নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডে জরাজীর্ণ ঝুপড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন এক অসহায় দম্পতি। ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে যায় বিছানাপত্র। ছোট ছোট ৪ শিশু সন্তান নিয়ে বৃষ্টি নামলে গায়ে পলিথিন জড়িয়ে কেটে যায় তাদের রাত।
বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডে ৫৫ বছর বয়সী আলমগীর রিকশা চালাতেন। বছর দুই আগে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে মেরুদন্ডে আঘাত পেয়ে বিছানায় পড়ে থাকেন তিনি। অসহায় আলমগীর তার অসুস্থ স্ত্রী মুকুল বেগম ও চার শিশু সন্তান নিয়ে দুই শতাংশ জমির উপর নির্মিত বাঁশের চাটাই ও পলিথিনের জরাজীর্ণ ঝুপড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। বর্তমানে বসবাসের একমাত্র আশ্রয় ঝুপড়িটি জরাজীর্ণ হওয়ায় একটু ঝড়-বৃষ্টিতেই ভিজে যায় বিছানাপত্র। অনেক সময় বৃষ্টি আসলে না থামা পর্যন্ত কাথা বালিশ মুড়িয়ে ঘরের এক কোণায় অপেক্ষা করতে হয় তাদের। পলিথিন গায়ে দিয়েই বৃষ্টির রাতগুলো কাটে তাদের। এভাবেই মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে ওই পরিবারটি। আলমগীরের উপার্যনযোগ্য সন্তান না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনার পরে সাত বছরের কন্যা সুমাইয়া ভিক্ষা করে সংসারের হাল ধরেন।
গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর ‘ভিক্ষা করে সংসার চালায় শিশু সুমাইয়া’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নজরে আসে। পরে তিনি শিশু সুমাইয়াকে স্কুলে ভর্তি করান ও তার লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও অসুস্থ আলমগীরকে চিকিৎসা করাতে ১০ হাজার টাকা দেন। আলমগীরের স্ত্রী মুকুল বেগম সংসার চালাতে ছোট শিশু কোলে নিয়ে এখনও হাট বাজারে ভিক্ষা করেন।
আলমগীরের স্ত্রী মুকুল বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ঝুপড়ি ঘরের একদিকে রান্নার জন্য কিছু লাকড়ি আর অন্যদিকে থাকার বিছানা। বৃষ্টি আসা মাত্রই সবকিছু ভিজে যায়।’ জীবন কতটা অসাহায় সেই ঘটনা তুলে ধরে তিনি জানান, এর আগে আমার বিবাহ হয়েছিল ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার খোকন নামের এক হকার ব্যবসায়ীর সঙ্গে। সেখানে তার দুই সন্তানের জন্ম হয়। প্রথম সন্তান সুমাইয়া, দ্বিতীয় সন্তান হালিমা। আড়াই বছর হলো তার আগের স্বামী স্টক করে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার দুই কন্যা সন্তান সুমাইয়া ও হালিমাকে নিয়ে তখন তিনি অসহায় হয়ে পরেন। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের ভ্যানগাড়ি চালক আলমগীর হোসেনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়েতে আবদ্ধ হই। এই ঘরেও আমার দুই কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। আমার স্বামী আলমগীর হোসেন ভ্যানগাড়ি চালাতেন। সড়ক দুর্ঘটনায় দীর্ঘদিন শারীরিক অসুস্থতায় ভুগতেছে। কর্মহীন হয়ে পরেছেন তিনি। ছয় জনের এই সংসারের হাল ধরেছি, তাই এখন ভিক্ষা করি। এদিকে, সুমাইয়ার পরিবারকে আশ্বাস দিয়েছিলেন বিত্তবানরা ও রাষ্ট্রীয় কর্তারা। কিন্তু একটি চাউলের কার্ড পর্যন্ত দেয়নি কেউ। একটি শিশুও সমাজের বোঝা নয়, কথায় থাকলেও বাস্তবে তা বহুদূর। ছোট ছোট শিশুগুলোর পরনে নেই কাপড়, নেই তাদের মাথা গোজার ঠাই। চোখের জলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চান সুমাইয়ার মা। বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল জানান, অসহায় সুমাইয়ার পরিবারের পাশে ছিলাম। তাদের একটা ঘরের জন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে শিঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply