রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ অপরাহ্ন

লিচু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাজপুরের চাষিরা

মোঃ রুমন সরকার
  • আপডেট : সোমবার, ২০ মে, ২০২৪
  • ২৭৬ Time View

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অতিরিক্ত গরমে দিনাজপুরে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। টানা গরমে এভাবে গুটি ঝরে পড়তে থাকলে লোকসানে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা। তারা বলছেন, এখন বৈরী আবহাওয়া চলছে। রাতে ঠান্ডা ভাব, দিনে প্রচণ্ড গরম। এ কারণে ঝরে যাচ্ছে। ফলে চলতি মৌসুমে লিচুর ফলনে বিপর্যয় হতে পারে।

বাগানের মালিকরা জানিয়েছেন, লিচুর গুটি বড় হয়েছে। রঙ এসেছে, তবে এখনও পরিপক্ব হয়নি। দুই সপ্তাহ পর পরিপক্ব হবে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে গাছেই ঝলসে যাচ্ছে ফল, সেইসঙ্গে ফেটে ঝরে পড়ছে।  

দিনাজপুর লিচুর জন্য খুবই পরিচিত। অন্যান্য স্থানের তুলনায় এখানের লিচু বেশি রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় আলাদা সুনাম আছে। জেলার সব উপজেলায় কমবেশি আবাদ হয়। সবচেয়ে বেশি হয় সদরের মাসিমপুর, উলিপুর, আউলিয়াপুর, মহব্বতপুর, বিরলের মাধববাটি, করলা, রবিপুর, রাজারামপুর, মহেশপুর, বটহাট, চিরিরবন্দর ও খানসামায়। মাটির গুণাগুণ ভালো হওয়ায় দিন দিন চাষে আগ্রহ চাষিদের। গত বছর ফ্রান্সে রফতানি হয়েছিল। এ বছরও রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর দিনাজপুরের পাঁচ হাজার ৮৭৮ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। গত বছর পাঁচ হাজার ৭৭১ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। এখনও লিচু পরিপক্ব হয়নি। সবু রঙ এসেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবার বড় হয়নি। তবে দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আসবে।

চাষি ও বাগানিদের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় প্রতি বছর ৫৫০-৬০০ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হয়।সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয় চায়না থ্রি লিচু। গত বছর একটি চায়না থ্রি লিচু বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ২৬ টাকা। পাশাপাশি বেদেনা ও হাড়িয়া জাতের লিচুরও দামও বেশ ভালো। তিন জাত ছাড়াও জেলায় মাদ্রাজি, কাঁঠালি, বোম্বাই ও মোজাফফরপুরী জাতের লিচু উৎপাদন হয়।

বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচু। এর মধ্যে কিছু ঝলসে কালো হয়ে গেছে। কিছু আবার ফেটে গেছে। মাসিমপুর, গোপালগঞ্জ, মাস্তানবাজার, কাটাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার গাছের চিত্র একই। চাষিরা বলছেন, যেভাবে লিচু ফেটে ঝলসে যাচ্ছে, তাতে লোকসান ছাড়া লাভের উপায় থাকবে না।

বাগান মালিকরা জানিয়েছেন, এবার গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। তা থেকে পর্যাপ্ত গুটি হয়েছিল। এতে লাভের আশা করেছিলেন। তবে গরমে অনেক গুটি ঝরে গেছে, শেষ সময়ে কিছু আবার ঝলসে গেছে, শুকিয়ে গেছে। ফলে বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্প্রে ও বালাইনাশক স্প্রে করেও কাজ হচ্ছে না।

বটতলা এলাকায় ২৮টি গাছের একটি বাগান ৭০ হাজার টাকা লিজ নিয়েছেন বাগানি তানভীর ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লিচুর অবস্থা খারাপ। বৃষ্টির দেখা নেই। রোদে কিছু পুড়ে যাচ্ছে, আবার ফেটে যাচ্ছে। সেগুলো ঝরে পড়ছে প্রতিদিন। স্প্রে করছি। কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে না। আরও ১০ দিন পর লিচু পাকতে শুরু করবে। এভাবে চলতে থাকলে লোকসান গুনতে হবে।’

জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হলেও দিনাজপুরে হয়নি। এর মধ্যে একদিন কয়েক মিনিটের জন্য সামান্য বৃষ্টি হলেও তা চাষিদের উপকারে আসেনি। তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। 

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘শনিবার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি, বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি, বুধবার সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রি আর মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে কিছু ঝরে পড়ছে। এতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না। চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। পরামর্শ অনুযায়ী তারা পরিচর্যা করছেন।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS