সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণে নীতিগত একমত সব রাজনৈতিক দল চমক রেখে বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার দল ঘোষণা ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও ৩ জাতীয় পার্টির মহাসচিব হলেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী রেফ্রিজারেটরে অল রাউন্ড কুলিং ফিচার থাকা জরুরী কেন? ডেবিট কার্ডে লেনদেনে সেরা ১০ জন গ্রাহককে পুরস্কৃত করল আইএফআইসি ব্যাংক ওয়ালটনের প্যাসেঞ্জার কার ব্যাটারি ‘গ্রাভিটন’ উদ্বোধন করলেন কন্ঠশিল্পী তাহসান ইউনিয়ন ব্যাংকে বিনিয়োগ আদায়ে জোর তৎপরতা ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন আদিল চৌধুরী ক্যালিফোর্নিয়ায় ৩০০ কৃষি শ্রমিক পাঠাবে ওয়েদার এন্ড ক্লাইমেট চেইঞ্জ গ্রীন হাউস ইফেক্ট লিমিটেড

অধ্যক্ষকে না জানিয়ে কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থীকে ফুসলিয়ে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর মো. মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষাণার্থীদের কাছ থেকে পাশ করিয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ার অভিযোগে সংবাদ প্রকাশের পর ক্ষেপে উঠেছেন তিনি। পত্রিকা অফিসে এসে ঘুষ দিতে না পেরে সাংবাদিককে দিয়েছেন হুমকি। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে সাংবাদিকের ওপর আক্রশ তোলার চেষ্টায় আছেন তিনি। সংবাদ প্রকাশের পর মনিরুজ্জামান কূল কিনারা না পেয়ে অল্প কয়েকজন অকৃতকার্য প্রশিক্ষণার্থীকে ফুসলিয়ে ঝটিকা মানববন্ধন করেছেন। তবে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ বলছেন, মানববন্ধনের ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। ইতোপূর্বেও মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ছিল। বিষয়টিতে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিভিন্ন ট্রেডে নিয়মিত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্কিলস্ ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (SEIP) এর আওতায় চুয়াডাঙ্গা টিটিসিতে অন্যান্য প্রশিক্ষণের সাথে মোটর ড্রাইভিং উইথ বেসিক মেইনটেন্যান্স প্রশিক্ষণও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেইপ প্রকল্পের আওতায় এই প্রশিক্ষণের বেশ কয়েকটি ব্যাচ প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। সেইপ প্রকল্পের চুক্তিভিত্তিক ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে চুয়াডাঙ্গা টিটিসির সামনেই ভিমরুল্লাহ গ্রামের মো. মনিরুজ্জামান ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। প্রশিক্ষণার্থীদের ফেল করানোর ভীতি দেখিয়ে জনপ্রতি ২ হাজার ৫ শ টাকা করে নিয়েছেন তিনি। ঘটনাটি একটি স্থানীয় দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর জানাজানি হয়। এর আগে সোমবার রাতে ওই সংবাদকর্মীর অফিসে গিয়ে সংবাদ বন্ধের জন্য ঘুষ দিতে চাইলে সংবাদকর্মী না নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে মঙ্গলবার তাকে হুমকি দেন মনিরুজ্জামান।

এর আগে সোমবার রাতে দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকা অফিসে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেন টিটিসির ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর মো. মনিরুজ্জামান। ওই পত্রিকা অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে মনিরুজ্জামানের দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টার ভিডিও দেখা যাচ্ছে। তবে ওই সংবাদকর্মী দীর্ঘক্ষণ তাকে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করলেও তিনি ওই অফিসেই দাড়িয়ে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ওই সংবাদকর্মী হাত জোড় করে টাকা না নিয়ে টিটিসির ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর মো. মনিরুজ্জামানকে ফেরত পাঠান। ভিডিও ফুটেজে বিষয়টি স্পষ্ট প্রতীয়মান।

মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে চুয়াডাঙ্গা টিটিসিতে তিনি নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছেন। নিয়ম—কানুনের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো আসা—যাওয়া করেন। তার ভাই তরিকুল ইসলাম লাবলু এই ট্রেডের সহকারী প্রশিক্ষক। দুই ভাই মিলে অনেকটাই ইচ্ছামতো নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তবে প্রশিক্ষণ প্রদানে যেমন ফাঁকি দেন, তার থেকে বেশি নির্ধারিত ড্রাইভিং পরীক্ষার সময়ে তাদের আচরণ বদলায়। প্রশিক্ষণার্থীদের ফেল করানোর নানা রকম হুমকি—ধমকি দিয়ে প্রতি ব্যাচেই তারা নেন মোটা অংকের টাকা। জনপ্রতি আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা বা তার বেশিও নেওয়ার অভিযোগ আছে।

চুয়াডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, স্কিলস্ ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম এর আওতায় চুয়াডাঙ্গা টিটিসিতে সকাল—বিকেল মিলে মোট চারটি ব্যাচের ৯০ জন প্রশিক্ষণার্থীর পরীক্ষা ছিলো গতকাল মঙ্গলবার। চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ—এর মাধ্যমে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে পরিক্ষায় অংশ নেওয়া টিটিসির ৮৫ জন প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে ৫৯জনই পরিক্ষাতে অকৃতকার্য হয়েছেন।

নতুন করে অভিযোগ উঠেছে, যেসব প্রশিক্ষণার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন তাদেরকে ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর মো. মনিরুজ্জামান বোঝাচ্ছেন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের কারণে তারা পাশ করতে পারেনি। প্রশিক্ষণার্থীদের পরবর্তীতে একই মাধ্যমে পাশ করানোর নানা রকম কথা দিয়ে ফুসলিয়ে তুললেও তাদের থেকে নেওয়া টাকা তিনি ফেরত দেননি।

প্রশিক্ষণার্থীদের অভিযোগ, প্রশিক্ষণের বাকি সব ক্লাস ঠিকঠাক হলেও ব্যবহারিক ক্লাসে প্রশিক্ষকরা সময় দেন খুবই কম। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময় থেকেই তারা প্রশিক্ষণার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে নানা ভীতি দেখান। টাকা না দিলে কেউ পাশ করে না, যে টাকা দেবে না, তার দায়িত্ব তার নিজের। এই ধরনের নানা কথায় চাপে রাখেন প্রশিক্ষণার্থীদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, ‘শুরু থেকেই মনির স্যার ও তরিকুল স্যার আমাদের কাছে টাকা দাবি করে আসছেন। টাকা না দিলে ফেল করব, তারা আমাদের দায়িত্ব নিবে না, এমনটাই বলা হয়ে থাকে। মনির স্যার তো কখনো কখনো বলে থাকেন, যে টাকা দিবা না, সে পাশও করবা না। প্রশিক্ষণ নিয়ে লাভ নেই। বাড়ি যাও।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, ‘আমার বাড়ি জীবননগর উপজেলায়। আমার আব্বু একজন প্রতিবন্ধী। খুব কষ্টে আমাদের সংসার চলে। যাতায়াত ভাতা দেওয়ায় আমি সেইপ প্রকল্পের এই প্রশিক্ষণে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু দূর থেকে আসা যাওয়ার নানা সমস্যা থাকায় আমি যাতায়াত ভাতার কথা ভেবে চুয়াডাঙ্গায় ম্যাসে উঠেছি। তবে ড্রাইভিং প্রশিক্ষক মনির স্যারের আচরণে আমি খুব টেনশনে ছিলাম। প্রথম থেকেই তিনি পাশ করার জন্য টাকা দাবি করেছিলেন। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা জানিয়ে আমি স্যারকে অনুরোধ করেছিলাম, আমার টাকাটা যেন না নেওয়া হয়। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তোমার কোর্স করতে হবে না। তুমি পাশ করবা না। তোমার দায়িত্ব আমার না। শেষ পর্যন্ত আমি অনেক কষ্টে আড়াই হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি।’

এদিকে, টিটিসির ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর মো. মনিরুজ্জামান ও তার ভাই একই ট্রেডের সহকারী প্রশিক্ষক তরিকুল ইসলাম লাবলুর বিরুদ্ধে এর আগের প্রতিটি ব্যাচের প্রশিক্ষাণার্থীদের থেকেও মোটা টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যারা দেয়নি, তাদের পাশ করানো হয়নি বলেও জানিয়েছেন পূর্বের ব্যাচের একাধিক প্রশিক্ষণার্থী। পূর্বের ব্যাজের এক প্রশিক্ষণার্থী বলেন,

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিটিসির ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর মো. মনিরুজ্জামান প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে অভিযোগ অনেকটাই স্বীকার করে বলেন, ‘প্রশিক্ষণার্থীদের ড্রাইভিংয়ে পাশ করানোর জন্য নিঃস্বার্থ কিছু টাকা নিলেও আমি তা ফেরত দিয়ে দেব।’

অপরদিকে, ঘুষ দিতে ব্যার্থ হয়ে টিটিসির ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর মো. মনিরুজ্জামান অকৃতকার্য কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থীকে সাথে নিয়ে নিজে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ছোট্ট একটি মানববন্ধন করার চেষ্টা করেন। ওই মানববন্ধনে টিটিসির ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর মো. মনিরুজ্জামান টিটিসির অধ্যক্ষের কথায় এসছেন বলে জানালেও টিটিসির অধ্যক্ষ মানববন্ধনের বিষয়টি সম্পূর্ণ জানেন না বলে জানিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মো. মুছাব্বেরুজ্জামান বলেন, আমি মানববন্ধনের বিষয়ে কিছু জানিনা। যদি আমার নাম কেউ করে থাকে, তাহলে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। টিটিসির অধ্যক্ষ আরও বলেন,‘মনিরুজ্জামান সাহেবের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ আমি আগেও পেয়েছি। এবার বিস্তারিত জানার পর বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখব। প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমার ক্যাম্পাসে সেনাবাহিনী ক্যাম্প করায় ১৩ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ। তবে অফিস খুললেই এ বিষয়ে আমি ব্যবস্থা নেবো। তিনি আরও জানান, ‘গত কয়েক দিন আগে সেইপ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এটি এই চুক্তির সর্বশেষ ব্যাচ। মো. মনিরুজ্জামান ও তার ভাই দুজনেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত। তাদের চুক্তির মেয়াদও এই ব্যাচের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।’ মঙ্গলবারের পরিক্ষায় কতজন পাশ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৮৫জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ২৬ জন পাশ করেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS