বরিশাল প্রতিনিধি: বরিশাল নগরীজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র। নাগরিক ব্যস্ততা কাটিয়ে এসব জায়গায় ভীড় করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। পরিবার কিংবা পরিচিত মানুষদের নিয়ে কিছুটা ভালো সময় কাটাতে এই জায়গাগুলোতে আসেন অনেকে।
তেমনি নাগরবাসীর কথা চিন্তা করে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক লাগোয়া বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সিঅ্যান্ডবি রোডে তৈরি করা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম পার্ক। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ,র তার মায়ের নামে এই পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে।
পার্কটিতে প্রবেশ করলেই দেখা মিলেবে, উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই,নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান,ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই এই প্রতিবাক্যর কাছেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তার পরিবারের সদস্য ও ৭১ এর শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপরুপ মাটির ভাস্কর্য অন্য দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম পার্ক নাম লেখা নিচেই সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ,র ও তার মায়ের ভাস্কর্য রাতে অপরুপ লাল-নিল বাতির সাথে পানির ফ্লায়ারা দেখতে অনেকেই ভিড় জমায় এখানে। ধনী-গরীব নয়,সকল বয়সী মানুষের জন্য এ পার্কটি বিনামূল্যে ফ্রি এ বিকাল ৪ টা থেকে প্রতিদিন রাত ৮ টা পর্যন্ত উম্মুক্ত থাকে।
পার্কের রয়েছে, শিশুদের খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন ধরনের দোলনাসহ ১৪টি খেলনা, যেখানে ৭৫ শিশুর আসন বিন্যাস রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে একটি খেলার মাঠ। ট্রেন, উড়োজাহাজ, উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নভোযান, রোমাঞ্চ চক্র, আনন্দ ঘূর্ণি, বিষ্ময় চক্র, এসো গাড়ি চড়ি, চাকা পায়ে চলা, লম্ব ঝম্ব, ঝুলন্ত চেয়ার, ফুলদানি আমেজ ও এফ-৬ (জঙ্গি বিমান) ফেরিস হুইল স্কেটিং রিং, মেরি গো রাউন্ডসহ বড়দের জন্য একাধিক বসার বেঞ্চ, ছোট-বড় ফুলের বাগান।
আলোকসজ্জায় রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া, ডিজিটাল আলোকসজ্জায় সজ্জিত পার্কের বিভিন্ন স্থান তৈরি করে দিয়েছে ভিন্ন এক জগৎ। সীমানা প্রাচীরসহ পুরো পার্কে ৭০টি বৈদ্যুতিক বাতির সংযোজন করা হয়েছে। তবে আলোকসজ্জায় সজ্জিত ছয়টি খুঁটি এনে দিয়েছে পার্কের ভিন্নতা। প্রতিদিন শিশুদের নিয়ে তাদের অভিভাবকরা পার্কের ভেতরে প্রবেশ করে এবং শিশুরা বিভিন্ন রাইডে চড়ে বিনোদন উপভোগ করে। ছোট শিশু রা্ইসা জাহান রসনি জানান, প্রায়দিন মা বাবার সাথে পার্কে এসে আমার এ জায়গায় এসে অনেক বন্ধু হয়েছে। তাদের সাথে দোলনায়, ট্রেন, উড়োজাহাজ, উড়ন্ত বিমানে চড়ে অনেক মজা করি।
রসনি,র বাবা ইসমাইল হোসেন বরিশাল এলজিইডি অফিসের উপ সহকারী প্রকৌশলী তিনি বলেন, কর্মব্যস্ততায় পরিবার,কে সময় দেওয়া হয় না তাই যখনি সময় পাই পরিবারকে বিশেষ করে মেয়েকে খেলাধুলা বিনোদন দিতে এই পার্কে নিয়ে আসি। বরিশালের অন্য পার্কের চেয়ে এই পার্কে শিশুদের খেলাধুলা জন্য অনেক ধরনের সরঞ্জাম রয়েছে । এ ছাড়াও এ খানে বীর মুক্তিয়োদ্ধাদের মাটির ভাস্কর্য রয়েছে যা দেখে শিশুরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ছে।
পার্কে ঘুরতে আসা বরিশাল সরকারী হাতেমালী কলেজের ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থীরা সাজিদ হাচান বলেন, আমিও আমার বন্ধু অনেক সময় প্রাইভেট শেষ করে এখানে ঘুরতে আসি টাইম পার্স করি ভালো লাগে। এটা আমাদের জন্য দরকারও সব সময় পড়াশুনার মধ্যে থাকতে একটা বেশি ভালোও লাগে না । ফ্রি টাইমের জন্য বিনোদন কেন্দ্র এটা আমাদের জন্য দরকারও সরকারকে এটা করার জন্য ধন্যবাদ জানাই ।
সরকারী বিএম কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাচান পার্কে রাতে ঘুরতে এসে জানান, আমি বরিশালের চেীমাথা পার্কের আসে পাশে বসবাস করি । প্রতিদিন আমার বন্ধুদের নিয়ে পরন্ত বিকেলে পার্কে ঘুরতে আসি । সত্যি কথা বলতে এই পার্কটি দেখতে অনেক সুন্দার এখানে বরিশালের শত শত মানুষ ঘুরতে আসে বিভিন্ন রকমের ফুলের গাছ রয়েছে শিশুদের জন্য খেলার জন্য অনেক কিছু রয়েছে যার জন্য এই পার্কে এসে আমরা আনন্দ উপভোগ করি । বরিশাল শহরে বিনোদন পার্ক বেশি নেই তাই এই ধরনের পার্ক আমাদের আরো প্রয়োজন ।
পার্কের দর্শনার্থী ইসরাত জাহান ইভা জানান,আমাদের বরিশাল শহরে বিনোদন কেন্দ্র অনেক কমেই আছে সে হিসাবে অনেক উপকার হয়েছে । প্রতিদিন বিকালে এখানে আসা যায় । এখানে বসার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালো আমরা নারীরা এখানে অসলে হয়রানীর শিকার হতে হয় না । আমি বাংলাদেশ সরকারকে আরো বিনোদন কেন্দ্র করার বিনোদন জগৎ এ আমাদের আনার এবং মন মানসিকতা তৈরি করার প্রচেষ্টা করার জন্য ধন্যবাদ জানাই ।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ আমরা কখনোই শোধ করতে পারবো না। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা যুদ্ধ করেছিলেন। তাদের ত্যাগের বিনিময়েই আমরা ডিসি, মেয়র ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে পেরেছি। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার মা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী। তার চোখের সামনে ৪ বছরের শিশু আমার বড় ভাই সুকান্ত বাবুকে হত্যা করা হয়েছে। আমি নানা প্রতিকূলতা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আমার মা এবং সকলের দোয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছি। এই শহরে খেলাধুলার কোনো জায়গা নেই। প্রতিটা এলাকায় শিশু কিশোরদের জন্য সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া চর্চার ব্যবস্থা চেষ্টা থাকে তরুণরা আগামীর ভবিষ্যত এদের কাজে লাগাতে হবে। এজন্য আমি বরিশালের প্রত্যেকটি এলাকায় পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করছি।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের মে মাসে বরিশাল নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্কটি নির্মাণ করা হয় ।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply