শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন

টানটান উত্তেজনার ম্যাচে সিরিজ জয় বাংলাদেশের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩

মাঝারি লক্ষ্যে খেলতে নামা আয়ারল্যান্ড ইনিংসের শুরু থেকেই রান তুললে হাঁসফাঁস করেছে। তবে উইকেটের দেখা পেতে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। মুস্তাফিজের ফুল লেন্থের ডেলিভারিতে স্টিফেন ডোহানি উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন। মাত্র ১৭ রানে প্রথম উইকেটের পতনের পর দ্বিতীয় উইকেটে শতরানের জুটি গড়েছেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার। পল স্টার্লিং ও অ্যান্ড্রু বালবির্নি।

বাংলাদেশের বোলারদের কোনো সুযোগই দেননি তারা। মাত্র ৫৮ বলে ক্যারিয়ারের ১৪তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন স্টার্লিং। খানিক বাদে ৭১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন বালবির্নি। হাফ সেঞ্চুরির পর ইবাদত হোসেনের বলে ডিপ অঞ্চলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে রনি তালিকদারের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে আউট হন বালবির্নি। এর ফলে শেষ হয় তার ৫৩ রানের ইনিংস।

হাফ সেঞ্চুরির পর আরেক ব্যাটার স্টার্লিংকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে খেলতে গিয়ে থার্ড ম্যান অঞ্চলে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। এরপর অবশ্য লরকান টাকার ও হ্যারি টেক্টর মিলে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস টানেন। এই দুজনের অর্ধশতরানের জুটিতেই দলীয় দুইশো পেরিয়ে যায় আইরিশরা।

পরপর দুই ওভারে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুস্তাফিজুর রহমানের জোড়া আঘাতে আবারও ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ। উইকেটে জমে যাওয়া টেক্টর ও টাকারের জুটি ভাঙলে তামিম দারস্থ হন অনিয়মিত বোলার শান্তর। শান্তর বলে পুল করতে চেয়েছিলে টেক্টর। কিন্তু ব্যাটে-বলে না হলে তা ধরে পড়ে ওয়াইড লং অনে লিটনের হাতে। পরের ওভারে কার্টিস ক্যাম্ফার মুস্তাফিজের বলে মিড অফে ক্যাচ দেন তামিম ইকবালের হাতে। এরপর জর্জ ডকরেলকেও আউট করেছেন মুস্তাফিজ। একপ্রান্ত আগলে রেখে টাকার অবশ্য ৫১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন টাকার। নিজের শেষ ওভারে হাফ সেঞ্চুরিয়ান টাকারকে বোল্ড করে ফেরান মুস্তাফিজ।

৪৯তম ওভারে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির ওপর চড়াও হন আইরিশ ব্যাটার মার্ক অ্যাডায়ার। সেই ওভারের চতুর্থ বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে অ্যাডায়ারের ক্যাচ ফেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে অবশ্য অ্যাডায়ারকে বোল্ড করে বাংলাদেশের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন হাসান মাহমুদ। তৃতীয় বলে হাসানের স্লোয়ার ডেলিভারিতে কাট করতে চেয়েছিলেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রেইন। তবে শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়। শেষ বলে ৬ রানের সমীকরণ ছিল। তবে এক রান নিতে পারেন কেবল ইয়ং। ফলে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে নেয় ৪ রানে। সিরিজের প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল ৩ উইকেটে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের ফলে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে নিয়েছে ২-০ ব্যবধানে।

এদিকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলতে গিয়ে দলের প্রত্যাশা মতো পারফর্ম করতে না পারায় ম্যাচের পর ম্যাচ একাদশের বাইরে বসে ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। সেই মুস্তাফিজই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক। নিজের ১০ ওভারের কোটায় ৪৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। এই চার উইকেটের গুরুত্ব বোঝাতে চার আইরিশ ব্যাটারের নাম বলতে হবে। স্টিফেন ডোহানিকে দিয়ে শুরু। এরপর একে একে মুস্তাফিজের শিকার হয়েছেন কার্টিস ক্যাম্ফার, জর্জ ডকরেল ও লরকান টাকার। এর মধ্যে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচ প্রায় বের করে নিয়েছিলে টাকার। এই তিন ব্যাটারকে নিজের শেষ তিন ওভারে ফিরিয়ে বাংলাদেশকেও ম্যাচে ফেরান মুস্তাফিজ।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে আইরিশ পেসারদের সুইং সামলাতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছিলো বাংলাদেশ দলের ওপেনার রনি তালুকদারকে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে অ্যাডায়ারের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে চার মেরে ১৩তম বলে রানের খাতা খোলেন ডানহাতি এই ওপেনার। তবে চার মারার পরের বলেই ফিরে যেতে হয় তাকে। অ্যাডায়ারের অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি তাড়া করতে গিয়ে উইকেটকিপার লরকান টাকারকে ক্যাচ দেন ১৪ বলে ৪ রান করা রনি।

ডানহাতি এই ওপেনার দ্রুত ফিরলেও রানের চাকা সচল রাখেন তামিম ও শান্ত। তাদের দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৬২ রান তোলে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লে শেষ হতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আগের দুই বল লেংথে করলেও তৃতীয় বলে সেটা খানিকটা কমিয়ে আনলেন ক্রেইগ ইয়াং, তাতেই আউট সাইড এজ হলেন শান্ত। স্লিপে দাঁড়িয়ে বালবির্নি নিচু হওয়া ক্যাচ লুফে নিলে ফিরে যেতে হয় তাকে। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা শান্ত এদিন আউট হয়েছেন ৩৫ রানে।

এরপর বাংলাদেশের ইনিংস টেনেছেন তামিম ও লিটন দাস। যদিও বেশিক্ষণ তামিমকে সঙ্গ দিতে পারেননি লিটন। জুটির পঞ্চাশ হওয়ার পরই আউট হয়েছেন তিনি। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের পঞ্চম স্টাম্পের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পেছনের পায়ের উপর ভরে খানিকটা জায়গা নিয়ে মিড অফের উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন লিটন। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক টাইমিং না হওয়ায় অ্যাডায়ারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় ৩৫ রান করা এই ব্যাটারকে।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তামিম। ইনিংসের শুরুর দিকে একবার জীবনও পেয়েছিলেন তিনি/ জীবন পেয়ে সেটা ঠিকঠাক কাজেও লাগিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। জশুয়া লিটলের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে থার্ডম্যান দিয়ে চার মেরে ৬১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন তামিম। সবশেষ হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন ২০২২ সালের ৭ আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। মাঝের ৯ ইনিংসে আর ৯ মাসে পঞ্চাশ পেরোতে পারেননি তিনি।

হাফ সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত ৬৯ রানে ডকরেলের লেংথ ডেলিভারিতে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন তামিম। তবে শটে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শর্ট থার্ডম্যানে থাকা ইয়াংকে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। তামিম ফেরার পর মেহেদি হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে টানছিলেন মুশফিকুর রহিম। এই জুটি বেশ ভালোই এগোচ্ছিল বাংলাদেশকে। আশা দেখাচ্ছিল দলীয় সংগ্রহ ৩০০ পেরুনোরও। মুশফিক ও মিরাজের জুটি ভাঙেন ম্যাকব্রাইন। ডানহাতি এই স্পিনারের বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন মুশফিক। রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি ৪৫ রান করা এই ডানহাতি ব্যাটারের।

বাংলাদেশের ৩০০ পেরুনোর স্বপ্নভঙ্গ হয় শেষ পর্যন্ত মিরাজের আউটে। ডকরেলের লেংথ ডেলিভারিতে থার্ডম্যানের ওপর দিয়ে র‌্যাম্প শট খেলতে চেয়েছিলেন মিরাজ। তবে ব্যাটের কানায় লাগলে ফাইন লেগে থাকা ইয়াংকে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় ৩৭ রান করা মিরাজকে। এরপর মৃত্যুঞ্জয়, মুস্তাফিজ ও হাসান দ্রুত ফিরলে ১৭৪ রানেই থামতে হয় বাংলাদেশকে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS