন এবং নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। কিছুদিন ধরে জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়টিকে ঘিরেই যে তিনি প্রচারণা চালাবেন এটি তারই লক্ষণ বলে মনে করা হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি কমে আসা এবং মন্দা থেকে উত্তরণের কথা উল্লেখ করে সুনাক বলেছেন, ‘এগুলো প্রমাণ করে যেসব পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকার নেয়া হয়েছিলো সেগুলো ঠিক মতো কাজ করেছে’।

তবে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত কিছু তিনি বলেননি। কনজারভেটিভ পার্টির একাংশের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা কাজ করছিলো।

ওদিকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার কিছু সময় পরেই টিভিতে দেয়া বিবৃতিতে স্যার কেইর বলেন টোরিদের ‘নৈরাজ্য’ দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করেছে। তিনি বলেন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য নির্বাচন তার দলের কাছে একটি সুযোগ।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা স্যার এড ড্যাভি বলেছেন ঋষি সুনাকের বাজে সরকারকে সরানোর এটাই একটি সুযোগ হতে পারে। আর রিফর্ম ইউকে নেতা রিচার্ড টাইস বলেছেন টোরিরা ‘ব্রিটেনকে ভঙ্গুর করেছে কিন্তু লেবার করবে দেউলিয়া ব্রিটেন’।

-বিবিসি বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS