শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ অপরাহ্ন

পবিত্র লাইলাতুল কদরের ৭ আমল

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩
  • ২৩২ Time View

পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবেকদর পালিত হবে আগামী ১৮ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাতে। প্রতিবছর পবিত্র রমজানের ২৬ তারিখ রাতে শবেকদর পালন করা হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিশেষ ইবাদতের মাধ্যমে রাতটি অতিবাহিত করেন।

মুসলমানদের কাছে এ রাত পুণ্যময় ও মহিমান্বিত। ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাত কদর হতে পারে। তবে ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে আলেমদের অভিমত। শবেকদরের এই রাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়।

শবেকদর অর্থ মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবেকদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত। ইসলাম ধর্ম অনুসারে, এ রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারীদের সম্মান বাড়ানো এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

এ রাতে করণীয় বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে শবেকদরে জেগে নামাজ পড়বে, তার পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারি: ২০১৪)

আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, রমজানে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। তাই মহানবী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ রাত থেকে বঞ্চিত হবে, সে সব প্রকার খায়র ও বরকত থেকে বঞ্চিত হবে। বস্তুত একমাত্র হতভাগা ও দুর্ভাগারাই এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনবে মাজাহ্‌: ১৬৪৪)।

নবীজি (সা.) শবেকদর রাতে নিজে জাগতেন; পরিবারের লোকজনকে সজাগ করতেন; ইবাদতে লিপ্ত হতেন। শবেকদরের ইবাদত মসজিদেও করা যায়, বাড়িতেও করা যায়। বিভিন্ন হাদিস সামনে রেখে আলেমরা শবেকদরে কিছু কাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। চলুন জেনে নেয়া যাক সেগুলো-

পবিত্রতা
ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্রতা অর্জন ছাড়া আল্লাহ তাআলার ইবাদাত-বন্দেগি গ্রহণযোগ্য হয় না। এ জন্য ইসলামি শরিয়তে নামাজসহ বহু ইবাদতের জন্য পবিত্রতাকে শর্ত করেছেন। আত্মিক ও দৈহিক পবিত্রতার ব্যাপারে সুরা বাকারায় বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন। তিনি পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’

ক্ষমা প্রার্থনা
আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল এবং ক্ষমাকে ভালোবাসেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার তিনি বলেন- ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি বলে দিন, লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে, আমি যদি তা জানতে পারি; তাহলে আমি কী করব?’ প্রিয়নবী বললেন, ‘তুমি বলবে- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)

সুধারণা
মহান আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও সুধারণা পোষণের মাধ্যমেই একজন মুমিন তার জীবনের সব ক্ষেত্রে স্থিরতা ও প্রশান্তি অনুভব করতে পারে। তাই শবেকদরের বরকত লাভে আল্লাহর প্রতি প্রত্যেক মুসলমানের সুধারণা পোষণ করা উচিত। তা এভাবে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার প্রার্থনা কবুল করবেন এবং আমাকে মহিমান্বিত রাতের বরকত থেকে বঞ্চিত করবেন না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক আমি তার সঙ্গে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে, আমি তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। যদি সে আমাকে মজলিসে স্মরণ করে, আমি তাকে তার চেয়ে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক বাহু অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’ (বোখারি: ৭৪০৫)।

কোরআন তেলাওয়াত
শবেকদরের মর্যাদার সঙ্গে কোরআন নাজিলের বিষয়টি সম্পর্কিত। তাই আলেমদের মতে, কদরের রাতে কোরআন তেলাওয়াত করা তাৎপর্যপূণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে; আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী জানো? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা কদর: ১-৩)।

দরুদ পাঠ
রাসুল (সা.)-এর  প্রতি দরুদ পড়া অনেক সম্মান ও মর্যাদার ইবাদত। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ না করা হলে সেই দোয়া আসমান ও জমিনের মধ্যে স্থগিত থাকে। সেই দোয়া আল্লাহর দরবারে পৌঁছায় না।’

তাহাজ্জুদ
তাহাজ্জুদের মর্যাদা অপরিসীম। আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম তাহাজ্জুদ নামাজ। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে কদরের রাত অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এ দশকে রাত জেগে ইবাদত করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন রাসুল (সা.) কোমর বেঁধে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন)। রাত জেগে ইবাদত করতেন। পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।’ (বোখারি : ২০২৪)।

ইতেকাফ
ইসলামের পরিভাষায় ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় ইখলাছের সঙ্গে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে। শবেকদরের বরকত লাভে সহায়ক এই ইতেকাফ। কেননা, ইতেকাফকারী জাগতিক সব ব্যস্ততা পেছনে ফেলে মহান আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হতে পারে। আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন।’ (বোখারি : ২০২৬)।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS