আল্লাহ তা’আলা রমজানুল মোবারক দিয়েছেন আমাদেরকে ক্ষমা করার জন্য। আমাদের ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, অবহেলায়, অসতর্কতায় এমন সব ভুল আমরা করে থাকি যেগুলোর কারণে আমরা সিয়ামের স্বাদ, নেকি ও উপকার থেকে বঞ্চিত হই।
হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, রমজান মাসে যারা সিয়াম পালন করেন তাদের দুটি শ্রেণি রয়েছে। এদের মধ্যে একশ্রেণির মানুষের পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হয়। অপর শ্রেণির অভুক্ত থাকার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না।
এই প্রথম শ্রেণির মানুষদের ব্যাপারে ব্যাপারে নবীজী বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং আল্লাহর নিকট সাওয়াব অর্জনের খাঁটি নিয়তে রমজানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ সহি বুখারি – ২/৬৭২।
দ্বিতীয় শ্রেণির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অনেক সিয়াম পালনকারী আছে যাদের সিয়াম থেকে শুধু ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া আর কোনো লাভ হয় না। অনেক কিয়ামকারী আছে যাদের কিয়াম-তারাবিহ থেকে শুধু রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কোনোই লাভ হয় না।’ ইবনু মাজাহ-১/৫৩৯।
দুইজন রোজাদার-একজন যৎসামান্য খাবার খেয়ে, সারাদিন সিয়ামরত অবস্থায় জিকির, তেলাওয়াত, তাসবিহাতসহ অন্যান্য এবাদত বন্দেগী করেও সিয়ামের ক্লান্তি নেই। অপরজন পেট পুরে খেয়ে সারাদিন মিথ্যা, গিবত, শিকায়েত, পরনিন্দা করে সিয়ামে কাহিল হয়ে রোজা রাখা কষ্টের বলে খোঁড়া অজুহাত দাঁড় করায়। সিয়াম পালনকারীর জন্য শারীরিক শক্তির চেয়েও আত্মিক শক্তির প্রয়োজনটা অনেক বেশি।
আমাদের ভুলগুলো-
১. মিথ্যা বলা: নবীজী বলেছেন যে সিয়াম রেখেছে অথচ মিথ্যা পরিহার করেনি, তার এই কৃত্রিম পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন আল্লাহর নেই।
২.গীবত ও পরনিন্দা করা: নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে দুজন মহিলা উপস্থিত হয়ে শেকায়েত করলো যে, সিয়ামে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। পিপাসায় প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। এ অবস্থা শুনে তিনি লোকমারফত তাদের বমি করার আদেশ দিলেন, দেখা গেল তাদের গলা দিয়ে গোশতের টুকরা ও তাজা রক্ত বের হয়েছে। সাহাবীরা অবাক হলেন। তখন নবীজী বললেন, এরা হালাল খাদ্য দিয়ে সাহরি খেয়ে সিয়াম রেখেছে, কিন্তু সিয়াম এর অবস্থায় হারাম খেয়েছে। অর্থাৎ মানুষের গিবত করেছে, আর গিবত করার অর্থই হলো মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া। (মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং ২৩৬৫৩)।
আমাদের অন্যান্য ভুলগুলোর মধ্যে রয়েছে, সুদ, ঘুষ, ঝগড়া, মাপে কম দেওয়া, ফোনে কিংবা সরাসরি পরনারী কিংবা পরপুরুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলা, দেখা সাক্ষাৎ করা ইত্যাদি।
আমরা রমজানে দিনের বেলা হালাল খাদ্যকে পরিহার করেছি আল্লাহর ভয়ে। অথচ রমজান ও রমজানের বাইরে যা আমাদের জন্য হারাম কিংবা মাকরুহ ছিল, আমরা তা পরিহার করিনি। তাহলে আমরা আল্লাহকে কীভাবে ভয় করি?
আল্লাহ কোরআনে বলছেন, তোমরা রোজার সময় দিবসে পানাহার কর না। এর পরের আয়াতেই আল্লাহ বলেন, তোমরা অপরের সম্পদ অবৈধভাবে ‘আহার’ কর না।
এখন আমরা প্রথম আয়াতটি মেনে দিনের বেলায় ঘরের খাবার গ্রহণ করি না, কিন্তু পরের আয়াতটি না মেনে সুদ, ঘুষ, জুলুম, চাঁদাবাজি, যৌতুক, মিথ্যা মামলা, জবরদখল, সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখল ইত্যাদি নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে অন্যের সম্পদ ‘আহার’ করছি। তাহলে আমরা কেমন রোজাদার?
মাশায়েখরা সিয়ামের সাতটি আদবের কথা উল্লেখ করেছেন, যা মেনে চললে সিয়াম হবে নূর, সিয়াম হবে আমাদের সুপারিশকারি। এগুলো হচ্ছে-
১.নজরের হেফাজত করা।
২. জবানের হেফাজত করা।
৩. কানের হেফাজত করা।
৪.দেমাগের হেফাজত করা।
৫.জিকির ও তেলাওয়াত অধিক পরিমাণে করা।
৬.হালাল খাদ্য দিয়ে সাহরি ও ইফতারি করা।
৭. সিয়াম নষ্ট হয়ে যায় কিনা এই ভয়ে ভীত থাকা এবং আমল কবুলের জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিষিদ্ধ জিনিসগুলো থেকে বেঁচে থেকে সঠিকভাবে সিয়াম পালনের তৌফিক দান করুন। আমিন।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply